আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় (West Bengal Borad Class 11 Political Science Chapter 8 Question Answers in bengali)'সরকারের বিভিন্ন রূপ (Forms Of Government)' এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বিষয় 'সংসদীয় সরকার কাকে বলে এবং সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য' গুলি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
সংসদীয় বা ক্যাবিনেট পরিচালিত সরকার বলে? সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য লেখ
উওরঃ মূলত ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর ভিত্তি করে কোনো একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার এবং সংসদীয় বা ক্যবিনেট পরিচালিত সরকার। যেই প্রকার সরকারে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে সংবিধান অনুসারে কার্য পরিচালনা করে, সেই প্রকার শাসন ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলে।
এবং অন্যদিকে যেই প্রকাশ শাসন ব্যবস্থায় আইন বিভাগ এবং শাসন বিভাগের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে এবং শাসন বিভাগের দায়িত্ব এবং কার্যকারিতা আইন বিভাগের উপর নির্ভরশীল, তখন সেই প্রকার শাসন ব্যবস্থাকে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা বা ক্যাবিনেট পরিচালিত সরকার বলে। এরূপ সরকার বা শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
নামসর্বস্ব শাসকের অবস্থিতিঃ
সংসদীয় বা কেবিনের পরিচালিত সরকার এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এই প্রকার শাসন ব্যবস্থায় আইনগত ভাবে দেশে যাবতীয় কার্য রাষ্ট্রপ্রধান সম্পাদন করলেও, প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপ্রধানের নামে ক্যাবিনেট সমস্ত শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন।তাই একথা বলা হয়ে যে,সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান রাজত্ব করলেও দেশ শাসন করেন না।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতিঃ
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুপস্থিত। এরুপ শাসন ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ করা হয় না। এপ্রকার শাসন ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যায় যার বলে, এক বিভাগ বা বিভাগের কর্মী একাধিক অন্য বিভাগের কিছু কার্য সম্পাদন করে থাকে।
মন্ত্রীসভা গঠণে নিকোনো প্রধান ভূমিকাঃ
সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রীসভা গঠনে আইনসভার নিম্নকক্ষ অর্থাৎ জনপ্রতিনিধি-কক্ষের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই কক্ষে যে-দল বা মোর্চা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দল বা মোর্চার নেতা বা নেত্রীই প্রধানমন্ত্রী বা চ্যান্সেলার হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর পরামর্শক্রমে নিয়মতান্ত্রিক শাসক আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যকে নিয়োগ করেন।
আইন সভার কাছে দায়িত্বশীলতাঃ
এরূপ শাসনব্যবস্থায় সরকারি নীতি ও কার্যাবলির জন্য আইনসভার কাছে মন্ত্রীসভাকে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। যেসব রাষ্ট্রে আইনসভার দুটি কক্ষ থাকে, সেখানে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নিম্নকক্ষের কাছে মন্ত্রীসভা দায়িত্বশীল থাকে। এইভাবে ব্রিটেন ও ভারতে মন্ত্রীসভাকে যথাক্রমে কমন্স সভা এবং লোকসভার কাছে দায়িত্বশীল থাকতে হয়।
মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্বঃ
আইনসভার কাছে মন্ত্রীসভার দায়িত্ব আবার দু-ধরনের হতে পারে, যথা—
[a] ব্যক্তিগত দায়িত্ব এবং [b] যৌথ দায়িত্ব। ব্যক্তিগত দায়িত্ব বলতে বোঝায় প্রতিটি দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নিজ দপ্তরের কার্যাবলির জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। কিন্তু সরকারি নীতি ও কার্যাবলির জন্য মন্ত্রীরা যখন যৌথভাবে বা সামগ্রিকভাবে আইনসভার কাছে দায়িত্বশীল থাকেন, তখন সেই দায়িত্বকে যৌথ দায়িত্ব বলা হয়। যেহেতু মন্ত্রীসভার বিনা সম্মতিতে কোনো একজন মন্ত্রী এককভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারেন না, সেহেতু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ভুলত্রুটির জন্য সমগ্র মন্ত্রীসভাকেই দায়ী থাকতে হয়।
আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কঃ
সংসদীয় শাসনব্যবস্থার অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হল—আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার ফলে এক বিভাগ অন্য বিভাগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতৃবৃন্দই মন্ত্রীসভার সদস্য হন। স্বাভাবিকভাবে মন্ত্রীরা আইন বিভাগের ওপর অতি সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। ফলে মন্ত্রীসভা যেসব কার্য সম্পাদন করে, তার পেছনে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বঃ
অনেকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বকে সংসদীয় সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে মনে করেন। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতা বা নেত্রীকেই প্রধানমন্ত্রীর পদ প্রদান করা হয়। যদিও তত্ত্বগতভাবে তিনি সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য, তথাপি কার্যক্ষেত্রে তিনি অন্যান্য মন্ত্রী অপেক্ষা অনেক বেশি ক্ষমতা ও মর্যাদার অধিকারী। সরকারি নীতি নির্ধারণে এবং কার্য পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর মতামতই প্রাধান্য লাভ করে। বস্তুত, সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশের প্রকৃত শাসক। তাঁর পরামর্শে নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর চারিত্রিক দৃঢ়তা, সুনাম, যোগ্যতা, দক্ষতা প্রভৃতির ওপর সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে।
শক্তিশালী বিরোধী দলের অবস্থিতিঃ
শক্তিশালী ও সুসংগঠিত এক বা একাধিক বিরোধী দলের অবস্থিতি সংসদীয় শাসনব্যবস্থার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চা সরকার গঠন করে এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ দল বা মোর্চা বিরোধী পক্ষের ভূমিকা পালন করে থাকে। সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করে বিরোধী পক্ষ সরকারকে সংযত থাকতে এবং জনকল্যাণকর কার্যে আত্মনিয়োগ করতে বাধ্য করে। এদিক থেকে বিচার ক'রে বিরোধী দলকে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাণ বলা যেতে পারে।
ধনশালীদের স্বার্থে পরিচালিত শাসনব্যবস্থাঃ
সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে মার্কসবাদীরা ভিন্ন মত ব্যক্ত করেন। তাঁরা মনে করেন যে, ধনতন্ত্রের সঙ্গে সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে। রজনী পাম দত্ত (R. Palme Dutt)-এর মতে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বুর্জোয়াশ্রেণি সামন্ততান্ত্রিক ও মধ্যযুগীয় বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণির জন্মগত অধিকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল। তবে এরূপ শাসনব্যবস্থায় প্রত্যক্ষভাবে ধনশালীদের শাসন প্রবর্তিত না-হলেও তা অত্যন্ত সুদৃঢ় ভাবে গঠিত হয়।।
আশাকরি যে, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় (West Bengal Borad Class 11 Political Science Chapter 8 Question Answers in bengali)'সরকারের বিভিন্ন রূপ (Forms Of Government)' থেকে 'সংসদীয় সরকার কাকে বলে এবং সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য' সম্পর্কে যে নোট শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের কাজে লাগবে।
tags : একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023 | সরকারের বিভিন্ন রূপ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |west Bengal board political science question answer 2023 | west Bengal board political science suggestion 2023