ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা এবং একসালা বন্দোবস্ত |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'ওয়ারেন হেস্টিংস এর আমলে প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার বিবরণ বা ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা এবং একসালা বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর নিয়মিত ক্লাস 12 সহ অন্যান্য ক্লাসের নোট এবং মকটেস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকো।
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা এবং একসালা বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা করো || ওয়ারেন হেস্টিংস এর আমলে প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার বিবরণ দাও
ভূমিকাঃ ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অথবা নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলা তথা ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসেবে ভারতে আসেন। ভারতে আসার পর থেকেই ওয়ারেন হেস্টিংস ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ওয়ারেন হেস্টিংস শাসনকালে ভূমি রাজস্ব ক্ষেত্রে তিনি ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে শালা বন্দোবস্ত হয় এবং তারপর ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে একসালা বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন। যেমন-
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা বন্দোবস্তঃ
ওয়ারেন হেস্টিংস নবাব এবং দেওয়ান পদের অবলুপ্তি এবং ভারতের কোশাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করার পর তিনি প্রথমে পাঁচশালা বন্দোবস্ত এবং পরে একসালা বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন। পাঁচশালা বন্দোবস্ত বলতে বোঝায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য 1772 খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি জেলায় জেলায় ঘুরে ইজারাদারদের গ্রামে জমি দেওয়ার বন্দোবস্ত করে। যেই ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার কথায় রাজি হতো তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি দেওয়া হতো এবং 5 বছরে যদি সেই ইজারাদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হত, তাহলে সেই জমিদার তার জমিদারি হারাতো। এই ব্যবস্থাই ইজারাদারি ব্যবস্থা বা পাঁচশালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।।
• এরপর, সুপারভাইজার' নামে কর্মচারীরা ইতিপূর্বে কোম্পানির রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করত। হেস্টিংস সুপারভাইজারদের নতুন নামকরণ করেন 'কালেক্টর'। এই কালেক্টররা প্রতিটি জেলার রাজস্ব আদায়, বিচার ও শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত।
• হেস্টিংস যে ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেছিলেন তা অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে তিনি এই কমিটি বাতিল করে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে একটি 'রাজস্ব বোর্ড' বা 'Board of Revenue' গঠন করেন।
• হেস্টিংস বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে ছ্যাটি অংশে বিভক্ত করে। প্রতিটি অংশে একটি করে 'প্রাদেশিক কাউন্সিল' গঠন (১৭৭৩ খ্রি.) করেন। প্রতিটি কাউন্সিলে একজন করে ভারতীয় দেওয়ান নিয়োগ করেন এবং কালেক্টর পদ তুলে দেন। হেস্টিংস রাজস্ব সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে 'আমিনি কমিশন' গঠন করেন। কালেক্টরপ্রথায় পুনঃপ্রবর্তন।
• আমিনি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে প্রাদেশিক কাউন্সিলগুলির অবসান ঘটিয়ে আবার কালেক্টর পদ চালু করা হয়। কালেক্টরদের হাতে জেলা প্রশাসনের যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটিঃ
হেস্টিংস প্রবর্তিত পাঁচসালা বন্দোবস্তের বেশ কয়েকটি ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা যায়। যেমন—
ইজারাদারদের উৎপীড়নঃ-
বিভিন্ন অসৎ ইজারাদার নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রজাদের ওপর উৎপীড়ন চালাত।
নতুন জমিদারদের উত্থানঃ-
নিলামের মাধ্যমে জমি ইজারা দেওয়ার ফলে আগেকার বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারান। তাদের জায়গায় একশ্রেণির নতুন ভূঁইফোড় জমিদার বা ইজারাদারের উত্থান ঘটে।
অনিশ্চিত আয়ঃ-
এইসব নতুন ইজারাদার বহু ক্ষেত্রেই কোম্পানিকে ঠিকমতো রাজস্ব প্রদান করত না। ফলে কোম্পানির আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
কৃষির উন্নয়নে গতিহীনতাঃ-
জমিতে স্থায়ীভাবে স্বত্ব না পাওয়ায় ইজারাদাররা জমি ও কৃষকের উন্নতির দিকে বিশেষ নজর দিত না। ফলে কৃষির উন্নতি ব্যাহত হতে থাকে।
ওয়ারেন হেস্টিংসের একসালা বন্দোবস্তঃ
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত পাঁচশালা বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটি যেমন-(ইজাড়াদের অত্যাচার, কৃষকদের ক্ষতি, সঠিক রাজস্ব আদায় না হওয়া ইত্যাদি) কারণে ওয়ারেন হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্তের পরিবর্তে নতুন কোনো বন্দোবস্ত প্রবর্তিত কথা ভাবতে থাকেন। এবং এই ভাবনা থেকেই ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে একসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। একসালা বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রতিবছর জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রথা চালু হয়। একসালা বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে ঠিক করা হয় যে-
প্রথমতঃ প্রতি বছর পুরনো জমিদারদের জমির বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়তঃ একসালা বন্দোবস্তে বিগত তিন বছরের রাজস্বের গড় হিসেবে নতুন নির্ধারিত হবে।
তৃতীয়তঃ জমিদার রাজস্ব বাকি রাখলে তার জমিদারির একাংশ বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে।
একসালা বন্দোবস্ত এর বিভিন্ন ত্রুটিঃ-
হেস্টিংসের পাঁচশালা বন্দোবস্তের মত ঠিক একইভাবে একসালা বন্দোবস্তেও বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন-
• একসালা বন্দোবস্তে রাজস্বের হার অত্যন্ত বেশি ছিল। ফলে কৃষকরা খুবই শোষিত হত।
• জমিদারদের মাত্র এক বছরের জন্য জমি বন্দোবস্তু দেওয়ার ফলে তারা সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় করতে পারতেন না।
• জমিদাররা নিজেদের আয়বৃদ্ধিতে খুব বেশি নজর দিলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে অবহেলা দেখাতেন।
উপসংহারঃ- পরিশেষে বলা যায়, ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস বিভিন্ন বন্দোবস্ত প্রবর্তন করলেও তার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাঁচশালা বন্দোবস্ত এবং একসালা বন্দোবস্ত ভারতীয় জমিদার এবং কৃষকদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। সেই সমস্ত বন্দোবস্তুগুলি যেমন কৃষকদের দুর্দশা ডেকে এনেছিল সেইসঙ্গে কৃষির অগ্রগতিতে বাধা এবং পুরনো জমিদারদের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাম্রাজ্যের (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'ওয়ারেন হেস্টিংস এর আমলে প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার বিবরণ বা ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচশালা এবং একসালা বন্দোবস্ত সম্পর্কে আলোচনা' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023