গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছেন?|| গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রে ঔপনিবেশিক সমাজ সম্পর্কে সমালোচনা কিভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা আলোচনা কর।
উঃ-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ঔপনিবেশিক ভারতের বা তৎকালীন ভারতের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কার্টুনিস্ট। বাংলা ঘরনার শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ তার বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সমাজের নানা সমালোচনা ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁতভাবে।তার ব্যঙ্গচিত্রে যেদিকগুলো ফুটে উঠেছে সেগুলি হল-
i)বিদেশি শাসনের সমালোচনা-গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে বিদেশে শাসকদের তীব্র কটাক্ষ করেছেন।পাশ্চাত্য অনুরাগকেও তিনি ব্যঙ্গ করতে ভোলেননি।
ii)বাবু সমাজের সমালোচনা-ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার মাটিতে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা শহুরে বাবু সংস্কৃতিকে তিনি বেশ ব্যঙ্গের চোখে দেখেছেন।তুলে ধরেছেন তাঁর ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে।
iii)সমাজ সম্পর্কে সমালোচনা-তৎকালীন সমাজে ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর অহংবোধ,চালচলন,মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তদের সাথে তাঁদের গা বাঁচিয়ে চলার রীতিকে তিনি দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন নানা ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে। এছাড়া বিয়ে সম্পর্কে বাঙ্গালীদের মনোভাব, সামাজিক নানা কুসংস্কার ,জাতপাত, ছল কপটতাকে তিনি ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়ে "জাতাসুর" "খল ব্রাহ্মণ" চিত্রগুলি বেশ তারিফযোগ্য।
iv)নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টি-সে যুগে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টি ছিল বিরুপ।সমাজে নারীদের দুর্দশা পুরুষদের/স্বামীদের মত্ততা লম্পট্যকেও তিনি নিজের ব্যঙ্গচিত্রের বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন।
v)দেশীয় মনীষীদের চিত্র-তাঁর ব্যঙ্গচিত্রে বিদেশী শাসন,দেশীয় সমাজের সমালোচনা ছাড়াও দেশীয় নানা নেতাও মনীষীদের চিত্রও স্থান পেয়েছে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের বিষয় হয়েছেন। এই বিষয়ে "কবির ওড়া"ব্যঙ্গচিত্রটি বেশ উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিমানে চড়া, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের গবেষণা, জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কার প্রভৃতি নিয়ে তিনি কার্টুন চিত্র এঁকেছেন,যেগুলো ইতিহাসের অমূল্য দলিল।
গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্র গুলি মূলত তিনটি খন্ডে প্রকাশ পেয়েছে-"অদ্ভুত লোক","বিরূপ বজ্র", "নয়া হুল্লোড়"।কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যঙ্গচিত্র হল "পরভূতের কাকলি","বিদ্যার কারখানা", "বাকযন্ত্র", "পুচ্ছপরিবর্তন" ইত্যাদি।