রাওলাট আইন কি? আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো

0

   

রাওলাট আইন কি? আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো
রাওলাট আইন কি? আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতিক্রিয়া

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'রাওলাট আইন কি? আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য ক্লাসের নোটস পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকো।।

রাওলাট আইন কি? আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো

ভূমিকাঃ- 1919 খ্রিস্টাব্দে ভারতের তৎকালীন পরিস্থিতি বিচার করে, ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলন আন্দোলন দমন এবং ভারতবাসীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে 5 জন সদস্যকে নিয়ে রাওলাট কমিশন আ সিডিসম কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে 1919 খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় সদস্যদের সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে 18 ই মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। 1919 খ্রিস্টাব্দের 18 মার্চ পাস হওয়া এই বিলটি রাওলাট আইন নামে পরিচিত।।

রাওলাট আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ-

রাওলাট আইনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে ছিল-
প্রথমতঃ রাওলাট আইনের মাধ্যমে এটা বলা হয় যে, সরকারবিরোধী সমস্ত রকম প্রচারকার্য এবং আন্দোলন বেআইনি। 
দ্বিতীয়তঃ রাওলাট আইনের মাধ্যমে যেকোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবে।
তৃতীয়তঃ সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া সেই ব্যক্তির বাড়িতে অথবা যেকোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির বাড়িতে পুলিশ কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি করতে পারবে এবং সেই তল্লাশির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। 
চতুর্থতঃ সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা সেই ব্যক্তিকে আদালতে বিচারকগণ বিশেষ জুরির সহায়তায় যে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই তার বিচার করতে পারবে। এবং সেই বিচারের বিরুদ্ধে তার পরিবার কোনো উচ্চ আদালতে পুনরায় আপিল বা মামলা করতে পারবেনা।
পঞ্চমতঃ রাওলাট আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনভবে ব্রিটিশ সরকার বিরোধী সংবাদ প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়। 

রাওলাট আইনের প্রতিক্রিয়াঃ- 

রাওলাট আইনের এমন প্রতিক্রিয়াশীল এবং দমনমূলক নীতির জন্যই এই আইন প্রবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সারা ভারতে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। যেমন- 

আইন পরিষদের সদস্য পদ ত্যাগঃ- 

রাওলাট আইন প্রবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশব্যাপী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়।  সরকার আইনসভার সদস্যদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে রাওলাট আইন পাস করে। এজন্য আইন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মদনমোহন মালব্য মাজহার উল হক তাদের পদ ত্যাগ করেন।।

বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিক্রিয়াঃ- 

রাওলাট আইনে সংবাদপত্রের স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তাই বিভিন্ন সংবাদপত্রের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়। এছাড়াও মাধ্যমে ভারতীয়দের দমন করার চেষ্টা হয়। তাই বিভিন্ন সংবাদপত্র গুলির রাওলাট বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে শুরু করে। অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দু, নিউ ইন্ডিয়া বোম্বাই ক্লোনিকাল,কেশরী প্রভৃতি সংবাদপত্রে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। 

জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডঃ- 

অমৃতসর সহ সমগ্র পাঞ্জাবেই রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ চলতে শুরু করে। পাঞ্জাবের জনসাধারণ এই আইনের বিরুদ্ধে প্রচার, ধর্মঘট,আন্দোলন প্রভৃতিতে শামিল হয় ম এই আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার সময়,  জেনারেল ডায়ার এবং মাইকেল আন্দোলন কারীদের উপর হঠাৎ করেই নির্মমভাবে গুলি চালায় এবং সেখানে অসংখ্য জনসাধারণের মৃত্যু হয়, যা জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড নামে পরিচিত।

গান্ধীজীর প্রতিক্রিয়াঃ- 

রাওলাটানের প্রতিবাদে গান্ধীজি এবং কংগ্রেস যথেষ্ট প্রতিবাদ জানিয়েছিল। গান্ধীজি এই আইনের বিরোধিতা করে বলেছিলেন 'উকিল নেহি,দলিল নেহি,আপিল নেহি।"- গান্ধীজি এর প্রতিবাদে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। গান্ধীজী রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে দেশব্যাপী যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা রাওলাট সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। গান্ধীজীর সভাপতিত্বে সত্যাগ্রহ সভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মাধ্যমে বোম্বাই সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এর তীব্র প্রতিবাদ চলতে শুরু করে।  গান্ধীজী এই আইনের বিরোধিতা করে 6 ই এপ্রিল সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। গান্ধীজীর ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশে স্বতস্ফূর্ত ভবে ধর্মঘট পালিত হয়। এটিই ছিল ভারতের প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট।

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়াঃ- 

গান্ধীজীর শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সারাদেশে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। গান্ধীজী তার নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতীয় কংগ্রেসকে প্রভাবিত করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সামিল করেন। শহরে-গ্রামে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত,ধনী-দরিদ্র সর্বস্তরের মানুষকে গান্ধীজী জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে এই আন্দোলনে যুক্ত করেন। এক্ষেত্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান মাথা জাফর আলী খান, কবি মোহাম্মদ ইকবাল, যুবনেতা আনসারী প্রমুখও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং রাওলাট আন্দোলনের প্রসার ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও সরকার রাওলাট আইন প্রত্যাহার করেনি।। ব্রিটিশ সরকার পুলিশি নির্যাতন, চরম দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে, ধীরে ধীরে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল,তা থামিয়ে দেয়।।

আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023) থেকে 'রাওলাট আইন কি? আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | wb class 12 History question answer  | hs History question answer 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top