অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা চিত্র টি বিখ্যাত কেন?
অথবা
ভারতমাতা চিত্রটি কেন গুরুত্বপূর্ণ বা তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করো ।
অথবা
ভারত মাতার চিত্র কিভাবে পরাধীন ভারতে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল
উঃ- ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের সময় যে সমস্ত সাহিত্যিকরা বিভিন্নভাবে জাতীয়তাবাদের বিকাশে এগিয়ে এসেছিলেন,তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন একজন অন্যতম ব্যক্তি যিনি তার চিত্রের মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। ভারতে নববঙ্গীয় চিত্রকলার জনক নামে পরিচিত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশী আন্দোলনের সময় যে ভারতমাতা চিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন,তা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ । যেমন-
প্রথমতঃ- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা চিত্র অঙ্কনের পূর্বে পরাধীন ভারতের কোনো মাতৃরূপ ছিল না। কিন্তু তিনি প্রথম পরাধীন ভারতের একটি মাতৃরূপ অংকন করেন। স্বদেশীয়ানা-এই চিত্রের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে মাতৃত্বের ধারণার সাথে যুক্ত করা হয়। কারণ-গৈরিক বসন পরিহিতা, চার হাত যুক্ত ভারতমাতা ছিল মানবী ও দৈবী শক্তির বহিঃপ্রকাশ।
দ্বিতীয়তঃ জাতীয়তাবাদী চেতনা- এই চিত্রটিতে ভারতমাতার চার হাতে রয়েছে চারটি উপাদান। যথা-দুটি ডান হাতে ছিল যথাক্রমে শ্বেতবস্ত্র রুদ্রাক্ষমালা এবং বামহাত দুটিতে রয়েছে যথাক্রমে বেদ ও ধানের শিষ। যার মাধ্যমে ভারতীয়দের অন্ন,বস্ত্র,শিক্ষা,দীক্ষা ইত্যাদিকে নির্দেশ করা হয়েছে। যেগুলি ভারতীয় মনে জাতীয়তাবাদ সঞ্চারে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
তৃতীয়তঃ ভারতমাতা এরূপ একটি স্পষ্ট মাঝে রূপ দান করায়, পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী সেই সমস্ত বিপ্লবীরা ভারতমাতার সেই চিত্রকে সামনে রেখেই স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শান্তির প্রতীক-পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলন পরিচালনার সময় অস্ত্রহীন ভারতমাতার ছবিকে আন্দোলনকারীরা হাতে ধরে রেখে আন্দোলনের অভিমুখ সূচিত করে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশি আন্দোলনের সময় এই ছবিটি আঁকেন এবং নাম দেন "বঙ্গমাতা"।পরে ছবিটির গুনগ্রাহী ভগিনী নিবেদিতা এর নাম রাখেন ভারতমাতা ।