নতুন বিশ্বে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো। || WB Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023

0

 

নতুন বিশ্বে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো। || West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'এশিয়া এবং আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক জাতি-প্রশ্নের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে জাতিগত ব্যবধানের নঞর্থক এবং সদর্থক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

এশিয়া এবং আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক জাতি-প্রশ্নের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে জাতিগত ব্যবধানের নঞর্থক এবং সদর্থক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকাঃ উনিশ শতকের বহুকাল আগে থেকেই ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের সুবিধার্থে এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। এই উপনিবেশ গড়ে তোলার ফলে ইউরোপের শাসক জাতি এবং বিভিন্ন মহাদেশের উপনিবেশে বসবাসকারী জনগণ অর্থাৎ শাষিত জাতির মধ্যে তীব্র বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছিল। শাসক জাতি এবং শাষিত জাতির মধ্যেকার এই তীব্র বৈষম্যের দুই ধরনের ফলাফল দেখা যায়। যথা নঞর্থক এবং সদর্থক ফলাফল। 

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে জাতিগত ব্যবধানের নঞর্থক প্রভাব গুলিঃ- 

ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলির এশিয়া,আফ্রিকা, আমেরিকা প্রভৃতি মহাদেশের উপনিবেশগুলোতে কিছু নঞর্থক প্রভাব দেখা হয়েছিল। যেমন- 

অমানবিকতাঃ- 

ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ শাসক জাতির তারা এশিয়া,আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ শাসিত জাতিরা দীর্ঘকাল ধরেই শোষিত হয়েছে। ইউরোপের শাসক জাতির সবসময়ই এশিয়া এবং আফ্রিকায় বসবাসকারী তাদের উপনিবেশিক জনগণকে তাদের থেকে হীন বা নিচু বলে মনে করতো। এজন্য তারা সব সময়ই বিদ্বেষ, অবহেলা এবং অমানবিকতার শিকার হতো। এবং এর ফলে কৃষ্ণাঙ্গরা মূলত নিজের দেশেই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসেবে স্বীকৃত হতো। উদাহরণ হিসেবে ভারতীয়দের কথা বলা যায়। ভারতে ব্রিটিশ শাসন ছিল, তখন ব্রিটিশদের দ্বারা ভারতীয়রা বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত বা শোষিত হতো। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ক্লাবে নোটিশ ঝুলিয়র দেওয়া হতো যে,কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।।

তীব্র আর্থিক সমস্যা এবং খাদ্যাভাবঃ-

উপনিবেশগুলিতে শাসক জাতি এবং শাষিত জাতির মধ্যে যে তীব্র ব্যবধান হতো, সেই তীব্র ব্যবধানের জন্য উপনিবেশের অনগ্রসর মানুষদের বিভিন্ন ভাবে অত্যাচারিত এবং শোষিত হতে হতো। শাসক জাতি অধিক মুনাফা লাভের জন্য উপনিবেশের পরাধীন জাতি গুলোর উপর বিভিন্ন রকমের করের বোঝা চাপিয়ে দিত এবং সেই কর আদায়ের ফলে তাদের প্রচুর মুনাফা হতো। কিন্তু উপনিবেশের সেই শাসিত জাতির, শাষক জাতির কর শোধ করতে চরম দূর্দশার সম্মুখীন হতে হতো। কারণ তাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ করে ইউরোপীয় প্রভুদের শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল উৎপাদন করতে বাধ্য করা হতো। এর ফলে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থা এবং কুটিরশিল্প বিদেশী জাতীর শাসনের ফলে ধ্বংস হতো। এবং উপনিবেশের সাধারণ জনগণ চরম আর্থিক সমস্যা,খাদ্য অভাবের ফলে চরম দুর্দশা সম্মুখীন হতো। 

জাতিগত বৈষম্যের সৃষ্টিঃ- 

উপনিবেশ গুলিতে সবসময়ই শাষক জাতি এবং শাসিত জাতির মধ্যে তীব্র বৈষম্য দেখা যেত। শাসক জাতি সর্বদাই শাসিত জাতির মানুষদের নিজেদের থেকে অযোগ্য,নিকৃষ্ট এবং নীচ বলে মনে করতো। এই কারণে উপনিবেশের মানুষ যেকোনো ধরনের সরকারি পদ, সরকারি অফিস,  সামরিক অফিসার, আদালত ইত্যাদি পদে মূলত শাসক জাতির লোকদের জন্য পদ সংরক্ষণ করে রাখা হতো। এছাড়াও বিচারের ক্ষেত্রে শাষক জাতির দ্বারা শাসিত জাতি যদি কোনভাবে অত্যাচারিত হতো, বা কৃষ্ণাঙ্গদের উপর কোনো অন্যায় করা হতো, তাহলে কৃষ্ণাঙ্গরা কখনোই তার সঠিক বিচার পেত না।

শ্রমিক তৈরীর কারখানাঃ- 

পশ্চিমের শ্বেতাঙ্গ দেশগুলি প্রথমে আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তোলার পর আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের বন্দি করে এনে আমেরিকায় নিজেদের কৃষি এবং অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু পরবর্তীকালে আফ্রিকায় উপনিবেশের প্রসার ঘটলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের চুক্তির ভিত্তিতে আফ্রিকায় রপ্তানি করা হতো। এসব শ্রমিক কৃষি,অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য, তেল উত্তোলন,অট্টালিকা নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ,রেলপথ নির্মাণ, বিভিন্ন খামারবাড়ির কাজ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত থাকতো। এবং এভাবে মূলত বিভিন্ন উপনিবেশ গুলি ইউরোপীয় দেশগুলোর শ্রমিক তৈরীর কারখানায় পরিণত হয়েছিলো।

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে জাতিগত ব্যবধানের সদর্থক প্রভাব গুলিঃ-

ইউরোপীয় শক্তি গুলির এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে শুধুমাত্র নঞ্চর্থক প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল তা নয়,সেই সঙ্গে কিছু সদর্থক প্রভাবও লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন -

জ্ঞানের প্রসারঃ- 

ইউরোপের দেশগুলো নিশ্চিত ভাবে এশিয়া এবং আফ্রিকার উপনিবেশ গুলির থেকে জ্ঞান এবং শিক্ষায় যথেষ্ট অগ্রণী ছিল। প্রথমদিকে শাসক জাতি সেই সমস্ত উপনিবেশে নিজেদের শিক্ষা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ের প্রসার ঘটাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করলেও, ধীরে ধীরে তারা নিজেদের উপনিবেশে নিজেদের সুবিধার জন্যেই জ্ঞানের প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করে।। এবং মূলত ইউরোপের সেই সমস্ত শাসক জাতির জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল।। আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে উপনিবেশগুলোতে আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির ঘটে। যার ফলে মানুষের মধ্যে কুসংস্কারের বদলে সমাজ সংস্কার মুলক আন্দোলন শুরু হয়।।

বিভিন্ন স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাঃ- 

ইউরোপের শাসক জাতি নিজেদের উপনিবেশে প্রথমদিকে শিক্ষা, প্রযুক্তি বিদ্যা এবং কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কোনো উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দিক চিন্তা করে নিজেদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্কুল, কলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল। ভারতে যখন ব্রিটিশদের শাসন ছিল, তখন ব্রিটিশ সরকার নিজেদের সুবিধার্থে ভারতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ভারতে শিক্ষার প্রসার ঘটায়। এবং ভারতীয়দের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটার ফলেই ভারতীয়রা ধীরে ধীরে উন্নত হতে শুরু করে।।

নবজাগরণের প্রসারঃ-

ইউরোপের সভ্য জাতিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে আধুনিক গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রচারের ফলে উপনিবেশগুলিতে এক ধরনের নবজাগরণের সূচনা হয় বলে লেনার্ড উলফ মনে করেন। এই ধরনের নবজাগরণকে কেউ কেউ ঔপনিবেশিক আধুনিকীকরণ” (colonial modernisation) বলে অভিহিত করেছেন। উপনিবেশগুলিতে ঘটে যাওয়া এই নবজাগরণ থেকেই জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপনিবেশের মানুষ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলে। এর অনিবার্য পরিণতি ছিল ঔপনিবেশিকতার অবসান।

নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানের অগ্রগতিঃ- 

ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক জাতিগুলি দূরবর্তী নতুন উপনিবেশে নতুন নতুন জাতির সংস্পর্শে এলে এই জাতিগুলি সম্পর্কে ইউরোপীয়দের কৌতূহল ও আগ্রহ বাড়ে। ইউরোপীয়রা এই উপনিবেশগুলির মানবজাতি ও সমাজ সম্পর্কে গবেষণা বা বিশ্লেষণ শুরু করে। ফলে নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানের (Anthropology) গবেষণা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং জীববিদ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী মানবজাতিগুলি সম্পর্কে ইউরোপীয়দের পঠনপাঠন ও চর্চা শুরু হলে জাতিতত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন নতুন মতবাদ প্রকাশিত হতে থাকে।

গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রসারঃ-

ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে প্রাচ্যের জাতিগুলি স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনাধীনে বসবাস করত। এই শাসনে নাগরিকরা স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হত। ব্রিটিশ চিন্তাবিদ লেনার্ড উলফ মনে করেন যে, ইউরোপীয় সভ্যতাগুলি উপনিবেশে অত্যাচার ও শোষণ চালিয়েছিল ঠিকই, তবে নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইউরোপের সভ্য জাতিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার কালো মানুষদের সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, মানবিকতা, গণতন্ত্র প্রভৃতি সুমহান আদর্শে দীক্ষিত করেছিল।

উপসংহারঃ- 

পরিশেষে সব দিক বিচার করে বলা যায়, উপনিবেশ গুলিতে ইউরোপীয় শক্তি গুলির শাসন এবং শোষণের  ক্ষেত্রে ভালো দিকের তুলনায় খারাপ দিকের পরিমাণই ছিল বেশি। এশিয়া এবং আফ্রিকার উপনিবেশ গুলি থেকে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি দীর্ঘকাল ধরে তাদের শোষণ এবং তার চালানের মাধ্যমে এবং উপনিবেশ গুলির সম্পদ লুন্ঠনের মাধ্যমে তারা নিজেরা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। অন্য দিকে উপনিবেশ গুলি ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রের শোষনে ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যেতে থাকে। এবং এইদিকটা ঔপনিবেশিক শাসনের বাসিন্দারা কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। বিংশ শতাব্দীতে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে তখন তাদের শিক্ষার আলোর মাধ্যমে তাদের মধ্যে তীব্র জাতীয়তাবাদের সঞ্চার হয়। এবং সেই জাতীয়তাবোধ থেকেই তারা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে এবং এভাবেই ইউরোপের বিভিন্ন উপনিবেশ গুলি ধীরে ধীরে স্বাধীনতা পেতে শুরু করে।।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে 'এশিয়া এবং আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক জাতি-প্রশ্নের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে জাতিগত ব্যবধানের নঞর্থক এবং সদর্থক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

Class 12 history notes | hs history suggestion | wb class 12 history question answer and suggestion 2023 | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | wb class xii History question answer | hs History  question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top