একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা (WBBSE Class 11 Political Science Question Answer Chapter 3 In Bengali ) থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'আন্তর্জাতিকতা বলতে কী বোঝায়? আন্তর্জাতিকতার কয়টি গুরুত্ব লেখ। ' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে কী বোঝায়? আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দাও।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কাকে বলে?
উওরঃ যখন কোনো আত্মসচেতন জাতীয় জনসমাজ নিজের পৃথক সত্তা ও জাতীয় বৈশিষ্ট্য রক্ষার জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দাবি জানায়,তখন তাকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে অভিহিত করা হয়। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের মূল স্লোগানটি হলো "এক জাতি এক রাষ্ট্র"।
আসলে যেসব জাতি তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তারা তাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্যই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবী করে এবং এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ধর্ম,ভাষা,সংস্কৃতি, রাজনীতি অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতির চেষ্টা করে।।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দাওঃ
যে সমস্ত জাতি তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তাদের ক্ষেত্রে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বপক্ষে যেসমস্ত যুক্তি দেওয়া হয়, তা হলো -
গণতন্ত্র সম্মতঃ
একটি রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে শুধুমাত্র একটি জাতি বসবাস করলে সেই জাতি নিজেদের নির্বাচিত সরকার গঠনের সুযোগ পায়। এর ফলে তাদের নির্বাচিত সরকার সেই জাতির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ এর প্রচেষ্টা করে এবং এভাবে সঠিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু একটি রাষ্ট্রে বহুজাতি বসবাস করলে সংখ্যালঘু জাতিগুলি কখনোই সরকার গঠনের সুযোগ পায় না।। ফলে গণতান্ত্রিক অধিকার সমূহ স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয় এবং এভাবে সেই জাতির উন্নতি সাধিত হয় না।।
জাতীয় গুণাবলির বিকাশঃ
একটি রাষ্ট্রে যদি শুধুমাত্র একটি জাতি বসবাস করে তাহলে সেই জাতি নিজেদের সরকার গঠনের সুযোগ পায়। এর ফলে সেই সরকার সেই জাতির হয়ে তাদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ এর জন্য কাজ করে থাকে। এর ফলে সেই জাতির জাতীয় গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের বহু জাতি বসবাস করলে, স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘু জাতিগুলির গুণাবলীর বিকাশ ঘটে না কারণ তারা নিজেদের ইচ্ছামত সরকার গঠনের সুযোগ পায় না।।
দেশপ্রেম জাগরণঃ
জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার যদি স্বীকার করে নেওয়া হয় তাহলে একটি রাষ্ট্রের কেবল একটি জাতি থাকবে এবং এর ফলে সেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অভ্যন্তরীণ বিবাদের সম্ভাবনা কম থাকবে। এর ফলে ওই জাতি নিজের রাষ্ট্র বা দেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে এবং এভাবে সবাই নিজের রাষ্ট্র বা দেশকে ভালবাসতে পারবে। কিন্তু বহু জাতি সমন্বিত রাষ্ট্রে জাতিগুলির নিজের মধ্যে পারস্পারিক বিবাদ থাকায় কোনো জাতির মানুষ ই দেশকে নিজের বলে ভাবতে পারে না ফলে রাষ্ট্র ও দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।।
ব্যক্তিস্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সমন্বয়ঃ
যখন একটি সরকার একটি মাত্র জাতির দ্বারা নির্বাচিত হয়, তখন সেই সরকার বিপুলভাবে জনসমর্থন লাভ করে। সরকার কর্তৃক প্রণীত আইনগুলির প্রতি জনসাধারণ তাদের স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য প্রদর্শন করে থাকে। কারণ, সেই আইনগুলি তাদের স্বাধীনতা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীস্বরূপ। এইভাবে একজাতি-সমন্বিত রাষ্ট্রে সহজেই ব্যক্তিস্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সমন্বয়সাধন করা সম্ভব হয়।
যুদ্ধের সম্ভাবনা কমঃ
প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করে নিলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, বৈরীভাব প্রভৃতি বিদূরিত হবে। ফলে সমগ্র বিশ্ব যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাবে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন মনে করতেন যে, প্রতিটি জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করলে যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণকে সমূলে উৎপাটিত করা সম্ভব হবে।
সভ্যতা বিকাশের সহায়কঃ
প্রতিটি জাতির যদি নিজস্ব সরকার এবং নিজস্ব রাষ্ট্রে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে সেই জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক থেকেও উন্নতি লাভ করবে। বিশ্বব্যাপী সভ্যতা-সংস্কৃতি কৃষি প্রভৃতির ক্ষেত্রে সেই জাতির উন্নতি লাভ করতে পারবে।
কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বপক্ষে এতো যুক্ত থাকলেও, বর্তমানে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্ভব নয়। কারণ প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার যদি স্বীকার করে নেওয়া হয় তাহলে রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং এর ফলে প্রত্যেক রাষ্ট্রই অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়বে। তা ছাড়াও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব নয় এবং অকাম্য। জাতির এই অধিকার সবসময়ই রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করবেই।
Tags :