![]() |
একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা (WBBSE Class 11 Political Science Question Answer Chapter 3 In Bengali ) থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'আন্তর্জাতিকতা বলতে কী বোঝায়? আন্তর্জাতিকতার কয়টি গুরুত্ব লেখ। ' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
আন্তর্জাতিকতা বলতে কী বোঝায়? আন্তর্জাতিকতার কয়টি গুরুত্ব লেখ।
আন্তর্জাতিকতাঃ আন্তর্জাতিকতা হলো একটি মানসিক অনুভূতি। আন্তর্জাতিকতা বলতে এমন এক মানসিক অনুভূতিকে বোঝায় যা, একজন ব্যক্তিকে অথবা একটি রাষ্ট্রের নাগরিক বা শুধুমাত্র তার নিজের রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে ভাবতে শেখায় না, বরং সেই ব্যক্তিকে এই বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবে ভাবতে শেখায়। এবং সেই মানসিকতাকেই আন্তর্জাতিকতা বলে।।
আন্তর্জাতিকতাবাদ কয়েকটি গুরুত্বঃ
বর্তমানে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র ই আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রত্যেকটি রাষ্ট্র ই কোনো না কোনোভাবে অপর একটি রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। তাই আজ আন্তর্জাতিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বতর্মানে যেহুতু আন্তর্জাতিকতা রয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিকতার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্ব লক্ষ্য করতে পারি। যেমন -
রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে পারস্পরিক
সহযোগিতার সম্পর্কঃ
আজকের দিনে কোনো রাষ্ট্রে সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাষ্ট্রই কোনো না কোনভাবে বাণিজ্য পণ্যের আদান-প্রদান, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মূলধন, কারিগরি দক্ষতা, শিল্প, সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রভৃতির জন্য একটি রাষ্ট্র অপর একটি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। একটি রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া অপর একটি রাষ্ট্র কখনোই সম্পূর্ণ হতে পারে না বা তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ করতে পারেনা। এজন্য রাষ্ট্রসমূহের একে অপরের সাহায্য প্রয়োজন এবং তা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকতার মাধ্যমেই সম্ভব।।
মানব সভ্যতাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতাঃ
আন্তর্জাতিকতা শুধুমাত্র রাষ্ট্রসমূহের বিকাশ ঘটায় না বরং আন্তর্জাতিকতা সেইসঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে। কারণ আন্তর্জাতিকতার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর একটি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সে বন্ধুত্বের সম্পর্কের কারণেই বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়না। বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে এমন কিছু অস্ত্র রয়েছে যা একবার প্রয়োগ হলে মানব সভ্যতার ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতি হতে বাধ্য। সেই সমস্ত ক্ষতি থেকে মানব সভ্যতাকে এবং এ বিশ্বজগৎকে রক্ষা করতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আন্তর্জাতিকতার সম্পর্ক একান্ত প্রয়োজন।।
বিভিন্ন রাষ্ট্রের উন্নতি সাধনঃ
আন্তর্জাতিকতার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে যাবে এবং সেইসঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্র একে অপরের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ এর জন্য একে অপরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে। এরূপ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সহায়তায় একটি রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটবে এবং এভাবেই বিভিন্ন রাষ্ট্রের উন্নতি সাধিত হবে।
সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের পথরোধঃ
প্রতিটি রাষ্ট্রই তার জাতীয় সার্বভৌমিকতা রক্ষা করতে চায়। আন্তর্জাতিকতা জাতীয় রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমিকতাকে ধ্বংস না করেও এমন একটি যৌথ বিশ্বপরিবার গঠনের পক্ষপাতী, যেখানে ক্ষুদ্রবৃহৎ প্রতিটি জাতিই সমান এবং সমমর্যাদার অধিকারী। আন্তর্জাতিকতা কেবল জাতিসমূহের সার্বভৌমিকতা ও সমমর্যাদাই রক্ষা করে না, সেই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়। তাই আজকের দুনিয়ায় আন্তর্জাতিকতার গুরুত্বকে কোনোভাবেই ছোটো করা যায় না।
জাতি-বৈরিতার অবসানঃ
প্রলেতারীয় আন্তর্জাতিকতা বিশ্বের প্রলেতারীয়শ্রেণিকে সর্বপ্রকার শ্রেণিশোষণ ও শ্রেণিশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করার অনুপ্রেরণা জোগায়। এই সংগ্রামের মাধ্যমে যখন বিভিন্ন দেশের প্রলেতারীয়শ্রেণি সমগ্র সমাজের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, তখন তারা নিজেদের ‘জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। ফলে বুর্জোয়া জাতি-বৈরিতার অবসান ঘটবে এবং যথার্থ বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠবে।
উপসংহারঃ
বর্তমানে আন্তর্জাতিকতা এত গুরুত্বপূর্ণ একটি হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলি আছে নিজেদের স্বার্থে যতটুকু আন্তর্জাতিকতা মানা প্রয়োজন তারা এই নীতিতেই মানতে রাজি নয়।। আন্তর্জাতিকতা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা অধ্যাপক ল্যাস্কিত একটি বাক্যের মাধ্যমেই জানতে পারি। সেটি হল - আন্তর্জাতিক ভাবে বাঁচতে না পারলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।।
Tags :