একনায়কতন্ত্র কাকে বলে? একনায়কতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023

0

 

একনায়কতন্ত্র কাকে বলে? একনায়কতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর 2023
একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড় প্রশ্ন উত্তর 2023

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র থেকে ( wb class 11 political science ) এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা প্রশ্ন 'একনায়কতন্ত্র কাকে বলে? একনায়কতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নগুলির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

একনায়কতন্ত্র কাকে বলে? একনায়কতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো

উওরঃ- যখন কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থা সেই দেশের জনগণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত না হয়ে কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি বা যখন কোনো সামরিক দলের দ্বারা  সেই দেশের যাবতীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন তাকে বলে একনায়কতন্ত্র।।দেশের বা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা কার মাধ্যমে বা কাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই ভিত্তিতে একনায়কতন্ত্রকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা দলগত একনায়কতন্ত্র,সামরিক একনায়কতন্ত্র এবং ব্যক্তিগত একনায়কতন্ত্র।।

একনায়কতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ- 

কোন একটি দেশের শাসন ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সে দেশে হয় গণতন্ত্র না হয় একনায়কতন্ত্র থাকে। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখা যায় ঠিক তেমনি একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রে কিছু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়।  সেগুলো হলো- 

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণঃ-

একনায়কতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এই এই প্রকার শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ করা হয়। একনায়কতন্ত্রের তিনটি প্রকারভেদ অর্থাৎ দলগত একনায়কতন্ত্র, ব্যক্তিগত একনায়কতন্ত্র এবং সামরিক একনায়কতন্ত্র - এই তিন প্রকার একনায়কতন্ত্রের মধ্যেই দেশের শাসন ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ করা হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র একটিমাত্র দল,ব্যক্তি বা কতৃপক্ষেত হাতে সমস্ত শাসন ক্ষমতা থাকে।।

সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেইঃ-

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেশের জনগণের প্রত্যক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে নিজেদের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ থাকে। এবং কোন সরকার যদি ক্ষমতায় আসার পর জনগণের স্বার্থে কাজকর্ম বন্ধ করে স্বার্থপর হয়ে ওঠে, তাহলে সে দেশের জনগণ নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে সেই সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।। একনায়কতন্ত্রের কোনো দেশের জনগণের শাসন ব্যবস্থায় পরোক্ষ অংশগ্রহণ করে ভোট দানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকে না।।

ক্ষমতা লাভঃ- 

যখন কোনো একটি দেশের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা দেখা যে, যেই দল বা সামরিক বাহিনী অথবা ব্যক্তি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বলপ্রয়োগ বা ক্ষমতার প্রয়োগ করে অথবা জোর করে সেই ক্ষমতা লাভ করছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের সমর্থন থাকে না। কারণ একনায়কতন্ত্রে অনেক ক্ষেত্রেই জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ক্ষমতার বা বল প্রয়োগ করতে হয়।।

জরুরী অবস্থার উপযোগীঃ-

একনায়কতন্ত্র সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে জরুরী কালীন অবস্থায় বিশেষ উপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়। গণতন্ত্রে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত থাকে বলর শাসনব্যবস্থা প্রকৃতিগতভাবে মন্থরগতিসম্পন্ন। যুদ্ধ, আভ্যন্তরীণ গোলযোগ প্রভৃতি সংকটময় অবস্থায় যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের ক্ষমতা বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকায় এটি একটি অত্যন্ত ধীর গতিসম্পন্ন এবং জটিল প্রক্রিয়া পরিণত হয়। তাই জরুরী অবস্থায় গণতন্ত্র কার্যতঃ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে সকল ক্ষমতা শাসকপ্রধানের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। ফলে চূড়ান্ত কর্তৃত্বসম্পন্ন নায়ক এককভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন এবং তৎপরতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থার মোকাবিলা করতে পারেন।

একনায়কতন্ত্রে সরকারের বা দলের স্থায়িত্বঃ- 

একনায়কতন্ত্রে গণতন্ত্র তুলনায় কোনো সরকার বা শাসকের স্থায়িত্বকাল অনেক বেশি হয়। কারণ গণতন্ত্রে দেখা যায়,একটি দেশের অভ্যন্তরে একাধিক রাজনৈতিক দল ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করে থাকে। এবং বিভিন্ন দলের বিভিন্ন কার্যকলাপের প্রভাবিত জনগণ বারবার রাজনৈতিক দল পরিবর্তন জনমত গঠন ইত্যাদি কাজ কর্মে লিপ্ত হয়।। এর ফলে সরকারে থাকা থাকা রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতা হারাতে পারে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে এরূপ ক্ষমতা হারানোর ভয় কম থাকে অর্থাৎ সরকারের স্থায়িত্ব বেশি হয়। এনায়কতন্ত্রে নায়কের নিজ দল ছাড়া অপর কোনো দল থাকে না বা অন্য দল গঠনের সুযোগও থাকে না। ফলে নায়কতন্ত্রে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব বজায় থাকে। সেজন্য সরকারও জনকল্যাণ সাধনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রচনা ও তা বাস্তবায়িত করতে পারে।

যোগ্যতার কদরঃ-

গণতন্ত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অযোগ্য ব্যক্তিরা নিজের অর্থ এবং প্রভাব খাটিয়ে সরকারের ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রের কোনো অযোগ্য ব্যক্তিদের কোন স্থান নেই। একনায়কতন্ত্রে সবসময়ই কোনো একজন যোগ্য এবং দেশের শাসন ক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে, এরূপ ব্যক্তি ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং সেই ব্যক্তি নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতেই ক্ষমতা লাভ করে থাকে। যোগ্যতা ছাড়া কখনোই সেই ব্যক্তি একনায়কতন্ত্রের প্রধান শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না।।

মিথ্যা প্রচারঃ-

মিথ্যা প্রচার একনায়কতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিজের অত্যাচারী শাসনকে সুন্দর ও জনকল্যাণকর বলে প্রচার ক'রে একনায়ক জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। অনেক সময় বিরোধী দল বা নেতার ভাবমূর্তি নষ্ট ক'রে গণসমর্থন লাভের জন্য মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় নেওয়া হয়। রাইখস্ট্যাগে (জার্মানির আইনসভা) অগ্নিসংযোগ করার পর কমিউনিস্টদের ওপর মিথ্যা দোষারোপ ক'রে হিটলার কমিউনিস্ট নিধনে আত্মনিয়োগ করলেও মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত জার্মানরা তার কোনো প্রতিবাদ করেনি।

যুদ্ধবাজ নীতি অনুসরণঃ-

একনায়কতন্ত্র যুদ্ধবাজ নীতির সমর্থক। একনায়কতন্ত্রের তাত্ত্বিক নিসে প্রচার করেছিলেন যে, শান্তির পথ দুর্বলের পথ। পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার কেবল শক্তিমানেরই আছে। মুসোলিনি বলতেন, “আন্তর্জাতিক শান্তি কাপুরুষের স্বপ্ন।” “সাম্রাজ্যবাদ হল জীবনের শাশ্বত এবং অপরিবর্তনীয় নিয়ম।” “স্ত্রীলোকের কাছে মাতৃত্ব যেমন কাম্য, পুরুষদের কাছে যুদ্ধও তেমনি কাম্য।”।

উপসংহারঃ- দেখা যায় কোন দেশের দেশে যদি কখনো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে সে দেশে শাসন ক্ষমতায় উপরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আরও একাধিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যাবে। এবং এটা বলা যায় যে,গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের বিরোধী একটি শাসনব্যবস্থা হলো একনায়কতন্ত্র।এবং এই শাসন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রগতিবিরোধী বলে একনায়কতন্ত্র মানব সভ্যতার চরম শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়।।


আশাকরি যে, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র থেকে ( wb class 11 political science ) থেকে যে 'একনায়কতন্ত্র কাকে বলে? একনায়কতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো'  সম্পর্কে যে নোট শেয়ার করা হয়েছে, তা তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ে দেখো।

Tags : 

একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 11 গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র বড় প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র বড় প্রশ্ন উত্তর | 11 রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023 | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 11 political science question answer  | wb class 11 political science question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top