একনায়কতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা বা দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দআলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

0

 

একনায়কতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা বা দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দআলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর এবং সাজেশন 2023

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র থেকে ( wb class 11 political science ) এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা প্রশ্ন 'একনায়কতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা বা একনায়কতন্ত্রের দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো' ইত্যাদি প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

একনায়কতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা বা দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দআলোচনা করো

উওরঃ- যখন কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থা সেই দেশের জনগণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত না হয়ে কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তি বা যখন কোনো সামরিক দলের দ্বারা  সেই দেশের যাবতীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন তাকে বলে একনায়কতন্ত্র।। কোন একটি দেশের শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে হয় গণতন্ত্র নয় একনায়কতন্ত্র যুক্ত থাকবে। এবং এই দুই প্রকার শাসন ব্যবস্থার মধ্যে কিছু ভালো দিক  এবং কিছু খারাপ দিক দেখা যায়।  গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যেমন বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, ঠিক তেমনি দেশের শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত একনায়কতন্ত্রেরও বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধার বা দোষ-গুণ রয়েছে। যেমন-

একনায়কতন্ত্রের সুবিধা বা গুনঃ- 

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মত একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সুবিধা,গুণ বা ভালো দিক রয়েছে। যেমন -

জরুরী অবস্থার উপযোগীঃ-

একনায়কতন্ত্র সবচাইতে বড় সুবিধা হল,এটি যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে জরুরী কালীন অবস্থায় বিশেষ উপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়। গণতন্ত্রে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত থাকে বলর শাসনব্যবস্থা প্রকৃতিগতভাবে মন্থরগতিসম্পন্ন। যুদ্ধ, আভ্যন্তরীণ গোলযোগ প্রভৃতি সংকটময় অবস্থায় যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের ক্ষমতা বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকায় এটি একটি অত্যন্ত ধীর গতিসম্পন্ন এবং জটিল প্রক্রিয়া পরিণত হয়। তাই জরুরী অবস্থায় গণতন্ত্র কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে সকল ক্ষমতা শাসকপ্রধানের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। ফলে চূড়ান্ত কর্তৃত্বসম্পন্ন নায়ক এককভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন এবং তৎপরতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থার মোকাবিলা করতে পারে।।

শিল্প-সাহিত্যের উন্নতিঃ-  

একনায়কতন্ত্রের একাধিক রাজনৈতিক দল বা একাধিক সরকারের কোনো অস্তিত্ব থাকে ফলে একাধিক সরকার বা রাজনৈতিক দলের হাতে শাসন ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত করা হয় না। একনায়কতন্ত্রে একজন বা একটি দল বা একটি কর্তৃপক্ষের হাতেই সমস্ত ক্ষমতা থাকে। এবং সেই ব্যক্তি বা দল অথবা কতৃপক্ষ নিজের ইচ্ছামত দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে প্রধান শাসক একনায়কতন্ত্রের নায়ক শিল্প-সাহিত্যের অনুরাগী হলে দেশে শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ বিশেষ সরকারী আনুকূল্য পেতে পারে। তার ফলে শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞানের চর্চা বৃদ্ধি পায় এবং এইসব ক্ষেত্রে দেশের উন্নতি-উৎকর্ষ সুনিশ্চিত হয়। 

দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্রের গুরুত্বঃ- 

কোনো একটি দেশের ক্ষেত্রে যদি বারবার সরকারের পরিবর্তন হতে থাকে, তাহলে প্রতিবার নতুন ভাবে ক্ষমতায় আসা সরকারের পক্ষে তেমন ভাবেও দেশের উন্নয়ন মূলক কাজ কর্ম করা সম্ভব নয়। বা সেই সরকার দেশের জন্য উন্নতি মূলক কাজকর্ম করলেও তার পরিমাণ কম থাকে। একনায়কতন্ত্রে গণতন্ত্র তুলনায় কোনো সরকার বা শাসকের স্থায়িত্বকাল অনেক বেশি হয়। একনায়কতন্ত্র একজন ব্যক্তি অথবা একটি দল অথবা একটি কর্তৃপক্ষের হাতে দেশের যাবতীয় ক্ষমতা থাকার ফলে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি অথবা একটি দল অথবা একটি কর্তৃপক্ষের  দেশের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম করতে কোনো বাধা থাকে না।।

ক্ষমতা সঠিক ব্যবহারঃ- 

গণতন্ত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অযোগ্য ব্যক্তিরা নিজের অর্থ এবং প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অধিকারী হয়। বিভিন্নভাবে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসা ব্যক্তিরা যখন দেশের শাসন কার্য পরিচালনার দায়িত্বে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশে দুর্নীতি, কারচুপি, দেশের সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি ইত্যাদি দেখা যায়।  কিন্তু একনায়কতন্ত্রের কোনো অযোগ্য ব্যক্তিদের কোনো স্থান নেই। একনায়কতন্ত্রে সবসময়ই কেউ তার যোগ্যতার ভিত্তিতেই ক্ষমতা লাভ করে থাকে। এবং সঠিক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকায়, শাসক তার বিচক্ষণ বুদ্ধির সাহায্যে সেই ক্ষমতা সঠিক ব্যবহার করে দেশের উন্নতি মূলক কাজকর্ম করতে পারে।।

দুর্নীতির অস্তিত্বের নেইঃ- 

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব দেখা যায় এবং সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলে এমন কিছু নেতা থাকে যারা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষমতা অথবা বলপ্রয়োগ কত ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্ষমতায় আসেন। এবং তারা যখন সরকারি কাজের বিভিন্ন বিভাগে ক্ষমতার অধিকারী হন,তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাজের মধ্যে দুর্নীতি প্রবেশ করে এবং সেই সমস্ত দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের উন্নতি স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের কোনো অস্তিত্ব থাকে না বলল কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রাজনীতিতে আসার সুযোগ পায় না। এবং একনায়কতন্ত্রের প্রধান শাসক তার যোগ্যতায় ক্ষমতায় আসেন এবং একাই সমস্ত সরকারি কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে তার কাজের মধ্যে দুর্নীতি দেখা যায় না।।

প্রচারে আর্থিক অপচয়ের কোনো স্থান নেইঃ- 

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তন ক্ষমতা থাকার ফলে গণতান্ত্রিক দেশে একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এবং সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতায় আসার জন্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারকার্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে।। এবং সেই সমস্ত অর্থ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের পকেট থেকেই যায়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে একটি দেশে একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় না। এবং সে কারণে এরকম অবস্থায় দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রচারকার্য বা নির্বাচনে খরচ হয়না। এবং প্রচারকার্য বা নির্বাচনে  খরচ না হওয়া সেই বিপুল পরিমান অর্থ শাসক দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারেন।। উপরিক দিক গুলি ছাড়াও একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বা একনায়কতন্ত্রের গুণ রয়েছে।।

একনায়কতন্ত্রের অসুবিধা বা দোষ বা খারাপ দিকঃ-

একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রে যেমন বেশ কিছু সুবিধা বা গুণ অথবা ভালো দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধা, দোষ অথবা খারাপ দিকও দেখা যায়। যেমন- 

প্রথমতঃ একনায়কতন্ত্রের সরকার যদি কখনো কোনো খারাপ কাজ করে, তাহলে জনগণ নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সেই সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। 

দ্বিতীয়তঃ একনায়কতন্ত্রের একাধিক রাজনৈতিক দলের কোনো অস্তিত্ব থাকে না বলে? ক্ষমতায় থাকা শাসকের তার ক্ষমতা হারানোর কোনো ভয় থাকে না। যার ফলে ক্ষমতায় থাকা শাসক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।

তৃতীয়তঃ একনায়কতন্ত্রের কঠোরভাবে শাসক তার কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা নীতি জনগণের উপরে চাপিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে জনগণের কোনো বাক-স্বাধীনতা না থাকায় অথবা সেই নীতি অথবা পরিকল্পনাকে অমান্য করার কোনো ক্ষমতা না থাকায় জনগনকে বাধ্য হয়ে শাসকের সেই  পরিকল্পনা অথবা নীতি মেনে নিতে হয়।।

চতুর্থতঃ- একনায়কতন্ত্রের একাধিক রাজনৈতিক দলের কোনো অস্তিত্ব না থাকায় ক্ষমতায় থাকা শাসক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিতে পারে। 

পঞ্চমতঃ অনেক সময় একনায়কতন্ত্র শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতির চরমশত্রু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরুপ শাসনব্যবস্থায় একনায়কতন্ত্রী গোষ্ঠী শিল্পী, সাহিত্যিক প্রমুখকে নিজেদের আজ্ঞাবাহী দাসে পরিণত করতে চায়। তার ফলে সমাজজীবন বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, যেসব শিল্পী ও সাহিত্যিক ভিন্নধর্মী সৃজনশীল চিন্তায় বিশ্বাসী, শেষপর্যন্ত তাঁদের ওপর নেমে আসে একনায়কের দমন-পীড়ন। এইভাবে হিটলার, মুসোলিনি, ফ্রাঙ্কো প্রমুখের শাসনকালে বহু সৃজনশীল শিল্পী ও সাহিত্যিককে দেশত্যাগ করতে এবং অনেককে প্রাণ দিতেও হয়েছিল। 

ষষ্ঠতঃ বিশেষ কোনো একজন নায়ক সৎ, সুদক্ষ ও জনকল্যাণকামী হলেও তাঁর মৃত্যুর পর যিনি ক্ষমতার অধিকারী হবেন তিনিও যে অনুরূপ গুণসম্পন্ন হবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। একনায়কতন্ত্রের ইতিহাসই হল এই যুক্তির প্রধান সাক্ষী।

সপ্তমতঃ- একনায়কতন্ত্রে শাসনক্ষমতা একজন মাত্র ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। কিন্তু বৃহদায়তন রাষ্ট্রের একপ্রান্তে বসে তাঁর পক্ষে সমগ্র দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একনায়কতন্ত্রে শাসকগোষ্ঠী একটি বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণিতে পরিণত হয় এবং কালক্রমে জনগণ থেকে নিজেদের আলাদা করে এক অভিজাতশ্রেণিতে উন্নীত করে। জনগণের প্রতি ওই শ্রেণির কোনো দায়িত্ব না থাকায় জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয় এবং শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোনো স্বার্থ রক্ষা করে না। নিজেদের বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনগণের ন্যূনতম সামাজিক ও অন্যান্য অধিকারকে পদদলিত করতে তারা দ্বিধাবোধ করে না। এইসব কারণে গণতন্ত্র বিরোধী একনায়কতন্ত্রকে বিগত শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা বড়ো অভিশাপ বলেই গ্রহণ করা সমীচীন।


আশাকরি যে, একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র থেকে ( wb class 11 political science ) থেকে যে 'একনায়কতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা বা একনায়কতন্ত্রের দোষ-গুণ বা ভালো-মন্দ সম্পর্কে আলোচনা করো' তা তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ে দেখো।

Tags : 

একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 11 গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র বড় প্রশ্ন উওর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র বড় প্রশ্ন উত্তর | 11 রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উওর এবং সাজেশন 2023 | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 11 political science question answer  | wb class 11 political science short question answer 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top