সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023

0

 

সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর


আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা, 
সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বােঝায়? সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ এবং ফলাফল লেখাে।
অথবা, 
সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? ইউরোপের দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ এবং ফলাফল গুলি আলোচনা করো।

ভূমিকাঃ- যে নীতির মাধ্যমে কোনো একটি দেশ নিজের ভূখণ্ডের বাইরে অন্য কোনো দেশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করএ সেখানকার দখল নেয়, সেই ক্ষমতা দখলের নীতিকে সাম্রাজ্যবাদী নীতি বলে। ইটালিতে নবজাগরণের পর এবং ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পর ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলি উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। ইউরোপের দেশগুলো এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন স্থাপন করতে পেরেছিল।। ইউরোপের দেশগুলো এরূপ উপনিবেশ স্থাপনের পেছনে মূলত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক,সামাজিক ধর্মীয় ইত্যাদির মতো আরও একাধিক কারণ ছিল। ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব এবং ইউরোপের দেশগুলোর সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে যে একাধিক কারণগুলো ছিল, তা হলো- 

অর্থনৈতিক কারণঃ-

বিভিন্ন ঐতিহাসিক ইউরোপের দেশগুলোর আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণগুলোর উল্লেখ করেছেন। ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব এবং উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে প্রধান অর্থনৈতিক কারণগুলো ছিল, তাহলো-

পণ্য বিক্রির বাজার প্রতিষ্ঠাঃ-

অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলিতে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল এবং তার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্প উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হতো তা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরেও অনেক বেশি হতো। তাই সেই অতিরিক্ত পণ্যগুলি অন্যান্য দেশে গিয়ে বিক্রি করার জন্য ইউরোপের দেশগুলোর উপনিবেশ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেজন্যই ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি অতিরক্ত পণ্যগুলি বিক্রির জন্যই এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলিতে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে বাজার দখলের চেষ্টা করে।।

কাঁচামাল সংগ্রহঃ- 

শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কলকারখানা গুলিতে কাঁচামালের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলো সেই কাঁচামালের জোগান দিতে পারত না। তাই কলকারখানাগুলোতে কাঁচামালের যোগান অব্যাহত রাখার জন্য এবং সস্তায় কাঁচামাল জোগাড় করার জন্য ইউরোপের দেশ গুলি বিভিন্ন দেশের উপনিবেশ স্থাপন করে সেখান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।

পুঁজির বিনিয়োগঃ- 

শিল্প অগ্রগতির ফলে ইংল্যান্ড একসময় পুঁজিবাদী শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। পুঁজিবাদী শ্রেণী নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিনিয়োগ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা তারা করেনি। তাই তারা নতুন উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।  এবং সেই চাপে পড়েই বিভিন্ন দেশের সরকার উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।।

রাজনৈতিক কারণঃ- 

ইউরোপে দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদ এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসার এবং নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 1970 খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে উগ্রজাতীয়তাবাদ দেখা যায়। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতা, নিরাপত্তা জনিত সমস্যা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। এই কারণে ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে তোলে নিজেদের আরো শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল।।

ধর্মীয় কারণঃ- 

ইউরোপের দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রসারের দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলিতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচলিত ছিল এবং সেই দেশের বিভিন্ন ধর্ম প্রচারকরা, নিজেদের ধর্মের প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারকরা মূলত খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করে বিভিন্ন অনুন্নত দেশগুলিতে জ্ঞানের আলো নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা মূলত ধর্ম প্রচার করে বিভিন্ন অনুন্নত জাতি বা মানুষের মধ্যে ধর্মের আলো নিয়ে এসে মানবকল্যাণ করায় বিষয়ে আগ্রহী ছিল। এবং এই ভাবে তারা ধর্মের আলোর মাধ্যমে মানবকল্যাণের নামে সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশ স্থাপনকে সমর্থন করে।।

সামাজিক কারণঃ-

ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরে সেখানে জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। এই দ্রুত হারে বাড়তে থাকা জনগণের সঠিক কর্মসংস্থান এবং বাসস্থান তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন ছিল। এই কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গুলি নতুন উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে নিজেদের দেশের বাড়তি জনসংখ্যার সঠিক ব্যবস্থা নির্মাণ এবং সেখানে তাদের কর্ম সংস্থান করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এবং এভাবে তারা সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।।

সামরিক কারণঃ-

সাম্রাজ্যবাদের যুগ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং অন্যান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ইউরোপের যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয় এবং প্রত্যেকটি দেশের ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা জনিত সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য এশিয়া,আফ্রিকা এবং আমেরিকা মহাদেশের উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে সামরিক এবং নৌঘাঁটি স্থাপন করতে থাকে।  এ8 স্থানগুলো আবার তারা বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবেও ব্যবহার করতো। যেমন- ইংল্যান্ড সাইপ্রাস এবং ক্রপের মতো জায়গা শুধুমাত্র নিজেদের নৌঘাঁটি তৈরি করার জন্যেই দখল করেছিল।।

সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব এবং ঔপনিবেশিকতাবাদের ফলাফলঃ- 

ইউরোপের দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ স্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফলাফল দেখা গিয়েছিল। যেমন- 

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সংঘর্ষঃ-  

ইউরোপের দেশ গুলির দিনের পর দিন বিভিন্ন উপনিবেশ দখল করার ফলে ইউরোপের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যেই তীব্র সংঘর্ষের সৃষ্টি হতো।

সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধিঃ- 

স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ,আমেরিকার তাদের উপনিবেশ গড়ে তুললে,আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের এই সমস্ত দেশের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার ফলে সামুদ্রিক বাণিজ্য বিকাশ গটেছিল। 

ক্রীতদাসদের উপর অত্যাচারঃ- 

স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ এশিয়া আফ্রিকা এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখানকার বিভিন্ন বাণিজ্যকুঠি অথবা বিভিন্ন শিল্পকর্মের স্থানীয় শ্রমিকদের উপর বিপুল পরিমাণ শোষণ চালানো হতো।।

দারিদ্র্য বৃদ্ধিঃ- 

মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ফলে ইউরোপের দরিদ্র মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য যথেষ্ট বাড়লেও সেই তুলনায় মজুর ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। ফলে ইউরোপের একশ্রেণির মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ সঞ্চিত হলেও দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়।

পুঁজিপতি শ্রেণির উত্থানঃ- 

উপনিবেশ থেকে সম্পদ আমদানির ফলে ইউরোপে একশ্রেণির বণিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ জমা হয়। তারা তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে ধার দিত এবং শিল্পে বিনিয়োগ করত। এভাবে পুঁজিপতি বা ক্যাপিটালিস্ট (Capitalist) শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।

শিল্পে অগ্রগতিঃ-

মূলধনের জোগান, উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি, উপনিবেশে পণ্য বিক্রির বাজারের প্রসার প্রভৃতির ফলে ইউরোপে শিল্পোৎপাদন ক্রমে বাড়তে থাকে। ইংল্যান্ডে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যায়। এই বিপ্লব ক্রমে ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশেও প্রসারিত হয়। সর্বাধিক অগ্রগতি লক্ষ করা যায় বস্ত্রশিল্পে।

বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভবঃ-

এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ইউরোপীয়দের বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠলে এইসব অঞ্চলে তাদের অর্থনীতির প্রসার ঘটে। এভাবে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে 'সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | wb class xii History question answer | hs History  question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top