আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'নতুন বিশ্ব কাকে বলে বা নতুন বিশ্ব মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝায় বা কাকে বলে? মার্কেনটাইলবাদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য বা বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝায় বা কাকে বলে? মার্কেনটাইলবাদের উদ্দেশ্য বা বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা,
মার্কেনটাইল বাদ কাকে বলে বা মার্কেন্টাইল বাদ বলতে কী বোঝায়? অথবা মার্কেনটাইল মূলধন বলতে কী বোঝায় বা কাকে বলে? মার্কেন্টাইল মূলধনের উদ্দেশ্য বা বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
উওরঃ- খ্রিষ্টীয় ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশ গঠনকারী দেশের মধ্যে যে এ নতুন ধরনের অর্থনৈতিক নীতির প্রসার ঘটেছিল,তাই মূলত মার্কেনটাইলবাদ বা মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত। মার্কেনটাইলবাদ বা মার্কেন্টাইল মূলধন কোনো রাষ্ট্র বা অর্থনীতিবিদ প্রবর্তিত কোনো অর্থব্যবস্থা নয়। মার্কেনটাইল বাদ মূলত ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক ধরনের বিশেষ অর্থনীতি, যা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য মূলত সঞ্চিত অর্থের পরিমাণকে বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে, দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করে আমদানি কমিয়ে আনা এবং দেশের সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি ক্ষেত্রে সোনা-রুপা সংগ্রহের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়। প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তার ওয়েলথ অফ নেশনস গ্রন্থের সর্বপ্রথম 1776 হিসেবে মার্কেন্টাইলবাদ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। মার্কেন্টাইলবাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশগুলোর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এবং মার্কেন্টাইলবাদ বিভিন্ন দেশকে তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উত্সাহ জুগিয়েছিল।।
মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনীতি বা মার্কেনটাইল মূলধনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বা উদ্দেশ্যঃ-
মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতির ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা এর বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। মার্কেন্টাইলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এই নতুন অর্থনীতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।।
রাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণঃ-
মার্কেন্টাইল অর্থনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিকে সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসা হয়। মার্কেনটাইলবাদ অনুসারে যেহেতু রাষ্টের স্বার্থ এবং বণিকদের স্বার্থ অভিন্ন করে রাখা হয়,সেই কারণে দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গিল্ডদের বা বনিক সংগঠনেরর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা রাষ্ট্রের বা জাতীয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসা হয়। এভাবে মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতিক জাতীয়তাবাদের রূপ নেয়।।
মার্কেনটাইলবাদ অনুসারে কৃষিনীতিঃ-
মার্কেনটাইল বাদ অনুসারে এটা মনে করা হয় যে, কোন দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য যদি বাইরের দেশে রপ্তানি করা হয়, তাহলে সেই দেশের খাদ্য সংকট দেখা দেবে। এজন্য সরকার দেশের কোনো খাদ্য শস্য বাইরের দেশে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এবং কৃষির উন্নতির জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করার কাজ সরকার বন্ধ করে। এর ফলে যে সমস্ত দেশ মার্কেন্টাইল অর্থনীতির গ্রহণ করে, সেই দেশের কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। কারণ ফসলের অবাধ বিক্রয় এবং বাইরে দেশে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম কখনোই পেতনা। এই কারণে যে সমস্ত দেশ গুলোতে মার্কেন্টাইলবাদ অর্থনীতি গ্রহণ করতত, সে দেশের কৃষকরা মূলত নিজেদের পরিবারের চাহিদা এবং সরকারি খাজনা পরিশোধ করার জন্যই কৃষিকাজ করে থাকতো। এর ফলে দেশে কখনোই কৃষি কাজের উন্নতি ঘটতো না।।
সোনা এবং রুপার গুরুত্ব বৃদ্ধিঃ-
মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যবা উদ্দেশ্য হলো মার্কেনটাইলবাদ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সব সময় সোনা এবং রুপা ইত্যাদি মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে বলে। মার্কেনটাইল বাদ অনুসারে একটি দেশের সোনা এবং রুপার সঞ্চয় যত বেশি হবে, সেই দেশের জাতীয় সম্পদ তত বেশি হবে।। এখানে যে সমস্ত দেশে মার্কেনটাইল বাদ অর্থনীতি গ্রহন করা হয়,দেশ গুলো সব সময়ই নিজের দেশে সোনা এবং রুপা ইত্যাদি মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ ও সঞ্চয় করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
দেশে আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করাঃ-
মার্কেনটাইলবাদ যেই সমস্ত দেশে সোনা, রুপা ইত্যাদি মূল্যবান সম্পদের সঞ্চয় কম, সেই দেশ গুলিকে দেশে বিভিন্ন জিনিসপত্র আমদানি বন্ধ করে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে বলে। কারণ কোনো দেশে রপ্তানি বৃদ্ধি করার ফলে সেই দেশে বিদেশী মূল্যবান ধাতুর আগমন ঘটে যার। ফলে তাদের জাতীয় সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদক ও বণিকরা নতুন নতুন বাণিজ্য উৎপাদনে উৎসাহ দেখায়। অধিক পণ্য রপ্তানি করা গেলে পণ্য উৎপাদক ও বিক্রেতাদের মুনাফা বাড়ে। অতিরিক্ত মুনাফা জমতে জমতে পুঁজির পরিমাণও বাড়ে। ফলে অতিরিক্ত পুঁজি বা মূলধন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের কাজে লাগানাে যায়।
সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিকাশঃ-
মার্কেনটাইল মতবাদ অনুসারে দেশের নতুন মুদ্রা তৈরি, সুদক্ষ সেনাবাহিনীর গঠন এবং নৌবাহিনী গঠন করা এবং জাতীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সোনা-রুপা ইত্যাদি সঞ্চয় বানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই সমস্ত কাজ গুলি করার জন্য মূলত প্রথম সামুদ্রিক বাণিজ্য প্রসার ঘটানো প্রয়োজন হতো। কারণ সামরিক বাণিজ্যের মাধ্যমে একটি দেশ নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখান থেকে মূল্যবান ধাতু বা সোনা এবং রুপা সংগ্রহ করতে পারতো এবং সোনা-রুপার মাধ্যমে তারা নিজেদের জাতীয় সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারতো। মার্কেনটাইল বাদের এই নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপীয় শক্তি গুলি নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তুলতে এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছিল।।
মার্কেনটাইলবাদ অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতাঃ-
মার্কেনটাইলবাদীরা অবাধ বাণিজ্যের বিরোধী ছিলেন। তারা মূলত অন্যান্য দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে নিজের দেশের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াফ পক্ষপাতী ছিলেন। তাদের মতে অন্য দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে স্বদেশী সমৃদ্ধি সাধন সম্ভব। এজন্য মার্কেনটাইলবাদীরা অন্যান্য দেশের বাণিজ্যে পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক চাপিয়ে দিয়এ এবং নিজের দেশের বাণিজ্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে শুল্কমুক্ত বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগে ভর্তুকি ও প্রিভিলেজ দিয়ে বাণিজ্যের বিকাশ ঘটানোর পক্ষপাতী ছিলেন।।
মার্কেনটাইলবাদ অর্থনীতির ফলাফলঃ-
মার্কেন্টাইল মূলধনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ গুলি নিজেদের জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক বাণিজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। এবং উপনিবেশ থেকে তারা বিভিন্ন কাঁচামাল,বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ সংগ্রহ করে কিছু ক্ষেত্রে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলি কাঁচামাল সংগ্রহ ও পণ্য বিক্রির বাজার দখলের উদ্দেশ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে, উপনিবেশগুলিতে একাধিপত্য বজায় রাখতে নৌসেনা, শক্তিশালী নৌবহর গঠন, অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সংঘাত তীব্র করে।
মার্কেন্টাইলবাদ বা মার্কেন্টাইল মূলধনের সমালোচনাঃ-
ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে প্রসারিত এই মার্কেন্টাইল মূলধন অথবা মার্কেন্টাইলবাদ কিছু ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও এর বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি রয়েছে। যার কারণে একে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হয়। যেমন-
সম্পদের পুনর্নির্নিয়োনঃ-
অ্যাডাম স্মিথের বন্ধু ডেভিড হিউম মার্কেন্টাইলবাদের সমালোচনা করে বলেন যে, সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদের ভাণ্ডার বৃদ্ধি করে নয়, তা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে পারে।
সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতাঃ-
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ বলেন যে, বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি বা অযথা সরকারি হস্তক্ষেপের দ্বারা নয়, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের
অর্থনীতি মজবুত হতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতিঃ-
মার্কেন্টাইলবাদের ফলে দেশীয় শিল্প বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাত থেকে রক্ষা পায়, কিন্তু শিল্প সংরক্ষণ নীতির ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ প্রতিটি দেশই নিজের দেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চালায়।
সুস্পষ্ট ধারণীর অভাবঃ-
মার্কেন্টাইলবাদে অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতনতা, বাস্তবতাবোধ, উৎপাদন, বাণিজ্যিক লাভলোকসান প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব ছিল। এসব কারণে মার্কেন্টাইলবাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুকালের মধ্যেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে যে 'নতুন বিশ্ব কাকে বলে বা নতুন বিশ্ব মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝায় বা কাকে বলে? মার্কেনটাইলবাদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য বা বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।
Tags :
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer | wb class xii History question answer | hs History question answer & suggestion 2023