নবম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিংশ শতকের ইউরোপ ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন '১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো' ( WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো || নবম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- আধুনিক ইউরোপ তথা বিশ্ব ইতিহাসে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই বিপ্লব রাশিয়ার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সবক্ষেত্রেই গভীর প্রভাব ফেলেছিল। অ্যালাম উড বলেছেন, রুশ বিপ্লবের উৎস খুঁজতে হবে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তির সময় থেকে। ঐতিহাসিক লিপসম-এর মতে, “রাশিয়ার ইতিহাসেই রুশ বিপ্লবের শিকড় রয়েছে।” বলশেভিক বিপ্লব সর্বত্র পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এক নবযুগের আগমনী বার্তার সূচনা করেছিল।
রুশবিপ্লবের কারণঃ-
রুশ বিপ্লবের নেপথ্যে ছিল দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অসন্তোষ। এগুলি হল—
স্বৈরাচারী ও পচনশীল জারতন্ত্রঃ-
রাশিয়ার জারতন্ত্রের আমলে প্রচলিত শাসনব্যবস্থা ছিল মধ্যযুগীয় ও সামন্ততান্ত্রিক। এই শাসনব্যবস্থা নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। জার শাসকদের পচনশীল মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় জনসাধারণ ছিল অসন্তুষ্ট। সেইসঙ্গে তাদের তীব্র দমননীতি জনসাধারণকে করে তুলেছিল ব্যথিত। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের স্বৈরাচারী নীতি রুশ জনগণকে জার বিরোধী করে তোলে এবং প্রশস্ত করে তোলে বৃহত্তর গণ বিপ্লবের পথ।
রুশীকরণ নীতিঃ-
অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের মতো জার শাসিত রাশিয়াতেও পোল, ফিন, তুর্কি, জর্জীয়, আর্মেনীয়, ইউক্রেনীয়, বাইলো-রুশ প্রভৃতি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করত। ১৯০৫-এর বিপ্লবের পর আর সরকার ওই জাতিগুলির জাতীয় সত্ত্বাকে অগ্রাহ্য করে তাদের ওপর রুশ ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি চাপিয়ে দেয়। এই রুশীকরণ নীতির বিরুদ্ধে গোটা রাশিয়ায় প্রবল বিক্ষোভ সঞ্চারিত হয় এবং অ-রুশ জাতিগোষ্ঠীগুলি নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে ভারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।
কৃষকদের দূরবস্থা বা শোষণঃ-
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার থেকে ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেন করলেও কৃষকদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। শোষণ সমানেই চলছিল; কেবল শোষকের পরিবর্তন হয়েছিল। জমিদারদের অধিকার কেবল হস্তান্তরিত হয়েছিল মীর নামে গ্রাম্য সমিতির ওপর। অবশেষে ১৯০৫ থেকে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মীর'-এর হাত থেকে কৃষকরা জমির মালিকানা স্বত্ব ফিরে পায়। কিন্তু দারিদ্র্যের জ্বালায় ওইসব জমি অধিকাংশ কৃষকই কুলাকদের কাছে বিক্রি করে তাদেরই মজুরে পরিণত হয়, নয়তো শহরে চলে যায়।
শ্রমিকদের অসন্তোষঃ-
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও শিল্পক্ষেত্রে রাশিয়া মোটেই উন্নত ছিল না। তবে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের ফলে রাশিয়াতেও কিছু কিছু শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু সেগুলির মালিক ছিল রাশিয়ার অভিজাতদের সঙ্গে ইংরেজ, ফরাসি, জার্মান প্রভৃতি বিদেশিরা। ফলে কৃষকদের মতো সেখানে শ্রমিকদের অবস্থাও ছিল দুর্বিষহ। অল্প মজুরি, উদয়াস্ত পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর বস্তি-জীবনের অভিশাপ তাদের জীবনকে জর্জরিত করে তুলেছিল। এরই প্রতিকার চেয়ে তাদের জীবনে নেমে এল ১৯০৫ খ্রিঃ (২২ জানুয়ারি)-এর রক্তাক্ত রবিবার-এর ঘটনা। শ্রমিকরা বুঝে যায়, জারতন্ত্রের উচ্ছেদ ছাড়া তাদের অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বলশেভিক গোষ্ঠী শ্রমিকদের মধ্যে প্রচার চালিয়ে তাদের সংগঠিত করতে থাকে। পরিণতি হিসেবে ১৯০৫-এর পর রাশিয়ার দিকে দিকে শ্রমিক ধর্মঘট উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯১৪-র প্রথম সাত মাসেই সেখানে ধর্মঘট শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে বারো লাখে পৌঁছোয়।
দুর্বল অর্থনীতিঃ-
কৃষিপ্রধান রাশিয়ার কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা জার আমলে ছিল মধ্যযুগীয়। এদিকে ভূমিদাসদের মুক্তির পর রাশিয়ার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। অথচ রাশিয়ার গ্রামীণ অর্থনীতি ছিল ‘বুলাক’ শ্রেণির মুষ্টিমেয় সমৃদ্ধিশালী মানুষের হাতে। ফলে গ্রাম রাশিয়ায় খাদ্য সংকট একটা বাৎসরিক ব্যাপার হয়েই দাঁড়িয়েছিল। অন্যদিকে রাশিয়ার বৃহৎ শিল্পে ছিল বিদেশি পুঁজির আধিপত্য। এর ফলে প্রাকৃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালেই রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মিলিয়ন বুবল। পরিণতি হিসেবে প্রাক্ বিপ্লবকালে রাশিয়ার অর্থনীতি ক্ষয়ি অন্তঃসারশূন্য ও ফাঁপা হয়ে পড়লে বিপ্লবের অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের প্রভাবঃ-
কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির ওপর ধনীদের অমানুষিক পীড়ন রাশিয়ার বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে (সংখ্যায় সামান্য হলেও) সমবাধী করে তোলে। গোগাল, পুশকিন, গোর্কি, টলস্টয়, ডস্টয়ভস্কি, তুর্গেনেড, চেখভ প্রমুখ দার্শনিক, কবি, সাহিত্যিক তাঁদের রচনার মাধ্যমে রাশিয়ার অসহায় অবস্থা ও জারের স্বৈরাচার ও অপদার্থ শাসনতন্ত্রের স্বরূপটি তুলে ধরেন। ফলে জারতন্ত্র সম্পর্কে জনমনে দারুণ ঘৃণার সঞ্চার হয়। এরই মধ্যে বুকানিনের নৈরাজ্যবাদ ও কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্রবাদ জনসাধারণের মনে নতুন চেওনার সঞ্চার করে। এইভাবে বাস্তবে রুশ বিপ্লব ঘটার অনেক আগেই রাশিয়ার সাধারণ মানুষের ভাবজগতে বিপ্লব সম্পন্ন হয়।
বলশেভিকদের ভূমিকাঃ-
বলশেভিকরা যুদ্ধবিরতি, শান্তির জন্য যেকোনো মূল্যে জার্মানির সঙ্গে সন্ধি, শ্রমিকদের আট ঘন্টা কাজ ও মজুরি বৃদ্ধি, কৃষকদের মধ্যে ভূমি বন্টন প্রভৃতি দাবি নিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশে জনমত গড়ে তুলতে শুরু করে। দলীয় পত্রিকা প্রাভদা-র মাধ্যমে তারা প্রচার চালায়। এই অবস্থায় রুশ শ্রমিকদের একটা বড়ো অংশ বলশেভিক মতাদর্শে আকৃষ্ট হয় এবং ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি থেকে নানা সখানে তারা শ্রমিক ধর্মঘট গড়ে তুলতে শুরু করে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকাঃ-
বলশেভিক দল ছাড়াও আরও কিছু রাজনৈতিক দল বিপ্লবের পটভূমি রচনাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এই দলগুলির মধ্যে ছিল মধ্যবিত্তদের কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, কৃষকদের সোশ্যাল রেভোলিউশনারি পার্টি, শিল্প শ্রমিকদের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি। এছাড়াও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী নারদনিক পপুলিস্ট দলও এই বিপ্লবে পটভূমি রচনায় সাহায্য করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবঃ-
রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রথম দিকে সাফল্য পেলেও ক্রমশ যুদ্ধাস্ত্রের অভাব, পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে রাশিয়ার সংকট ঘনীভূত হয়। এছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেওয়ার খেসারতরূপে ১০ মিলিয়ন সেনার খাদ্য, পোশাক, অস্ত্র ও বেতন জোগাতে গিয়ে রাজকোশ শূন্য হয়ে পড়ে। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য জার সরকার বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন রুবল ঋণ গ্রহণ করে। শিল্প পরিকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে, যুদ্ধ চলাকালীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, যুদ্ধের খরচ চালানোর জন্য করের হারও বাড়ানো হয়। তাই রাশিয়ার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত রুশ বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করে বলা যায়। বি.এইচ. সুমনার বলেছেন- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ না দিলে ভারতন্ত্রের পতন ঘটত না ("Tsarism would not have collapsed as it did but for the war.")
রুশ বিপ্লবের প্রতক্ষ কারণঃ-
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ বা পুরাতন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারির (পূর্বে রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বর্তমানে রাশিয়ায় প্রচলিত ক্যালেন্ডারের তুলনায় ১৩ দিন পিছিয়ে ছিল) মধ্যে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক বলশেভিকদের নেতৃত্বে পেট্রোগ্রাড শহরে খাদ্যের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে। ২ দিনের মধ্যেই এই ধর্মঘট সাধারণ ধর্মঘটের রূপ পায়। বলশেভিক দলের পেট্রোগ্রাড সমিতি প্রচারপত্র বিলি করে, যাতে লেখা ছিল, জারতন্ত্র নিপাত যাক। যুদ্ধ বন্ধ কর। পৃথিবীর শ্রমিকদের ভ্রাতৃত্ব দীর্ঘজীবী হোক। পরের দিন রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে জারের সেনাদল বিপ্লবে যোগ দেয়। বিপ্লবীরা সরকারি অস্ত্রাগার লুঠ করে ও রাজধানী পেট্রোগ্রাড (বর্তমানে সেন্টপিটাসবার্গ)-এর দখল নেয়। সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক দলের নেতা প্রিপ জর্জ লুটভ-এর নেতৃত্বে রুশ অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয় (১৯১৭ খ্রিঃ ১৪ মার্চ), অবসান ঘটে ৩০০ বছরের পুরাতন রোমানভ জারতন্ত্রের।
আশাকরি আজকের এই ব্লগে নবম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিংশ শতকের ইউরোপের একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন '১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা'র উত্তরটি তোমাদের ভালো লাগবে।।
Tags :
নবম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস বিশ শতকের ইউরোপ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিশ শতকের ইউরোপের SAQ প্রশ্ন উওর | wbbse class 9 history question answer 2023 | wb class 10 history question answer | wb class 9 history suggestion 2023 | History question answer