দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো |
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো' ( WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) এর উওর সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল?দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো
ভূমিকাঃ- ১৯১৪ থেকে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল, তার ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংসলীলা এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণ যাওয়ার পর মানুষের মনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সেই শান্তি বজায় রাখা এবং পরবর্তীতে যাতে আর কোনো এরূপ ধ্বংসকারী যুদ্ধ সৃষ্টি না হয় সেই কারণে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠাত কুড়ি বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণবাদ্য বেজে উঠেছিল। 1914 খ্রিস্টাব্দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পেছনে যেমন একাধিক কারণ ছিল,ঠিক তেমনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি কারণ ছিল। যেমন -
প্রথমত: ভার্সাই সন্দ্বির ত্রুটিঃ-
১৯১৯ খ্রীঃ স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল বললে অত্যুক্তি হয় না। এই চুক্তিতে জার্মানীর উপর যে কঠোর শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা সোজা মনে নেওয়া আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কোন জাতির পক্ষে সম্ভব ছিল না। চুক্তিটি ছিল এক তরকা অযৌক্তিক এবং জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া। বিজয়ী শক্তিবর্গ জার্মানীর প্রতি সামান্যতম উদারতা প্রদর্শন না করে, তাকে চিরতরে পঙ্গু করে রাখার জন্য বেশী আগ্রহী ছিল। তার উপর যে বিরাট ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়েছিল, তা প্রদান করতে হলে দেশটাকেই বিক্রি করে দিতে হত। তাই জার্মানবাসীর সামনে ভাসাই চুক্তি বন্ধ করা ছাড়া বাঁচার কোন পথ ছিল না এবং এর জন্য দরকার ছিল আর একটা যুদ্ধের। তাই হিটলার যখন চুক্তিভঙ্গের অঙ্গীকার করেন এবং যুদ্ধমুখী মনোভাব গ্রহণ করেন তখন সব শ্রেণীর জার্মান তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করে।
দ্বিতীয়ত: জঙ্গীবাদের উত্থানঃ-
জার্মানীতে হিটলারের নেতৃত্বে ন্যাৎসীবাদ ও ইতালীতে মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও গণতান্ত্রিক সরকারগুলি দুদেশেই। ব্যর্থ হয়েছিল। প্যারিস সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ দুটি দেশকেই সমস্যার অঞ্চলে ঠেলে দিয়েছিলেন। ইতালী তার কাঙ্খিত রাজ্য পায়নি, আর জার্মানী হয়েছিল মিত্রশক্তি বর্গের জিঘাংসার কেন্দ্র, সমস্যা জর্জরিত ও ক্ষুব্ধ দুটি দেশের মানুষ স্বৈরাচারী শাসকদের মাঝে মুক্তির পথ দেখেছিল। এঁরা জঙ্গীবাদী নীতি অনুসরণ করে তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন অতৃপ্ত জনমানসকে। এই বিপজ্জনক খেলার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ছিল বিশ্বযুদ্ধ।
তৃতীয়তঃ তোষণ নীতির ত্রুটিঃ-
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের অতি সাবধানী অথচ অদূরদর্শী নীতি এই মহাযুদ্ধের জন্য কম দায়ী ছিল না, রুশ সাম্যবাদের আতঙ্কে জর্জরিত এই দেশ দুটি হিটলার ও মুসোলিনীর অন্যায় আচরণকে গোপনে মদত দিয়েছিল। হিটলার ও মুসোলিনী যখন সবরকম ন্যায় নীতি বিসর্জন দিয়ে এক একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে গ্রাস করেছিলেন তখন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ছিল নিশ্চুপ। এমনকি মিউনিক সম্মেলনে বসে এরা হিটলারের হাতে সুদেতান অঞ্চল তুলে দিতেও দ্বিধা করেনি। ধারণা ছিল, তোষণ দ্বারা সাম্রাজ্যবাদীদের লোভ সংবরণ করা যাবে। কিন্তু এই তোষণ নীতি হিটলার ও মুসোলিনীর লোভকে আরও বৃদ্ধি করেছিল।
চতুর্থতঃ জাতিসংঘের ব্যর্থতাঃ-
লীগ অব নেশানস্ বা জাতিসংঘের ব্যর্থতাও বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী ছিল। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই এটি ছিল একটি দুর্বল সংগঠন। জাতিসংঘ বা লীগের প্রকৃতি শক্তি ছিল বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের আন্তরিকতা অর্থাৎ শান্তি বজায় রাখার প্রয়োজনে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার মানসিক দৃঢ়তা। জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করলে লীগ তার প্রতিবাদ করে। সঙ্গে সঙ্গে ঐ দুটি দেশ লীগ পরিত্যাগ করে চলে যায়। অবশ্য লীগের পদক্ষেপও সঠিক ছিল না। বৃহৎ শক্তির কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ লীগ দৃঢ়ভাবে করতে পারেনি। ফলে লীগের কার্যকারিতা সম্পর্কে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রবর্গের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছিল।
পঞ্চমতঃ বিরোধী শক্তিজোটঃ-
বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি দুটি পরস্পর বিরোধী শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে । স্বৈরতন্ত্রী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রদ্বয় ইতালী, জাপান, জার্মানী সাম্যবাদ রোধ করার নামে পরস্পরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এই তিনটি রাষ্ট্র গঠন করে 'রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি'। এদের সাম্রাজ্যবাদী ক্রিয়াকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য হয়। পরে রাশিয়া ও আমেরিকা তাদের সাথে যোগ দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণঃ-
এইভাবে একাধিক কারণে বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমন্ডল যখন উত্তপ্ত তখন হিটলারের আগ্রাসী নীতি বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে। প্রথম দিকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স কর্তৃক জার্মানী তোষণ নীতি ক্রমে রাশিয়াকেও হিটলারের দিকে ঠেলে দেয়। রাশিয়া জার্মানীর সাথে একটি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে নিজের স্বাধীনতা রক্ষা করার চেষ্টা করে। এই সাফল্য হিটলারকে আরও মারমুখী করে তোলে। অতঃপর তিনি মিউনিখ চুক্তি ভঙ্গ করে পোল্যান্ডের ডানজিগ বন্দর ও পোলিশ-কোরিডর দাবি করেন। এখন ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স বুঝতে পারে, মিষ্টি কথায় হিটলারের মন তুষ্ট করা যাবে না। এক্ষনে তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, হিটলার পোল্যান্ডের দিকে হাত বাড়ালে তারা পোল্যান্ডের পক্ষে যুদ্ধে নামতে দ্বিধা করবে না। কিন্তু এই হুমকিকে অগ্রাহ্য করে হিটলার ১৯৩৯ খ্রীঃ ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করে। ঠিক দুদিন পরে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ খ্রীঃ)।
আশাকরি আজকের এই ব্লগে নবম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর'রএকটি বড় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল?দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো'র উত্তরটি তোমাদের ভালো লাগবে।।
Tags :
নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর প্রশ্ন উওর | wbbse class 9 history question answer 2023 | wb class 10 history question answer | wb class 9 history suggestion 2023 | History question answer