দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। || নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর

0

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। || নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর

আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।' ( WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 

ভূমিকাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র একুশ বছরের মধ্যেই অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব শেষ হতে না হতেই বিশ্বব্যাপী আরও এক ভয়ানক ও বিধ্বংসী যুদ্ধের সূচনা হয় । ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানির হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয় । ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ অর্থাৎ দীর্ঘ ছয় বছর এই দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ স্থায়ী ছিল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে যেমন একাধিক কারণ ছিল ঠিক তেমনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে একাধিক কারণ ছিল। যেমন - 

ভাসাই চুক্তির কঠোরতাঃ- 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয় এবং জোরপূর্বক জার্মান প্রতিনিধিদের সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই একতরফা ও অনুদার চুক্তিকে জার্মানির জনগণ কোনোদিনই মেনে নেয়নি এবং মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই অ্যান্ড্লফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানি ভার্সাই সন্ধির সমস্ত অপমানজনক চুক্তি ভেঙে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবস হয়। বস্তুত ভার্সাই সন্ধির কঠোরতার মধ্যে আর একটি বিশ্বযুদ্ধের বীজ সুপ্ত ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে জাতিসংঘের ব্যর্থতাঃ-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান এবং সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য লিগ অফ নেশনস্ বা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মূল দায়িত্ব পালনে লিগ অফ নেশনস ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার কারণগুলি ছিল -

• সাংগঠনিক ত্রুটি,নিজস্ব সেনাবাহিনীর অভাব, বৃহৎ শক্তিবর্গের অনুপস্থিতি, নিরস্ত্রীকরণে ব্যর্থতা এবং সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো প্রয়োগ প্রভৃতি যার পরিণতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে।

জার্মানি, ইটালি ও জাপানের উপনিবেশ বিস্তারের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষাঃ- 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স বিশ্বের অধিকাংশ উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ায় জার্মানি, ইটালি ও জাপানের ভাগ্যে কোনো উপনিবেশই জোটেনি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য এই দেশগুলি উপনিবেশ দখলের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এইভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়—যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনে। 

ফ্যাসিবাদী শক্তির বিস্তারঃ-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। দুই বৃহৎ গণতন্ত্রী রাষ্ট্রের এই মতবিরোধ, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিস্তারকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেই গড়ে উঠেছিল রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষ।

উগ্র জাতীয়তাবাদঃ- 

জার্মান একনায়ক হিটলারের পররাজ্যগ্রাসী বিস্তারধর্মী পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে জার্মানির জনগণের উ জাতীয়তাবাদ যুক্ত হয়ে যে সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতির জন্ম হয়েছিল, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুত্থকে একরকম নিশ্চিত করে তুলেছিল।

ইটালি ও জাপানের আগ্রাসন নীতিঃ-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইটালি ও জাপানের পররাজ্যগ্রাস নীতি বিশ্বকে দ্রুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। ইটালির আবিসিনিয়া দখল এবং জাপানের মাঞ্চুরিয়া দখলের কোনো প্রতিকার না হওয়ার ঘটনা এই দুটি দেশকে আরও আগ্রাসী ও বেপরোয়া করে তুলেছিল।

পুঁজিবাদী ও সাম্যবাদী ভাবধারার মধ্যে মতাদর্শগত সংঘাতঃ-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশেষত ১৯৩০-এর দশকে এই সময় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বদ্ধমূল ধারণা ছিল জার্মানির নাৎসিবাদ ও রুশ সাম্যবাদ দুইই বিপজ্জনক, কিন্তু রুশ সাম্যবাদ আরও বেশি বিপজ্জনক। তারা সাম্যবাদী রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রাচীর হিসেবে ফ্যাসিবাদীকে ব্যবহার করতে চেয়ে হিটলারের প্রতি আপসমূলক তোষণ নীতির আশ্রয় নেয়, যা হিটলারকে আরও বেপরোয়া করে তোলে এবং পরবর্তীকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির দ্বারা আক্রান্ত হয়।

হিটলারের প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তোষণ নীতিঃ- 

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তীকালে একনায়কতান্ত্রিক জার্মানি ও ইটালির প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের এই তোষণ নীতি নাৎসি জার্মানির শক্তি বাড়ায়, হিটলার আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির দ্বারা আক্রান্ত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণঃ-

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে মিত্রপক্ষের নিষেধ অগ্রাহ্য করে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সনতাদের জার্মানির প্রতি তোষণ নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। 

উপসংহারঃ- এভাবে দেখা যায় যে, ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলির আগ্রাসনের প্রচেষ্টা এবং তার প্রতিরোধে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ব্যর্থতা, — এই দুইয়ের মাধ্যমে ইউরোপ তথা বিশ্বের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়াই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার প্রধানতম কারণ।

আশাকরি আজকের এই ব্লগে নবম শ্রেণীর ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপরের একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 'র উত্তরটি তোমাদের ভালো লাগবে।।

Tags : 

নবম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর | wbbse class 9 history question answer 2023 | wb class 10 history question answer | wb class 9 history suggestion 2023 | History question answer


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top