নবম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক (WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'সন্ত্রাসের রাজত্বে রোবসপীয়রের ভূমিকা আলোচনা করো' এর উওর (WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
সন্ত্রাসের রাজত্বে রোবসপীয়রের ভূমিকা আলোচনা করো
উওরঃ
ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম নেতা ছিলেন রোপস্পিয়র (১৭৫৮-৯৪ খ্রিঃ)। ঐতিহাসিক ডেভিড্ টমসনের মতে, “রোবসপিয়রের মধ্যেই ফরাসি বিপ্লব প্রতিফলিত হয়েছিল। ফ্রান্সের বিপ্লবী নেতাদের মতে, তিনি ছিলেন স্মরণীয় এবং প্রতীকি।" প্রকৃত অর্থেই ব্যক্তি রোবমূপিয়র ছিলেন সৎ, আদর্শবাদী ও নির্ভীক রাজনীতিবিদ।
তাঁর চরিত্র ছিল সবরকম বলুষতামুক্ত।
রোবমূপিয়র বাল্যকালেই পিতামাতাকে হারিয়ে এক বিশপের কাছে মানুষ হন। শিক্ষা সমাপনাস্তে তিনি আইনজীবীর কাজ নেন। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের সংবিধানসভার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করেন। অতঃপর একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেন। সন্ত্রাসের শাসনকালে তিনি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন।
রোবস্পিয়র রুশোর দার্শনিকতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সমন্টির ইচ্ছাকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে বলে মনে করতেন। বিপ্লবকে রক্ষা করার জন্য তিনি কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণেও দ্বিধা করতেন না। তাঁর মতে, "জনতা যখন অত্যাচারিত হয়, তখন জনতাই তার প্রতিকার করে। শাসক স্বৈরাচারী হলে জনতার উচিত বিদ্রোহ করে। তা প্রতিবিধান করা।” এইভাবে তিনি জনতার নেতৃত্ব নিয়ে আইনসভাকে নিজের বশীভূত করেন।
রোবসপিয়র ছিলেন জ্যাকোবিন ক্লাবের অন্যতম নেতা। তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের ফলেই সংখ্যালঘু
জ্যাকোবিন দল জাতীয় সম্মেলনে ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হয়। বন্ধা হিসেবে তিনি খুব দক্ষ ছিলেন না।
ঠিকই, কিন্তু তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা জনগণকে আকৃষ্ট করত।
কনভেনশন যখন ইউরোপীয় যুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহী হয়, তখন একমাত্র রোবসুপিয়রই তার বিরোধীতা করেন।
কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল যুদ্ধে ফ্রান্সের অর্থ ব্যয় হবে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরিণতিতে বিপ্লব পিছিয়ে পড়বে। অবশ্য তাঁর চেষ্টা সফল হয়নি। যুদ্ধজনিত আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যখন ‘সন্ত্রাসের শাসন' শুরু হয়, তখন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় তাঁর হাতে।
দেশের বিপ্লবের স্বার্থে তিনি কঠোরতম শাসন প্রবর্তন করেন। গণ নিরাপত্তা সমিতির প্রধান হিসেবে তিনি চরমপন্থী হার্বাট ও তাঁর অনুগামীদের ক্ষমতাচ্যুত করেন। হার্বাটকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। হার্বাট ছিলেন খ্রিস্টধর্ম বিরোধী ও সমাজতন্ত্রী। এরপর আসে ডাল্টনের পালা। ডাল্টন ছিলেন মধ্যপন্থী। তিনি ও তাঁর অনুগামীরা সন্ত্রাসের শাসনের অবসান চাইছিলেন। রোবসপিয়র ডাল্টনের বিরুদ্ধে বিপ্লববিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তাঁকেও গিলোটিনে হত্যা করেন।
এরপর রোবস্পিয়র নিরঙ্কুশভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে যেতে থাকেন।
তিনি একটি নতুন আইন জারি করে (১০ জুন, ১৭৯৪ খ্রিঃ) সন্ত্রাসকে 'মহাসন্ত্রাসে পরিণত করেন। এই আইনবলে অভিযুক্তদের আত্মরক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এছাড়া তিনি 'নিম্নতম মজুরি আইন', 'সর্বোচ্চ মূল্যের আইন' প্রভৃতি জারি করেন। এই সময়ে রোবসপিয়র তার সামান্যতম সমালোচককেও নির্দ্বিধায় গিলোটিনে পাঠান। ফলে সাত সপ্তাহে গিলোটিনে হত্যার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় তেরোশ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রোবস্পিয়র একটি নতুন ধর্মও প্রচলনের চেষ্টা চালান। তিনি একজন পরমপুরুষ (Supreme Being)-এর অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। যাই হোক, তাঁর নৃশংসতা ক্রমশ তাঁর শত্রুদের ঐক্যবদ্ধ করতে থাকে। জনগণও দীর্ঘকালীন সন্ত্রাসের ফলে নেতৃত্বের প্রতি অতীষ্ট হয়ে ওঠেন। এমতাবস্থায় হার্বাট ও ডাল্টনের অবশিষ্ট অনুগামীরা রোবসপিয়রের শত্রুদের সাথে মিলিত হয়ে একটি গোপন ষড়যন্ত্র রচনা করেন।
এদের সঙ্গে হাত মেলায় বুর্জোয়া প্রতি বিপ্লবীরা। সাঁকুমাত্রাও রোবস্পিয়রের কাছ থেকে সরে যায়। এরপর ২৭ জুলাই (৯ থামিডোর), ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে, এক অভ্যুত্থানের দ্বারা রোবসপিয়রকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাঁকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। এইভাবে রোবসপিয়রের দীর্ঘ এবং কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
Tags :