দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
উওরঃ জাতীয় স্বার্থ হলো এমন একটি বিষয় যার কোন সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত যে সমস্ত সংজ্ঞা রয়েছে সেই সংজ্ঞাগুলিকে বিচার-বিশ্লেষণ করে বা সেগুলো সমন্বয় করে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে যে সংজ্ঞা পাওয়া যায়, তা হলো-
জাতীয় স্বার্থ বলতে জাতির সেই সমস্ত সর্বনিম্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহকে বোঝায়,যেই সমস্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে পূরণ করার জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে বা কার্যকলাপ করে থাকে, তাকে বলা হয় জাতীয় স্বার্থ বলে।।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পদ্ধতি গুলি সম্পর্কে আলোচনা-
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পদ্ধতিঃ জাতীয় স্বার্থ মূলত পাঁচটি উপায় রক্ষিত হয়ে থাকে। যথা - কূটনীতি,প্রচার, বলপ্রয়োগ, জোট গঠন এবং অর্থনৈতিক ঋণ প্রদান ও সাহায্য।
কূটনীতিঃ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায় হলো কূটনীতি। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা নিজেদের সরকারের গৃহীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং জনগণের সামনে এমনভাবে প্রকাশ করেন যে,তা যেন সেই রাষ্ট্রপ্রধান এবং জনগণের কাছে সমর্থন লাভ করে। নিজেদের দেশে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কূটনীতিবিদরা মূলত তিনটি পদ্ধতি অনুসরন করে থাকেন। যথা- বিশ্বাস উৎপাদন,আপসরফা এবং বলপ্রয়োগের ভীতিপ্রদর্শন।।
প্রচারঃ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা। যেমন বেতার, দূরদর্শন সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিটি রাষ্ট্র তাদের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি প্রচার করে থাকে। প্রতিটি রাষ্ট্র জাতীয় স্বার্থ বিশেষত পররাষ্ট্রনীতির স্বপক্ষে অন্যান্য রাষ্ট্রের জনগণের সরকার এবং জনগণকে প্রভাবিত করার জন্য প্রচারের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।।
জোট গঠনঃ
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্টগুলি অনেক সময় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে জোট গঠন করে। জোট গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সহায়তা করার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে।
অর্থনৈতিক সাহায্য ও ঋণ প্রদানঃ
উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে অনুন্নত এবং আর্থিক দিক থেকে দুর্বল উন্নতিকামক দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সাহায্য এবং ঋণ প্রদান করে এই ঋণ প্রদানের পেছনে উন্নত রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঋণগ্রহণকারী রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করা।।
বল প্রয়োগঃ
বল প্রয়োগ বলতে সামরিক শক্তির প্রয়োগকে বোঝায়। বিভিন্ন রাষ্ট্র অনেক সময় তাদের জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অপর একটি রাষ্ট্রের ওপর বল প্রয়োগ করে থাকে বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। যেমনটা 1956 সালে কাশ্মীর দখলের জন্য পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছিল। এখানে পাকিস্তান তার জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভারতের ওপর বল প্রয়োগ করেছিল।।
উপসংহার, নিজের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি রাষ্ট্র উপরিক্ত উপায় গুলির মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক উপায় অনুসরণ করতে পারে। তবে নিজেদের জাতীয় স্বার্থের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণের সময় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিটি রাষ্ট্রকে নিজেদের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করা উচিত এবং বলপ্রয়োগের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সেই নীতি অনুসরণ করা উচিত। অন্যথায় সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রশ্ন দাড়িয়ে পরবে।।