দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং কয়েকটি মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের (WBBSE Class 12 Political Science Question Answer Chapter 1 In Bengali ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'ক্ষমতা বা শক্তি কাকে বলে? ই.এইচ. কার শক্তি কে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং পরবর্তীতে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত নোটস + অনলাইন মকটেস্ট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
ক্ষমতা বা শক্তি কাকে বলে? ই.এইচ. কার শক্তি কে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উওরঃ বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা বা শক্তি উৎপন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণভাবে ক্ষমতা বা শক্তি বলতে কাজ করার সামর্থ্যকে বোঝায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতা বা শক্তির অন্য অর্থ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ যে মর্গেনথাথ ক্ষমতা বা শক্তির যে সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন তা হলো, শক্তি বা ক্ষমতা বলতে অন্য কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণকে বোঝায়। তার মতে এক জাতির মন ও কাজের উপর অন্য জাতির ক্ষমতা বা শক্তির প্রয়োগ হলো জাতীয় শক্তি।
শক্তি বা ক্ষমতার শ্রেণীবিভাজনঃ
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তি বা ক্ষমতার শ্রেণীবিভাজন করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশারদ ই.এইচ.কার ক্ষমতা বা শক্তি তিনটি প্রকার আলোচনা করেছেন।সেগুলো হলো - সামরিক শক্তি,অর্থনৈতিক শক্তি এবং জনমত গঠনের শক্তি।
সামরিক শক্তিঃ
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র ঠিক কতটা শক্তিশালী সেই বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই রাষ্ট্রের সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করে থাকে। একটি রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি যত বেশি হবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের স্থান তত উচ্চতর হবে। অতীতের মতো বর্তমানেও যে রাষ্ট্র সামরিক দিক থেকে যত শক্তি শক্তিশালী, সেই রাষ্ট্রকে অতি বৃহৎ শক্তির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। জোসেফ ফ্রাঙ্কেল তার ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস গ্রন্থের বলেছেন যে, কোন রাষ্ট্র কামান ও বিমানের সামর্থ্য না থাকলে সেখানে নরম ধাঁচের কূটনীতিও সফল হতে পারে।
অর্থনৈতিক শক্তিঃ
সামরিক শক্তির পরেই আসে অর্থনৈতিক শক্তি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের স্থান উচ্চতর হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তি থাকা প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক থেকে যতটা শক্তিশালী হতে পারবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রের গুরুত্ব তত বেশি হবে। কারণ অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকলেই সেই রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে, অন্য কোনো রাষ্ট্রকে সাহায্য করতে পারবে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিতে, প্রযুক্তিবিদ্যা,বিজ্ঞান গবেষণা, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্রগতি করে আরো উন্নত হতে পারবে। এমনকি সেই পররাষ্ট্রনীতই সফল করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। এজন্যই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ।।
জনমত গঠনে শক্তিঃ
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনমত গঠনের শক্তি বলতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি রাষ্ট্রের বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। যেই রাষ্ট্র নিজের স্বপক্ষে বিশ্ব রাজনীতিতে যত বেশি জনমত গঠন করতে সক্ষম হবে, সেই রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ততবেশি নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার গুরুত্বঃ
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই আন্তর্জাতিক রাজনীতি চালিত হয়। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের ভূমিকা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্ষমতা বা শক্তি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গঃ
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা হলেও, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অংশ নিয়ে আলোচনা করে। এবং দেখা গেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির শুধুমাত্র অধিক ক্ষমতা শালী অথবা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রতিটি রাষ্ট্রের ক্ষমতার গুরুত্ব রয়েছে।।
রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারণকারীঃ
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের শক্তি বা ক্ষমতা কে কেন্দ্র করে প্রতিটি রাষ্ট্রের স্থান নির্ণয় করা হয় যেমন ক্ষুদ্র শক্তি, মাঝারি শক্তি, বৃহৎ শক্তি,অতি বৃহৎ শক্তি ইত্যাদি।
পররাষ্ট্র নীতির প্রধান লক্ষ্যঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হয়,আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করার প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষমতা অর্জন করা। মর্গেন্থাও এর মতে, শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে। বস্তুত ক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে তার অস্তিত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ছোট-বড় প্রতিটি রাষ্ট্রের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা অর্জন করা।।
Tags :