দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা 'কে বাঁচায় কে বাঁচে' গল্পের প্রশ্ন উওর |
ভূমিকাঃ প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পটি মূলত ১৯৫০ এর ভয়ঙ্কর মন্বন্তরক কেন্দ্র করে রচিত একটি কাহিনি। কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পটি মূলত বাঁচা মরার কাহিনী নিয়ে রচিত। গল্পের রয়েছে বেঁচে থাকার লড়াই, বাঁচাতে চাওয়ার কথা এবং বাঁচাতে না পেরে তাদেরই একজন হয়ে ওঠার কথা।
কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার-
গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় একদিন অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই অনাহারে মৃত্যু এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর বীভৎস দৃশ্য নিজের চোখে দেখে ফেলেন। মৃত্যুঞ্জয় যখন প্রথমবারের জন্য অনাহারে মৃত্যু হতে দেখে, তখন সেই বিষয়টা মৃত্যুঞ্জয়কে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। মৃত্যুঞ্জয় কোনো এক অজানা কারণে ভেতর থেকে নিজেকে দোষী বলে মনে করতে শুরু করে এবং কোনো এক অপরাধবোধে মৃত্যুঞ্জয় ধীরে ধীরে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে পাল্টে যেতে শুরু করে।
মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মরতে থাকে সেই মানুষগুলোকে একটু সাহায্য করে তাদের বাঁচানোর জন্য সে নিজের এবং নিজে স্ত্রীর একবেলা খাওয়া কমিয়ে দিয়ে, সেই খাবার অনাহারে কষ্ট পাওয়া সেই মানুষগুলোর মধ্যে বিলিয়ে দিতে শুরু করে। যাতে সেই মানুষগুলো সেইটুকু খাদ্য পেয়ে নিজেরা বাঁচতে পারে। কিন্তু এতেও মৃত্যুঞ্জয় যখন শান্তি পায় না তখন মৃত্যুঞ্জয় নিজের এক মাসের পুরো মাইনেটাই তার সহকর্মী বন্ধু নিখিলের মাধ্যমে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। কিন্তু এরপরও মৃত্যুঞ্জয় সেইসব মানুষের জন্য কিছু করতে পারে না। এবং মৃত্যুঞ্জয় খুব ভালভাবেই বুঝতে পারে যে, সে নিজের সর্বস্ব দিয়ে দান করলেও কিছু করা যাবে না। কিন্তু এর পরও মৃত্যুঞ্জয়ের মনে সেই অপরাধ নিজের জায়গা করে রাখে। মৃত্যুঞ্জয়ের আস্তে আস্তে সংসার এবং অফিস ত্যাগ করে সেই অনাহারে মরতে থাকা মানুষদের একজন হয়ে যায়। মৃত্যুঞ্জয় কলকাতা শহরের ফুটপাতেই নিজেকে ছেঁড়া কাপড়,খিদের কষ্টে মানিয়ে নেয়। লঙ্গরকারখানায় গিয়ে কাড়াকাড়ি করে খিচুড়ি খেতে শুরু করে। এবং বাকি সময়টাতে কলকাতার সীমাহীন অন্তহীন পথে ঘুরে বেড়ানো এবং অন্যদিকে অনাহারক্লিষ্ট সঙ্গীদের মতো একঘেয়ে সুরে বলতে থাকে, 'গা থেকে এইচি, খেতে পাইনি এ বাবা। আমায় খেতে দাও'।।
সুতরাং গল্পের শেষে আমরা এটা দেখতে পারি যে, মৃত্যুঞ্জয় সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের বাঁচাতে গিয়ে নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করে। কিন্তু তবুও সে তাদের বাঁচাতে পারে না। এমনকি সে নিজেও বাঁচতে পারেনি। গল্পে রয়েছে একক মানুষের আন্তরিকতায় আত্মত্যাগে কিংবা সমানুভূতিসম্পন্ন হয়ে ওঠার মধ্যে এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান নেই। এভাবে কেউ কাউকে নাতো বাঁচাতে পারে আর নাতো কেই বাঁচতে পারে।।
গল্পকার এই গল্পের মধ্যে একক মানুষের সেই ব্যর্থ প্রয়াস এবং দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ পরিণামকে প্রশমিত করার জন্য সমবেত স্বার্থত্যাগের একান্ত অভাব, এই দু-দিকেই অঙ্গুলি সংকেত করেছেন। আর সেখানেই 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' নামটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আশাকরি দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম অধ্যায় অথবা উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রথম অধ্যায় 'কে বাঁচায় কে বাঁচে' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার ব আলোচনা তোমাদের ভালো লাগবে।।