দূরপ্রাচ্যে বা চিন এবং জাপানে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023

0

 

দূরপ্রাচ্যে বা চিন এবং জাপানে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 2023
Class 12 History Question Answer 2023

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় 'দূরপ্রাচ্যে বা চিন এবং জাপানে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করো' প্রশ্নটির উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

দূরপ্রাচ্যে বা চিন এবং জাপানে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করো। 

ভূমিকাঃ- দূরপ্রাচ্যের দেশ বলতে সাধারণভাবে জাপান এবং চীন দেশকে বোঝায়। ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিগুলির চীন এবং জাপানে প্রবেশের আগে এই দুটি দেশ মূলত বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপন করেনি।কারন তারা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু পঞ্চদশ শতকের পর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশগুলি নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করার নীতি গ্রহন করলে তারা একসময় চীন এবং জাপানের প্রবেশ করে। এবং এই দুটি দেশকেও তারা নিজেদের  উপনিবেশে পরিণত করে।।

জাপানে ইউরোপীয় শক্তির সাম্রাজ্য বিস্তারঃ-

দূরপ্রাচ্যের দেশ জাপান দীর্ঘদিন পর্যন্ত বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করেনি। জাপানের ভৌগোলিক অবস্থান এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য জাপানকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করেছিলম কিন্তু উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের শক্তিশালী দেশ গুলি জাপানে প্রবেশ করে এবং এরপর জাপানকে তারা নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করে ফেলে। 

জাপানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইংল্যান্ড, রাশিয়া এবং হল্যান্ডের আধিপত্য বিস্তারঃ- 

মার্কিন সেনাপতি কমোডর ম্যাথু পেরি 1854 খ্রিস্টাব্দে চার হাজার সৈন্য এবং চারটি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে জাপানের ইয়েডো বন্দরে হাজির হন।মার্কিন সেনাপতি আগমনে জাপানের শোগুন সরকার ভীত হয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অপমানজনক কানাগাওয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত করে। সন্ধিত শর্ত অনুসারে জাপানের শিমোগা এবং হাকোডাটা বন্দর দুটি আমেরিকার বাণিজ্য বন্দরে পরিণত হয়। 1854 খ্রিস্টাব্দে জাপানে আমেরিকার প্রবেশের পর ইউরোপের অন্যান্য শক্তিশালী দেশ গুলি,যেমন ইংল্যান্ড,রাশিয়া এবং হল্যান্ড জাপানকে প্রবেশ করে, জাপান সরকারকে চাপে ফেলে একই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এবং এভাবে আস্তে আস্তে জাপান ইউরোপীয় শক্তিগুলিত উপনিবেশে পরিণত হয়।। কিন্তু ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলি জাপানে তাদের আধিপত্য বিস্তার করলেও, অল্প সময়ের মধ্যেই জাপানে আধুনিকরণের আন্দোলন শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে জাপান একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এবং ধীরে ধীরে জাপান নিজের উপর থেকে বিভিন্ন বিদেশী শক্তির প্রভাব কাটিয়ে নিজেই একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।।

চীনে ইংল্যান্ড, জাপান,রাশিয়া,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতির উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাঃ-

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে জাপানের মত চিনও দীর্ঘ কাল পর্যন্ত বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেনি। কিন্তু চীন অন্যান্য দেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন না করলেও চিনে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল তা,ইউরোপের বিভিন্ন বণিক জাতিকে চিনে আসতে উৎসাহিত করেছিল। এর ফলে ষোড়শ শতকে পর্তুগিজ,সপ্তদশ শতকে ওলন্দাজ,ইংরেজ এবং স্পেনীয়রা চীনে আসতে শুরু করে এবং সেখানে তারা নিজেদের বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। কিন্তু সেই সব বিদেশি বণিকদের সঙ্গে চিন কোনো রকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের মোটেও রাজি ছিলনা। তাই চিন শুধুমাত্র বিভিন্ন শর্তের সঙ্গে ক্যান্টন বন্দর বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু চীনের সঙ্গে এভাবে বাণিজ্য করার কোনো সুফল ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে দেখা যায়নি। সেই কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় শক্তির সঙ্গে চিনের বিরোধ শুরু হয়। এবং সেই বিরোধের মধ্যে দিয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলি আস্তে আস্তে চিনে নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।।

প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধঃ-

ইউরোপীয় শক্তি গুলির চিনে প্রবেশ করায় চীনা সরকার অনেক শর্ত সাপেক্ষে সঙ্গে শুধুমাত্র ক্যান্টন বন্দর তাদের বাণিজ্য করার অধিকার দেয়। কিন্তু এই নিয়ে চীনের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধে। এর ফলে ইংরেজরা 1839 সালে প্রথম চীনের সঙ্গে অহিফেনের যুদ্ধ লিপ্ত হয় এবং এই যুদ্ধে চীনের মাঞ্চু শাসক খুবই বাজে পরাজিত হয়ে, ইংরেজদের সঙ্গে 1852 খ্রিষ্টাব্দের নানকিং এর সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই সন্ধির শর্ত অনুসারে ইংরেজরা চীনের বিভিন্ন অংশ দখল করে এবং চীনের পাঁচটি বন্দরে অবাধ বাণিজ্য করার অধিকার পায়। 

দ্বিতীয় ইঙ্গ-চিন যুদ্ধঃ- 

প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধে ইংরেজরা চীনের বেশ কয়েকটি বন্দর এবং কিছু অংশ দখল করার পর দ্বিতীয় বার 1856 খ্রিস্টাব্দে আবার দ্বিতীয় অহিফেনের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে চীনের সঙ্গে ফ্রান্সও যুক্ত ছিল। ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের কাছের চীন পরাজিত হয়েছেন আবার তাদের সঙ্গে 1858 খ্রিষ্টাব্দে তিয়েন সিন- সন্ধি স্বাক্ষর করে। এবং এই সন্ধির মাধ্যমে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড চীনের এগারোটি বন্দরে অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ পায় এবং সেইসঙ্গে চীনে দূতাবাস স্থাপন এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অধিকার লাভ করে।।

চীনে জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তারঃ- 

দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জাপান ইউরোপীয় শক্তির উপনিবেশ হিসেবে থাকলেও, জাপান একসময় শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এবং এর ফলে জাপান সম্পূর্ণভাবে ইউরোপীয় শক্তি গুলির নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে পড়ে। এরপর জাপান নিজেই একসময় সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করে এবং  সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি মাধ্যমে, জাপান 1894 সালে চীনের অধীনস্থ কোরিয়াকে দখল করার জন্য জাপান চিন আক্রমণ করেছিল। এবং চীনের সঙ্গে যুদ্ধ করার ফলে চীন-জাপানের কাছে পরাজিত হয়ে জাপানের সঙ্গে শিমনোসেকির সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল। এই সন্ধির দ্বারা জাপান চীনের একাধিক অঞ্চল দখল করে এবং চীনে বাণিজ্য করার সুযোগ পায়। এরপর 1900 খ্রিষ্টাব্দে মাঞ্চুরিয়া রেলপথ রক্ষার অজুহাতে রুশ যখন চিনে সেনাদল পাঠায়,তখন আবার জাপানের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয় এবং সেই যুদ্ধে রাশিয়া জাপানের কাছে পরাজিত হলে পোর্টসমাউথের সন্ধি স্বাক্ষর করে।  এবং এর মাধ্যমে জাপান আবারও লিয়াও-টুং ফিরে পায় এবং 1911 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জাপান সমগ্র করিয়া দখল করে নেয়।।

চীনে রাশিয়ার আগ্রাসনঃ-

1894 খ্রিস্টাব্দে জাপানের করিয়া দখলের পর, জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়া প্রদেশের লিয়াও-টুং উপদ্বীপ দখলের চেষ্টা করলে,  জাপানকে প্রতিহত করে রাশিয়া সেই উপদ্বীপ দখল করে নেয়। রাশিয়া চিনের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত মোঙ্গালিয়ার আমুর উপত্যকা দখল করে সেখানে ভ্লাডিভোস্টক বন্দর স্থাপন করে। এরপর রাশিয়া চিনের লিয়াও-টুং-এর পোর্ট আর্থার দখল করে। ভ্লাডিভোস্টক বন্দরকে রেলপথের দ্বারা সেন্ট পিটার্সবার্গ-এর সঙ্গে এবং পোর্ট আর্থার বন্দরকে ট্রান্স-সাইবেরীয় রেলপথের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। 

আমেরিকার ‘মুক্তদ্বার নীতিঃ- 

দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চীনে ইউরোপীয় শক্তির মধ্যে ফ্রান্স,ইংল্যান্ড, রাশিয়া এবং অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের জাপান নিজেদের সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহন করলেও আমেরিকার দীর্ঘদিন পর্যন্ত চিনে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। কিন্তু ইউরোপীয় শক্তি গুলি চিনে আধিপত্যে প্রতিষ্ঠা করতে থাকে এতে আমেরিকা আশংকিত হয়ে পড়েছিল।। চিনে ইউরোপীয় শক্তিগুলির আধিপত্যের ফলে আমেরিকা আশঙ্কিত হয় যে, ভবিষ্যতে চিনে হয়তো মার্কিন বাণিজ্যের কোনো সুযোগ থাকবে না। এজন্য মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব স্যার জন হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত ‘মুক্তদ্বার নীতি’ (Open Door Policy) ঘোষণা করেন। এই নীতিতে বলা হয় যে, বিভিন্ন শক্তির দ্বারা অধিকৃত চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকাকে বাণিজ্যের সমান সুযোগ দিতে হবে। এভাবে চিনে আমেরিকা অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ চালায়।।


আশাকরি, দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ( West Bengal Board Class 12 History Question Answer & Suggestion 2023 ) থেকে যে 'দূরপ্রাচ্যে বা চিন এবং জাপানে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করো' সম্পর্কে যে নোট দেওয়া হয়েছে, তা তোমাদের কাজে আসবে।।

Tags : 

দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ ও বিংশ শতকে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | wb class 12 History question answer  | wb class xii History question answer | hs History  question answer & suggestion 2023

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top