প্রশ্নঃ মহাদেশীয় ব্যবস্থা কাকে বলে বা মহাদেশীয় ব্যবস্থা কী? নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি টিকা লেখ
উওরঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের মধ্যেই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট লক্ষ করেছিলেন যে, ইউরোপের অপরাপর রাষ্ট্রগুলি তাঁর বশ্যতা স্বীকার করলেও শুধুমাত্র ইংল্যান্ড এখনো তার বশ্যতা স্বীকার করেনি। কারণ ইংল্যান্ডকে এখনো পযর্ন্ত অপরাজেয় রয়ে গেছে। তৎকালীন সময়ে ইংল্যান্ডকে হারানো মোটেও খুব সহজ ছিলনা। নৌশস্তিতে সমৃদ্ধ ইংল্যান্ডকে সামরিক যুদ্ধে পরাভূত করা অত্যন্ত দুষ্কর ছিল। তাই নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে সামরিক দিক থেকে না ভেঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে ইংল্যান্ডকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালান। ইউরোপের উপকূলভাগ অবরোধ করে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যকে ধ্বংস করার জন তিনি সচেষ্ট হন। নেপোলিয়নের এই প্রচেষ্টাকেই বলা হয় ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি কয়েকটি ঘোষণা জারি করেছিলেন।
বার্লিন ডিক্রিঃ
ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল করার জন্য নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সর্বপ্রথম ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন ডিক্রি নামে একটি ঘোষণা জারি করে। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দের বার্লিন ডিক্রি ঘোষণা জারি করে ঘোষণা করা হয় যে, সমস্ত ইউরোপীয় বন্দরগুলি ইংরেজ পণ্যের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। এর ফলে ইংল্যান্ডে তৈরি কোনো পণ্য ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে ইংল্যান্ডের তৈরি বিভিন্ন পণ্য ইউরোপে যে বাজার গড়ে তুলেছিল, সেই বাজারে মুনাফা ইংল্যান্ডের বন্ধ হয়ে যায়।
পরিষদীয় আদেশঃ
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বার্লিন ডিক্রি ঘোষণার পর ইংল্যান্ড থেমে থাকেনি ইংল্যান্ড এর উত্তর দিতে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের পরিষদীয় আদেশ জারি করে। এতে ইংল্যান্ড ঘোষণা করে যে, যে সমস্ত দেশ বার্লিন ডিগ্রি মানবে তাদের জাহাজকে বাজেয়াপ্ত করা হবে। বাণিজ্য করার জন্য তাদেরকে ইংল্যান্ডের বন্দর থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়।
ওয়ারশ এবং ফনটেনব্লু ঘোষণা জারিঃ
ইংল্যান্ডের পরিষদীয় আদেশ জারি হওয়ার পর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর পাল্টা উত্তর দেন। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মিলান ঘোষণা জারি করে বলেন, যে সমস্ত দেশের জাহাজ পরিবীয় আদেশ মেনে চলবে তাদের জাহাজ ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে নেপোলিয়ন ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারশ ও ফন্টেনব্লু ঘোষণা ভারী করেন।
তিনি এই দুটি ঘোষণার দ্বারা বলেন, ফ্রান্স অধিকৃত ইউরোপের কোনো বন্দরে যদি ইংল্যান্ডে প্রস্তুত কোনো পণ্য পাওতা যায়, তাহলে সেগুলি সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হবে।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইংল্যান্ডকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার জন্য এবং ইংল্যান্ডের নৌ-বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়া বার্লিন, পরিষদীয়, ওয়ারশ এবং ফনটেন ব্লু ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গিয়েছিল এই চারটি নীতি নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।।
Tags :