সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায় অথবা সামন্ততন্ত্র কাকে বলে? || পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণ || WB Class XI History Question Answer & Notes
WB Class XI History Question Answer & Notes |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় " অর্থনীতির বিভিন্ন দিক " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় " সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায় অথবা সামন্ততন্ত্র কাকে বলে? || পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণ " বিষয়টি বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য " সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায় অথবা সামন্ততন্ত্র কাকে বলে? || পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণ " প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।।
সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায় অথবা সামন্ততন্ত্র কাকে বলে? || পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণ
খুব সাধারণভাবে সামন্ততন্ত্র বলতে বোঝায় এমন এক শাসনব্যবস্থাকে, যা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থেকে অথবা রাজার শাসনের অধীনে থেকে কোনো একটি অঞ্চলের শাসন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে শাসন ব্যবস্থা যে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে বলা হয় সামন্ত প্রভু। সামন্ত প্রভু রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে অথবা রাজার অধীনে থেকে সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের শাসনব্যবস্থাকে নিজের ইচ্ছামত পরিচালনা করে।। এরকম ব্যবস্থাকেই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা হয়। নবম শতক থেকে পশ্চিম ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ধব ঘটে। এবং এরপর থেকেই ইউরোপের সামন্ততন্ত্র ছড়িয়ে পড়ে। মনে করা হয় দশম ও একাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের বিকাশ ঘটেছিল। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের উদ্ধবের বেশ কিছু কারণ ছিল। যেমন -
অনুগত পৃষ্ঠপোষক সম্পর্কঃ প্রাচীন রোমের এক ধরনের প্রথা ছিল,যেই প্রথার মাধ্যমে সাধারণ জনগন, ধনী অভিজাত ব্যক্তিদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতেন এবং সেই আনুগত্যের বদলে সেই ক্ষমতাশীল ব্যক্তি জনসাধারণের শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নিতেন। এই প্রাচীন রোমের এই সম্পর্ক অনুগত পৃষ্ঠপোষক সম্পর্ক নামে পরিচিত ছিল। আনুগত্য পৃষ্ঠপোষক সম্পর্ক ধীরে ধীরে চারদিকে বিস্তার লাভ করে এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সামন্ততন্ত্রের বিকাশ ঘটতে শুরু করে।
কমিটেটাস প্রথাঃ কমিটেটাস প্রথা হলো এমন একটি প্রথা যে প্রথার মাধ্যমে কিছু বীর যোদ্ধারা একজন উপদলীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতেন এবং তার স্বার্থ রক্ষার জন্য অঙ্গীকার করতেন। তার বদলে সেই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি সেই যোদ্ধাদের আশ্রয়,নিরাপত্তা এবং যাবতীয় দায়িত্ব নিতেন এভাবেই কমিটেটাস প্রথা সামন্ততন্ত্রের কাঠামো গঠনে সাহায্য করেছিল।
বর্বর আক্রমণঃ ইউরোপের সামন্ততন্ত্র উদ্ভবের পেছনে সব চেয়ে বড় কারন ছিল বর্বর জাতির আক্রমণ। ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্যের রাজপরিবারে রাজাকুমারদের মধ্যে বিরোধের ফলে দ্বাদশ শতকের মধ্যে সেই সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। এরূপ অবস্থায় ম্যাগিয়ির, সারাসেন, ভাইকিং প্রভৃতি বিভিন্ন বর্বর জাতি পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের অভিযান চালালে ইউরোপের চরম নৈরাজ্য এবং অশান্তি সৃষ্টি হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা এবং শান্তির জন্য উচ্চস্তরের কোনো একজন শক্তিশালী ব্যক্তির ওপর নিজেদের দায়িত্ব অর্পন করে। এবং এভাবেই সামন্ততন্ত্রের বিকাশ ঘটে।
মুসলিম আক্রমণঃ 814 খ্রিস্টাব্দের রোমান সম্রাট শার্লামেনের মৃত্যুর পরবর্তী কালে রোমের কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর উপস্থিতিতে মুসলিম এবং অন্যান্য বৈদেশিক শক্তিগুলির ইউরোপে আক্রমণ চালালে ইউরোপের সাধারণ মানুষের জীবনে শান্তি ভঙ্গ হয় এবং নিরাপত্তার অভাব দেখা যায়। এর ফলে জনগণ নিজেদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার প্রয়োজনে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ওপর নির্ভর হতে বাধ্য হয়। এইভাবে স্থানীয় ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রভুর উত্থান ঘটে এবং এভাবেই সামন্ততন্ত্রের বিকাশ ঘটে।।
উপসংহারঃ উপরিক্ত কিছু প্রধান কারণগুলি ছাড়াও আরও নানা ছোট-বড় কারণে, খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের পত্তন শুরু হয়েছিল।।