ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। || WB Class 11 History Question Answer & Suggestion 2022
wb class 11 history question answer & suggestion 2022 |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়( wb class 11 history chapter 5) " অর্থনীতির বিভিন্ন দিক " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি " সম্পর্কে বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য " ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। " প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।।
ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ 446 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশ শুরু হয়নি। কারণ সেই সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের পতন,সামন্ততন্ত্রের জন্য বাণিজ্যের বাধা, ম্যানত ব্যবস্থার অস্তিত্ব ইত্যাদি কারণে ইউরোপের বাণিজ্যের বিকাশ শুরু হয়নি। কিন্তু মধ্যযুগের প্রথম দিক থেকে ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশ শুরু হয়। মধ্যযুগের ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। যেমন -
ক্রুসেডের অবদানঃ খ্রিস্টানদের পবিত্রভূমি জেরুজালেম দখলকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মযোদ্ধাদের মধ্যে প্রায় দুশো বছর ধরে (১০৯৬- ১২৯১ খ্রি.) যে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তা মধ্যযুগের ইউরোপে বাণিজ্যের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ক্রুসেডের ফলে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা স্থাপিত হয়। পশ্চিমের জগতে প্রাচ্যের বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই যোগাযোগের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর আমদানি-রপ্তানি আরম্ভ হয়। এবং আমদানি এবং রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশ শুরু হয়।
নগরজীবনের প্রসারঃ একাদশ শতকের পরবর্তীকালে ইউরোপে নগর জীবনের প্রতিষ্ঠস হয়। যার ফলে সেখানকার জনসংখ্যা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী রচাহিদা বৃদ্ধি পায়।এবং সেই সমস্ত চাহিদা মেটানোর জন্যেই বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানার বিকাশ ঘটে। এবং ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশ শুরু হয়
গিল্ডের ভূমিকাঃ ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে গিল্ডগুলি বিশেষ সাহায্য করেছিল। বাণিজ্যের সুবিধার্থে তখনকার বণিকরস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের আইন রচনা করতো। কারখানায় কাঁচামাল ও শ্রমিকের যোগান অব্যাহত রাখা, বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী গুণগত মান ঠিক রাখা ইত্যাদি কাজ গুলি গিল্ডের মাধ্যমে করা হতো। দিন দিন গিল্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপের বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্যের সংখ্যাও বাড়ে। এবং এভাবেই আমদানি এবং রপ্তানিকার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ মধ্যযুগের ইউরোপে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষ সাহায্য করেছিল। মধ্যযুগের রাস্তাঘাট এবং নদীপথ গুলি উন্নত ছিল বলে, দূর-দূরান্তে থেকে পণ্য রপ্তানি করা এবং দূর দেশ থেকে বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি করার সুবিধা ছিল।
লোম্বার্ডদের আক্রমণঃ বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ভূমধ্যসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ক্রমাগত লোম্বার্ডদের আক্রমণ হতো। যার ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষদের জীবনে কোনো শান্ন্তনিরাপত্তা ছিল না। এবং এর ফলে সেখানকার মানুষের কৃষিকাজ ধ্বংস হয়। ফলে সেখানকার মানুষ কৃষির বিকল্প হিসেবে কুটির শিল্প এবং বাণিজ্যকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেয় এবং তারা শীঘ্রই পণ্যদ্রব্যের বাজারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ঘটায়।।
কম্পাস এর আবিষ্কারঃ কম্পাসের আবিষ্কার মধ্যযুগে ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কম্পাস আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে সমুদ্রপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে সাহায্য করে।। কম্পাসের সাহায্যে নাবিকরা সমুদ্রপথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে পারতো।। এবং কম্পাসের সাহায্যেই তারা বিভিন্ন দেশে পৌঁছে সেখানে বাণিজ্য করার সুযোগ পেত।।
বাণিজ্য মেলাঃ ইউরোপের বড় বড় শহরগুলিতে বছরে অন্তত একবার হলেও বিভিন্ন বাণিজ্যমেলা বসতো। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ সেই মেলায় জিনিসপত্র কেনাবেচা করতে আসতো। ফলে এভাবেও ইউরোপে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল।।
উপরিক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও নানা কারণে মধ্যযুগে ইউরোপের বাণিজ্যের বিকাশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।।