বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথার বৈশিষ্ট্য লেখো || বর্ণপ্রথা এবং জাতিপ্রথার মধ্যে পার্থক্য লেখো। || WB Class 11 History Question Answer & Suggestion 2022
![]() |
wb class 11 history question answer & suggestion 2022 |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ( wb class 11 history chapter 6 ) " সমাজের ঘটনা প্রবাহ " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথার বৈশিষ্ট্য লেখো || বর্ণপ্রথা এবং জাতিপ্রথার মধ্যে পার্থক্য " সম্পর্কে বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য " বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথার বৈশিষ্ট্য লেখো || বর্ণপ্রথা এবং জাতিপ্রথার মধ্যে পার্থক্য " সম্পর্কে নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।।
বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথার বৈশিষ্ট্য লেখো || বর্ণপ্রথা এবং জাতিপ্রথার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ভূমিকাঃ ভারতে বর্ণ প্রথার উদ্ভব ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। তবে মনে করা হয় ভারতবর্ষে আর্যরা আসার আগে থেকেই বর্ণ প্রথার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু আবার এটাও বলা হয় যে, বৈদিক যুগে ভারতে আর্যদের আগমন কালে কোন বর্ণ কোথায় অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে ভারতের অভ্যন্তরে আর্যদের প্রসার ঘটলে, গৌরবর্ণ আর্যরা কৃষ্ণবর্ণ অনার্যদের থেকে নিজেদের পৃথক রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এবং সেই প্রয়োজন থেকেই আর্য বা বৈদিক সমাজে বিভিন্ন পেশা ও বৃত্তির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণপ্রথা সৃষ্টি হয়।।
ভারতের চতুর্বর্ণ প্রথা কী?
উওরঃ ভারতে বৈদিক যুগে আর্যদের বসতিএ প্রসার ঘটলে,গৌরবর্ণ আর্যরা এদেশের কৃষ্ণবর্ণ অনার্যদের থেকে নিজেদের পৃথক রাখার প্রয়োজনীয়তা, এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ কর্মের জন্য শ্রম বিভাজনের প্রয়োজনীয়তায় আর্যরা সমাজব্যবস্থাকে যে চারটি পৃথক বর্ণে আলাদা করে রেখেছিল, তাই হল বর্ণপ্রথা। এই বর্ণ প্রথা অনুসারে সমাজব্যবস্থা তখন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য এবং ক্ষুদ্র - এই চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল।।
ভারতে বর্ণ প্রথার বৈশিষ্ট্যঃ
চারটি বর্ণের সৃষ্টিঃ ভারতের ঋকবেদের দশম মন্ডলের পুরুষসূক্তের একটি স্লোকে বলা হয়েছে যে- আদিপুরুষ ব্রহ্মার মুখমন্ডল থেকে ব্রাহ্মণ, বাহুদ্বয় থেকে ক্ষত্রিয়, উররদেশ থেকে বৈশ্য এবং চরণ যুগল থেকে শুদ্রদের উৎপত্তি হয়েছে। এভাবে আর্য সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য এবং শূদ্র এই চারটি পৃথক বর্ণের সৃষ্টি হয়।
সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য এবং শূদ্রের অবস্থানঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরা ছিল আর্য। এবং অনার্যরা ছিল শূদ্র বলে বিবেচিত হতো।।
• এই চতুর্বর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণদের অবস্থান ছিল সবচেয়ে উঁচুতে। তাদের কাজ ছিল বিভিন্ন যাগযজ্ঞ করা, পূজা-অর্চনা করা এবং অধ্যায়ন- অধ্যাপনা করা।
• ক্ষত্রিয়দের অবস্থান ছিল ব্রাহ্মণদের পরেই। ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল দেশ শাসন, দেশ রক্ষা এবং বিভিন্ন সামরিক ক্ষেত্রে কাজ করা।
• বৈশ্যদের অবস্থান ছিল ক্ষত্রিয়দের পরেই। বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখা।
• সমাজের চারটি বর্ণের মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করতো শূদ্র। শূদ্র বলতে ছিল সমাজের সাধারণ শ্রমজীবী অনার্য মানুষেরা।।
ভারতের জাতীভেদ প্রথার উদ্ভবঃ
প্রাচীন ভারতের কৃষ্ণাঙ্গ অনার্যদের থেকে আর্যরা নিজেদের আলাদা রাখার উদ্দেশ্য এবং একক আর্য পুরুষের পক্ষে শিল্প,কৃষি?বাণিজ্য যাগযজ্ঞ, পূজা ইত্যাদি করা সম্ভব না বলে বংশানুক্রমিক শ্রম বিভাজনের প্রয়োজন হয়। এবং সেই প্রয়োজর হাত ধরেই ভারতে চতুর্বর্ণ প্রথার উদ্ভব ঘটে।। পরবর্তীকালে বৈদিক সমাজে বিভিন্ন ধরনের পেশা সৃষ্টি হয় এবং নতুন পেশা গুলিতে বহু মানুষ যুক্ত হয়। এছাড়া কালের নিয়মের পরিবর্তনে চতুর্বর্ণ প্রথায় নানা সংমিশ্রন দেখা দেয় এবং বিভিন্ন নতুন মিশ্রবর্ণের সৃষ্টি হয়। এই বর্ণপ্রথা থেকেই ক্রমে জাতিপ্রথার প্রধান উত্থান ঘটে বলে মনে করা হয়।।
জাতিভেদ প্রথার উদ্ভবের উপাদানঃ প্রাচীন ভারতে কোন কোন উপাদান গুলি বা বিষয়গুলি জাতিভেদ প্রথার উৎপত্তিতে সাহায্য করেছিল তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে- ভারতে যে চতুর্বর্ণ প্রথা ছিল তা থেকেই জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটে। হার্বাট রিজলের মতে ভারতের জাতিভেদ প্রথার উদ্ভবের পেছনে একাধিক উপাদান ছিল।
যেমন-
• নির্দিষ্ট প্রেসার ভিত্তিতে কোনো উপজাতি বা তার অংশবিশেষ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
• বংশানুক্রমিক পেশার পরিবর্তন,
• ধর্মের ভিত্তিতে জাতি নির্ধারণ এছাড়া ভাষার ভিত্তিতে জাতির নির্ধারণ ভারতে জাতিভেদ প্রথার উদ্ভবে সাহায্য করেছিল।।
বিভিন্ন যুগের জাতিভেদ প্রথার বিবর্তনঃ ভারতের পরবর্তী বৈদিক যুগ, মৌর্য যুগ, মৌর্য পরবর্তী যুগ, গুপ্ত যুগ এবং গুপ্ত পরবর্তী যুগের জাতিভেদ প্রথার বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
পরবর্তী বৈদিক যুগেঃ পরবর্তী বৈদিক যুগে রচিত বিভিন্ন সংহিতায় সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র -এই চারটি জাতি ছাড়াও তখন ব্রাত্য ও নিষাদ নামে দুটি উপজাতির কথা জানা যায়। ব্রাত্য ও নিষাদ ছিল মূলত আর্য সমাজের বাইরে অবস্থানকারী দুটি অস্পৃশ্ব জাতি। ব্রাত্যরা ছিল যাযাবর এবং নিষাদরা ছিল মূলত জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো মানুষ।।
মৌর্য যুগের বিভিন্ন জাতিঃ গ্রীক দূত মেগাস্থিনিস মৌর্য যুগে চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় আসেন এবং তখন তিনি ইন্ডিকা গ্রন্থটি রচনা করেন। তিনি সেখানে সপ্তজাতি তত্ত্ব বা 7 টি জাতির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো - দার্শনিক,কৃষক পশুপালক ও শিকারি, শিল্পী ও কারিগর, গুপ্তচর বা পরিদর্শক মন্ত্রণাদাতা এবং সৈনিক।
মৌর্য পরবর্তী যুগঃ মৌর্য পরবর্তী যুগের সাতটি জাতির সঙ্গে সঙ্গে আরও নানা বিদেশি অনার্য জাতির প্রবেশ ঘটেছিল মৌর্য পরবর্তী যুগের সমাজে ব্রাহ্মণদের স্থান সবচেয়ে উঁচু ছিল। মৌর্য পরবর্তী যুগের যবন বা ব্যাকট্রিয়,শক, হ্নন, কুশান প্রভৃতির জাতি প্রবেশ করেছিল। তারা মূলত প্রতীত ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত ছিল।
গুপ্ত যুগে জাতিপ্রথাঃ গুপ্ত যুগের জাতিভেদপ্রথা মৌর্য পরবর্তী যুগের মতো হয়েছিল। তবে গুপ্ত যুগে সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রতিপত্তি আরও বৃদ্ধি পায়।
গুপ্ত পরবর্তী যুগঃ মৌর্য পরবর্তী যুগে ভারতে আগমনকারী বিভিন্ন অনার্য জাতিগুলি,যেমন -যবন,শক, হুন, কুশান জাতিগুলি ভারতের তাদের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়। এবং তারা বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিজেদের বিভিন্ন সংস্কৃতির এদেশে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। তারা ভারতীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ফলে ভারতে মিশ্র জাতির উদ্ভব ঘটে।।