![]() |
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ( wb class 11 history question answer chapter 6 ) " সমাজের ঘটনা প্রবাহ " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে পার্থক্য " সম্পর্কে বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য " বর্ণ বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে পার্থক্য " সম্পর্কে নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।।
বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণ প্রথা কী? বর্ণ প্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে পার্থক্য লেখ
বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণ প্রথা কী?
উওরঃ ভারতে বৈদিক যুগে আর্যদের বসতিএ প্রসার ঘটলে,গৌরবর্ণ আর্যরা এদেশের কৃষ্ণবর্ণ অনার্যদের থেকে নিজেদের পৃথক রাখার প্রয়োজনীয়তা, এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ কর্মের জন্য শ্রম বিভাজনের প্রয়োজনীয়তায় আর্যরা সমাজব্যবস্থাকে যে চারটি পৃথক বর্ণে আলাদা করে রেখেছিল, তাই হল বর্ণপ্রথা। এই বর্ণ প্রথা অনুসারে সমাজব্যবস্থা তখন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য এবং ক্ষুদ্র - এই চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল।।
বর্ণ প্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে পার্থক্যঃ-
ভূমিকাঃ প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগে শুরু হওয়া বর্ণপ্রথা এবং জাতিভেদ প্রথা হলো দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ধারণা বা সমাজব্যবস্থা। ভারতে মূলত বৈদিক যুগে যখন আর্যদের বিস্তার ঘটতে শুরু করে, তখন বর্ণপ্রথার সৃষ্টি হয়েছিল। বর্ণপ্রথা সৃষ্টির পরেই জাতিভেদ প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের সেই বর্ণপ্রথা এবং জাতিভেদ প্রথার মধ্যে আমরা একাধিক ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারি। যেমন -
বর্ণ ও জাতি প্রথার উদ্ভবের সময়ঃ
• ভারতে বর্ণ প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল মূলত বৈদিক যুগে যখন ভারতে আর্যদের বিস্তার করতে শুরু করে, তখন আর্যরা নিজেদের প্রয়োজনেই বনলতা সৃষ্টি করে।
• বৈদিক যুগে ভারতে বর্ণ প্রথা সৃষ্টির পড়ে নানা কারণে ভারতের জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটেছিল।
নতুন বর্ণ ও জাতির উদ্ভবঃ
• বৈদিক যুগে চতুর্বর্ণ প্রথার যে চারটি বর্ণ ছিল অর্থাৎ,- ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র,তা পরবর্তী কালে পরবর্তী বৈদিক যুগেও চতুর্বর্ণ প্রথায় সেই চারটি বর্ণের ই অস্তিত্ব ছিল।
• বৈদিক যুগের জাতিভেদ প্রথায় যে সমস্ত জাতির অস্তিত্ব ছিল,তার পরবর্তী বৈদিক যুগে এবং মৌর্য পরবর্তী যুগে জাতিভেদ প্রথায় অন্যান্য জাতির সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল।
অস্পৃশ্যতার অস্তিত্বঃ
• বর্ণপ্রথায় যে চারটি বর্ণের অস্তিত্ব ছিল অর্থাৎ, ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র - এই চারটি বর্ণ ছিল সমাজে স্বাধীন এবং মুক্ত। বর্ণপ্রথায় কোনো অস্পৃশ্যতা বর্ণের অস্তিত্ব ছিল না।
• কিন্তু অপরদিকে জাতিভেদ প্রথার আমরা অস্পৃশ্যতার উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারি। জাতিভেদ প্রথায় যে প্রধান চারটি জাতি ছিল, অর্থাৎ- ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র -এই জাতি ছাড়াও পরবর্তী বৈদিক যুগে জাতিভেদ প্রথা দুটি অস্পৃশ্য জাতির অস্তিত্ব ছিল। তারা ছিল ব্রাত্য ও নিষদ, যারা সমাজের পতিত ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত ছিল।।
গঠন শক্তিঃ
• বর্ণ প্রথার মূল গঠন শক্তি ছিল ধর্ম। বর্ণ প্রথার গঠন শক্তি হিসেবে বংশানুক্রমিতা গৌণ ছিল।
• প্রথম পর্যায়ে জাতির মূল গঠনশক্তি ধর্ম হলেও, পরবর্তীতে বংশানুক্রমিতাই জাতির প্রধান গঠনশক্তি হয়ে পড়ে।
বর্ণ ও জাতি প্রথার উৎপত্তির কারণঃ
• প্রথমদিকে বর্ণপ্রথার উত্পত্তি হয়েছিল মূলত আর্যদেরহপেশা বা বৃত্তির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু যদিও পরবর্তীকালে এই বিষয়টি মূখ্য ছিল না।
• অন্যদিকে, হার্বাট রিজলের মত ভারতের জাতিভেদ প্রথার উৎপত্তি পেছনে নানা কারণ রয়েছে। একাধিক উপাদান ভারতে জাতিভেদ প্রথার উৎপত্তিতে সাহায্য করেছিল।।
মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভবঃ
• ভারতে যে চতুর্থ বর্ণ প্রথা প্রচলিত ছিল, তার মাধ্যমে ভারতে কোনো প্রকার মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেনি।
• কিন্তু গুপ্ত পরবর্তী যুগের জাতি প্রথার মাধ্যমে একাধিক বহিরাগত অনার্যদের ভারতে প্রবেশ এবং ভারতীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ফলে ভারতে মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছিল।।
অস্তিত্বঃ
• হিন্দুসমাজে বর্ণ হল একটি ধারাণাগত কাঠামাে মাত্র। বর্ণপ্রথার বাস্তব অস্তিত্ব সেরকমভাবেও মজবুত নয়। বর্ণপ্রথা হলো একটি মানসিক ও সামাজিক ধারণা, যার মাধ্যমে সমাজ বিভক্ত হয়ে রয়েছে।
• অন্যদিকে জাতি হল একটি বৃত্তি বা পেশাবাচক ধারণা। বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশার জনগােষ্ঠী নিয়ে জাতি গড়ে ওঠে। জাতি হল হিন্দুসমাজের বাস্তব অবস্থার পরিচয়। তাই জাতির অস্তিত্ব নিয়ে কোনাে সন্দেহের অবকাশ নেই।