প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীধন সম্পর্কে আলোচনা করো। || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর

0

প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীধন সম্পর্কে আলোচনা করো। || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর 

WB Class XI History Question Answer & Notes | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ( wb class 11 history question answer chapter 6 ) " সমাজের ঘটনা প্রবাহ " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীধন সম্পর্কে " বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য "প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীধন সম্পর্কে আলোচনা করো।" নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।। 

প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীধন সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকাঃ মনু এবং অন্যান্য কিছু শাস্ত্রকার নারীকে বাল্যকালে পিতৃগৃহে যৌবনে বা বিয়ের পর স্বামীর গৃহে এবং বার্ধক্য অবস্থায় পুত্রের অধীনে থাকার কথা বলেছেন। এরূপ অবস্থায় নারীর সামাজিক অবস্থান কীরুপ ছিল তা বলা মুশকিল। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারীর কর্তৃত্ব তার গৃহেই। এরুপ পরিস্থিতিতে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার কতটা তা বলা মুশকিল। কিন্তু এরূপ পরিস্থিতিতেও নারী কিছু অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতো। এবং নারীর সেই অর্থনৈতিক অধিকার ছিল তার স্ত্রী ধন। খুব সংক্ষেপে স্ত্রীধন বলতে বোঝায় নারীর নিজস্ব সম্পত্তি। নারীর এই সম্পত্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। 

মনুসংহিতা এবং যাগ্যবল্ক্যস্মৃতিতে উল্লেখিত স্ত্রীধনঃ 

স্মৃতিশাস্ত্র এবং যাগ্যবল্ক্যস্মৃতিতে বিভিন্ন ছয় প্রকার স্ত্রীধন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন -

• অধ্যগ্নি 

• অধ্যবাহনিক

• প্রীতিদত্ত 

• পিতৃদও 

• মাতৃদত্ত

• ভাত্রীদত্ত

অধ্যগ্নিঃ অধ্যগ্নি বলতেন সেই প্রকাশ স্ত্রীধনকে বোঝায়, যা সেই নারীর বিবাহের সময় অগ্নিকে সাক্ষী রেখে তাকে উপহার দেওয়া হয়। 

অধ্যবাহনিকঃ বিবাহের পর যখন কন্যা তার স্বামীর গৃহে যাত্রা করে, তখন তাকে যে সমস্ত সম্পদ প্রদান করা হয়, তাকে বলা হয় অধ্যবাহনিক।

প্রীতিদত্তঃ বিবাহের সময় বা বিবাহের আগে তার কন্যা তার আত্মীয়স্বজন বা পরিজনদের কাছ থেকে যে সমস্ত সম্পদ উপহার হিসেবে পেত, তাকে বলা হয় অথবা প্রীতিদত্ত।

পিতৃদত্তঃ কন্যা তার পিতার কাছ থেকে যে সমস্ত সম্পত্তি বা উপহার লাভ করতো তাহল, পিতৃদত্ত।


মাতৃদত্তঃ কন্যা তার মায়ের মাধ্যমে যে সমস্ত সম্পত্তি লাভ করতো,তাহল মাতৃদত্ত। এক্ষেত্রে কন্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের কাছ থেকে গয়না ও পোশাক-আশাক পেত। 

ভ্রাতৃদওঃ কন্যা যখন তার ভ্রাতা অর্থাৎ দাদা বা ভাইয়ের কাছ থেকে যে সমস্ত সম্পত্তি লাভ করতো, তাহল ভ্রাতৃদও।।

কাত্যায়নস্মৃতিতে উল্লেখিত স্ত্রীধনঃ 

উপরোক্ত কিছু স্ত্রীধন ছাড়াও কাত্যায়নস্মৃতিতে আরো কয়েকটি স্ত্রীধন এর উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলো হলো - 

• কুমারী অবস্থায় নারী যে সমস্ত উপহার পেত,তাকে বলা হত সৌদায়িল স্ত্রীধন। 

• অন্যদিকে পিতা-মাতা, স্বামী ও আত্মীয়দের কাছ থেকে নারীর যে সমস্ত উপহার পেতে তাকে বলা হতো অন্বাধেয়।

• এবং বিবাহের সময় পাত্র পক্ষ কর্তৃক কন্যাকে যে সমস্ত উপর দেওয়া হতো তাহলে শুল্ক স্ত্রীধন।।

অর্থশাস্ত্রে উল্লেখিত স্ত্রীধনঃ কৌটিল্যের রচিত অর্থ শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীধনের কথা বলা হয়েছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে' মূলত চার প্রকার স্ত্রীধন এর কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো - • শুল্ক 

• অধিবেদনিক।

• অন্বাধেয়

• বন্ধুদও

সীমাবদ্ধতাঃ এতো প্রকার স্ত্রীধনের ওপর নারীর অধিকার থাকলেও নারী ঠিক কত পরিমাণ স্ত্রীধন নিজের কাছে রাখতে পারবেন সেই নিয়ে নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।। কাত্যায়মস্মৃতি এবং অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে নারী শুধু মাত্র 2000 রৌপমুদ্রা নিজের কাছে রাখতে পারবেন। কারণ স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর প্রাপ্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিকে স্ত্রীধন হিসেবে মেনে নিলেও, তিনি নিজের নারীর নিজের উপার্জিত অর্থকে স্ত্রীধন হিসেবে মেনে নেননি। পারিবারিক সম্পত্তিতেও নারীর অধিকার ছিল না।।

• স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার না থাকলেও স্ত্রীধনের উপর স্বামীর কিছু কিছু অধিকার ছিল। স্ত্রী যথেচ্ছভাবে নিজের সম্পত্তি দান করতে চাইলে স্বামীকে তাকে অস্বীকার করতে পারতেন। 

• স্বামীর প্রয়োজনের সময় স্ত্রীর সম্পত্তি গ্রহণ ও বিক্রি করতে পারতো।

• এছাড়াও স্ত্রীর কাছে যদি 2000 পনের বেশি স্ত্রীধন জমে থাকে, তাহলে সেই অতিরিক্ত অর্থ স্বামীর হেফাজতে রক্ষিত হতো। 


স্ত্রীধনের উত্তরাধিকারঃ স্ত্রীর কাছে যে পরিমাণ স্ত্রীধন থাকতো স্বাভাবিকভাবেই সেই স্ত্রীধনের বা সম্পত্তির কেউ-না-কেউ উত্তরাধিকার হতো।

• যাগ্যবল্ক উল্লেখ করেছেন যে স্ত্রীধনের উপর পিতা, স্বামী বা পূত্রের কোনো অধিকার ছিল না। 

• নারদস্মৃতিতে বলা হয়েছে স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। 

• কাত্যায়ন স্মৃতিতে বলা হয়েছে যে স্ত্রীর যদি স্ত্রী যদি কোনো কন্যা সন্তান না থাকে তাহলে মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে তার পুত্র। এবং স্ত্রীর যদি কোনো সন্তান না থাকে তাহলে সেই স্ত্রীধনের উত্তরাধিকারী হবে তার স্বামী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে, প্রাচীনকালে যখন নারীরা সমাজে নানাভাবে তাদের অধিকার হারিয়েছিল বা তাদের অধিকার নানাভাবে সংকুচিত হয়েছিল, তখন তাদের বিধিবদ্ধ অর্থনৈতিক অধিকার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। সমাজের উচ্চ স্তরের নারীরা যে সমস্ত অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতো সমাজের নিম্ন স্তরের নারীর যে সেই অধিকার ভোগ করতে পারত না?এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।।


Tags : WB Class XI History Question Answer & Notes | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | WB Class 11 History Question Answer & Notes | Class 11 History 8 Mark Question Answer | wb Class 11 History Notes | WB Class 11 History Suggestion 2022 | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস 2022 | wb class 11 history question answer & suggestion 2022


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top