প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো। || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর
![]() |
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ( wb class 11 history question answer chapter 6 ) " সমাজের ঘটনা প্রবাহ " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য " প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো। " নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।।
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ প্রাচীন যুগে অর্থাৎ ঋকবৈদিক যুগ,পরবর্তী বৈদিক যুগ, মৌর্য ও মৌর্য পরবর্তী যুগ এবং গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে একেক সময়ে নারীদের গার্হস্থ্য জীবন একেক রকমের ছিল। কোনো কোনো যুগে নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, প্রশাসনিক কাজে অংশগ্রহণ, ধর্মচর্চা সাহিত্যচর্চা,অন্দরমহলে গার্হস্থ্য জীবন পরিচালনা ইত্যাদি করার সুযোগ পেত আবার কখনো তারা অনেক কিছুই করার অধিকার পেত না।। যেমন -
ঋক বৈদিক যুগঃ ঋক বৈদিক যুগে নারীরা পরিবারের গার্হস্থ্য কর্ম পরিচালনায় একাধিপত্য ভোগ করতেন।
• ঋক বৈদিক যুগে মূলত নারীরাই পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব সামলাতেন।
• তাদের বিভিন্ন রকম কাজ করতে হতো। পরিবারের সকলের সদস্যের নানা রকম ভাবে দেখাশোনা করতে হতো।
• তিনবেলা গৃহদেবতার পুজো করা, ব্রত উদযাপন,উপবাস প্রকৃতি কাজগুলি মূলত নারীকেই করতে হতো।
• নারীকে সবসময়ই তার স্বামী বা শ্বশুর-শাশুড়ির নির্দেশ মেনে যাবতীয় কাজ কর্ম করতে হতো। এবং তাদের সেবায় নিজেকে সবর্দা ব্যস্ত রাখতে হতো।
• বিশেষ প্রয়োজনে স্বামী যদি বাইরে থাকতেন, তাহলে স্ত্রীকে সংযত জীবন যাপন করতে হতো।
পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবনঃ ঋক বৈদিক যুগে নারীর গার্হস্থ্য জীবন যেরকম ছিল, পরবর্তী বৈদিক যুগেও নারীদের গার্হস্থ্য জীবন মোটামুটি ভাবে সেরকমই ছিল।।কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীদের সামাজিক মর্যাদা কিছুটা কমে গিয়েছিল এবং তার প্রভাব পড়েছিল নারীদের পারিবারিক ও গার্হস্থ্য জীবনে।
• পরবর্তী বৈদিক যুগের কিছু রচনার মধ্যে নারীদের সম্পর্কে নানা অসম্মানজনক কথা বলা হয়েছে। যেমন ঐতরেয় ব্রাহ্মণ - এ কন্যাকে পরিবারের পিতা-মাতার দুঃখের উৎস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে মৈত্রায়ণী সংহিতায় নারী, সুরা ও পাষাকে একই পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে।
• বৌদ্ধায়ান ধর্মসূত্রে নারীর স্বাধীন সত্তাকে অস্বীকার করে বলা হয়েছে, নারী বাল্যকালে পিতার অধীনে,যৌবনে স্বামীর অধীনে এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকবে। বৌদ্ধায়ান ধর্মসূত্রে এও বলা হয়েছে যে,,বন্ধা স্ত্রীকে বিবাহের ১০ বছর পর এবং কেবলমাত্র কন্যা সন্তানের জন্মদাত্রী স্ত্রীকে বিবাহের ১২ বছরের মধ্যে পরীত্যাগ করা যাবে। অর্থাৎ পরবর্তী বৈদিক যুগে আমরা গার্হস্থ্য জীবনে নারীদের কোনো স্বাধীনতা লক্ষ্য করতে পারিনা।।
• মহাভারতের বনপর্ব বলা হয়েছে যে,, যোজ্ঞানুষ্ঠান, শ্রদ্ধানুষ্ঠান, পূজা অথবা উপবাসের মাধ্যমে নয় শুধুমাত্র স্বামীর সেব করার মাধ্যমেই নারীরা স্বর্গলাভ করতে পারে। অর্থাৎ পরবর্তী বৈদিক যুগে আমরা নারীরা গার্হস্থ্য জীবনের নান অধিকার যে হারিয়ে ফেলেছিলেন, তা লক্ষ্য করতে পারি।
মৌর্য এবং মৌর্য পরবর্তী যুগের নারীদের গার্হস্থ্য জীবনঃ মৌর্য যুগ এবং মৌর্য পরবর্তী যুগের নারীদের সামাজিক মর্যাদা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় তার প্রভাব তাদের গার্হস্থ্য জীবনেও পড়েছিল।
• মৌর্য যুগে নারীরা গার্হস্থ্য কাজকর্ম পরিচালনার পাশাপাশি নিত্য, সঙ্গীত হস্তশিল্পকর্ম,, প্রভৃতির চর্চা করতেন।
• অতিথিদের সেবা-যত্ন করাই নারীর প্রধান কর্তব্য ছিল।
• মৌর্য যুগের এবং মৌর্য পরবর্তী যুগের গৃহকর্মের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা স্বামীর সঙ্গে বসে যজ্ঞানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারতেন তবে পারিবারিক জীবনে নারীর অবস্থান নির্ধারণ করতে গিয়ে শাস্ত্রকার মনু বৌদ্ধায়ান ধর্মসূত্রে বাল্যকালে নারীকে পিতা এবং বিয়ের পর স্বামী এবং বার্ধক্যে পূত্রের অধীন বলে অভিহিত করেছেন।
• মৌর্য পরবর্তী যুগের নারীকে গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সংসারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করা,স্বামী শ্বশুর-শাশুড়ি এবং নিজের সন্তানের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি কাজ করতে হতো।
গুপ্ত যুগে নারীদের গার্হস্থ্য জীবনঃ
• গুপ্ত যুগে নারীদের কাজকর্ম মূলত গৃহস্থের অন্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। গুপ্তযুগের লেখক কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম নাটকে শকুন্তলার মাধ্যমে গুপ্ত যুগের নারীদের গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।
• বাৎসায়ন উল্লেখ করেছেন যে গুপ্ত যুগের নারীদের মূলত তার পরিবারের বিভিন্ন রকম কাজকর্ম করা, গবাদিপশুর দেখাশোনা করা, গুরুজনের সেবা করা,অতিথিদের আপ্যায়ন করা, সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় কাজকর্ম গুলোই করতে হতো।
• এছাড়াও প্রতিদিনের সাংসারিক খরচের হিসাব রাখার জন্য নারীর মধ্যে গণিতের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন হলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুপ্ত পরবর্তী যুগে নারীদের গার্হস্থ্য জীবনঃ
গুপ্ত যুগের পর ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন গুপ্ত পরবর্তী যুগে মোটামুটি ভাবে একই ছিল। কিন্তু এই যুগে নারীদের গার্হস্থ্য জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আসে।
• বিভিন্ন শাস্ত্রকারদের সামাজিক বাধা নিষেধের ফলে গুপ্ত পরবর্তী যুগে নারীদের জীবন গৃহ বা অন্দরমহলে আরো বেশি করে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
• গুপ্ত পরবর্তী যুগে নারীদের প্রধান কাজ কর্মের মধ্যে ছিল পরিবার বা সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম করা, স্বামী শ্বশুর-শাশুড়ি এবং সন্তানের দেখাশোনা করা হয় বা গুরুজনের সেবা করা।
• গুপ্ত পরবর্তী যুগে নারীদের আরেকটি প্রধান কাজ ছিল সংসার কল্যাণের জন্য উপোস,পূজা এবং ধর্মপালন করা।।