চর্যাপদ- কে, কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেছিলেন? চর্যাপদ-এ সমকালীন সমাজজীবনের কীরূপ পরিচয় পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো। || ক্লাস 11 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস চর্যাপদের বড় প্রশ্ন উত্তর
![]() |
ক্লাস 11 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 'চর্যাপদের' বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগে আমরা একাদশ শ্রেণির বাংলা ( wb class 11 Bengali ) " সাহিত্যের ইতিহাসের প্রাচীন যুগ থেকে " একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, চর্যাপদ কে, কবে,কোথা থেকে আবিষ্কার করেন? এবং চর্যাপদের সমকালীন সমাজ জীবনের কিরূপ পরিচয় পাওয়া যায়? " তার উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। ক্লাস 11 সাহিত্যের ইতিহাসের প্রাচীন যুগ অর্থাৎ চর্যাপদ থেকে " চর্যাপদ- কে, কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেছিলেন? চর্যাপদ-এ সমকালীন সমাজজীবনের কীরূপ পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা " প্রশ্নটি তোমাদের সামনের 2023 সালের পরিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই আজকের এই ব্লগটি মন দিয়ে পড়ো।
চর্যাপদ- কে, কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেছিলেন? চর্যাপদ-এ সমকালীন সমাজজীবনের কীরূপ পরিচয় পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো।
উওরঃ শ্রী মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়, ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কার করেছিলেন। চর্যাপদ হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। চর্যাপদ আবিষ্কার করেছিলেন ২৪ জন বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক। চর্যাপদে রয়েছে মোট ৫১ টি খন্ড। এই ৫১ টি খন্ডে ফুটে ওঠেছে প্রাচীন গ্রাম বাংলার নানা চিত্র। যেমন -
বর্ণভেদপ্রথাঃ প্রাচীন গ্রাম বাংলায় যে বর্ণভেদপ্রথা প্রচলিত ছিল, তা আমরা চর্যাপদের পদগুলি থেকে জানতে পারি। চর্যাপদের পদগুলিতে আমরা সমাজের নিম্নস্তরের মানুষদের সম্পর্কে জানতে পারি। যেমন- নিম্নবর্গীয় ডোম-শবরদের মতো মানুষ সাধারণ জনবসতি থেকে দূরে বাস করত। উচ্চবর্ণের মানুষেরা এইসব নিম্নবর্ণের মানুষদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করতো ইত্যাদি।।
জীবিকাঃ চর্যাপদে প্রাচীন বাংলার সমাজের বিভিন্ন স্তরে বসবাসকারী মানুষের জীবন জীবিকা সম্পর্কে জানতে পারি।। প্রাচীন গ্রামবাংলার সমাজে যে সমস্ত জাতি বসবাস করতো, যেমন তাঁতি, মাঝি, শিকারি জেলে,প্রভৃতি জাতিত নজীবিকা সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়। চর্যাপদে বাংলার মানুষের যে কয়েকটি প্রধান জীবিকার উল্লেখ আছে, তা হলো - তাঁত বোনা, চাঙ্গারি তৈরি করা, পশুশিকার করা, নৌকা বাওয়া, মাছ ধরা, মদ তৈরি ও বিক্রি করা, জঙ্গলের গাছ কাটা প্রভৃতি।
খাদ্যঃ প্রাচীন গ্রামবাংলায় সমাজে কী ধরনের খাদ্য প্রচলিত ছিল, সেই সম্পর্কেও নানা তথ্য চর্যাপদে হয়েছে। চর্যাপদ এর উল্লেখ রয়েছে যে প্রাচীন গ্রামবাংলার মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। এবং অন্যান্য আহার্য বস্তু হিসেবে দুধ, মাছ ও মাংসের উল্লেখ পাওয়া যায় চর্যাপদে। এছাড়াও প্রাচীন গ্রাম বাংলার মানুষেরা পান, সুপারি এবং কর্পূর ইত্যাদিও যে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতো, সেকথাও চর্যাপদে রয়েছে।।
বিবাহরীতিঃ প্রাচীন গ্রামবাংলায় কী ধরনের বিবাহ রীতি প্রচলিত ছিল,সে কথা চর্যাপদ-এ রয়েছে। প্রাচীন বাংলায় বাজনা বাজিয়ে বরের বিবাহ করতে যাওয়া, যৌতুকপ্রথার প্রচলন ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে নাচ, গান ও অভিনয়ের যে প্রচলন ছিল, তার প্রমাণও পাওয়া যায়।
বিনোদনঃ বর্তমান কালের মত প্রাচীন গ্রামবাংলাও মানুষের অবসর সময়ে বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল, সে কথা চর্যাপদে রয়েছে। সেকালে মাদল, পটহ, ডমরু, বাঁশি, একতারা, বীণা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ছিল। অবসর বিনোদনের জন্য ‘নববল' বা দাবা খেলা হত আর কর্পূর সহযোগে পান খাওয়া ছিল বিশেষ বিনোদনের অংশ।
এছাড়াও চর্যাপদে উল্লেখ করা হয়েছে যে- প্রাচীন গ্রামবাংলায় চোর ডাকাতের উপদ্রব ছিল। এবং সেসব চোর ডাকাতের ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করাও কথাও চর্যাপদে উল্লেখ করা রয়েছে।।
তাই পরিশেষে বলা যায়,চর্যাপদ হলো-প্রাচীন গ্রাম বাংলার একটি আয়না বা দর্পণ। যেখানে সমাজের নানা তথ্য চিত্র ফুটে উঠেছে।।