মহাজনপদ কাকে বলে? ভারতের বিভিন্ন মহাজনপদ গুলি সম্পর্কে এবং মহাজনপদ গুলির বৈশিষ্ট্য লেখো।
![]() |
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের ( Class 11 history chapter questions and answers in bengali ) রাজনৈতিক বিবর্তন শাসনকার্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা অধ্যায়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "মহাজনপদ কাকে বলে? ভারতের বিভিন্ন মহাজনপদ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো এবং মহাজনপদ গুলির বৈশিষ্ট্য লেখো। " এর উত্তর ( Class 11 history questions and answers chapter 3 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
মহাজনপদ কাকে বলে? ভারতের বিভিন্ন মহাজনপদ গুলি সম্পর্কে এবং মহাজনপদ গুলির বৈশিষ্ট্য লেখো।
উওরঃ আনুমানিক ১৫০০ অব্দে বহিরাগত আর্যরা যখন ভারতে প্রবেশ করে তখন সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে তাদের বসতি গড়ে তোলায় যখন আর্যদের বিস্তার ঘটে, কয়েকটি আর্য পরিবার মিলে একটি গোত্র তৈরি হতো। আবার একটি গোত্র মিলে গড়ে উঠত এবং একটি গ্রাম। আবার কয়েকটি গ্রাম মিলে একটি বিশ এবং একাধিক বিশের সমন্বয়ে গড়ে উঠতো একটি জনপদ। পরবর্তীতে এই জনপদ গুলো নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকায় একটি জনপদের অপর একটি জনপদের দখলের ফলে একটি বৃহৎ আয়তন রাজ্যের উত্থান ঘটে। এভাবে একটি জনপদের সঙ্গে অপর একটি জনপদের সমন্বয়ের ফলে যে বৃহৎ আয়তন রাজ্যের সৃষ্টি হয়,,তাকেই বলা হতো মহাজনপদ।।
ভারতের বিভিন্ন জনপদঃ বৌদ্ধগ্রন্থ অঙ্গুত্তরনিকায়, জৈন গ্রন্থ ভগবতীসূত্র, হিন্দু পুরাণ প্রভৃতি থেকে এটা জানা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে কোনো ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীয় শক্তি ছিল না। কিন্তু এই সময়টাতে ভারতে ১৬ টি ছোট ছোট রাজ্য বা মহাজনপদের অস্তিত্ব ছিল। এবং সেই 16 টি মহাজনপদকে একত্রে ষোড়শ মহাজনপদ বলা হতো। আফগানিস্তানের কাবুলে থেকে দক্ষিণ ভারতের গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভারতের ১৬ টি মহাজনপদ অবস্থিত ছিল। ভারতের সেই ১৬ টি মহাজনপদ হলো -
• কাশী: বর্তমান উত্তরপ্রদেশের পূর্ব অংশে কাশী রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল বারাণসী।
• কোশল: এর অবস্থান ছিল বর্তমান অযোধ্যা। এর রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী।
• অঙ্গ : এর অবস্থান ছিল বর্তমান বিহারের দক্ষিণ পূর্বাংশে। অঙ্গের রাজধানী ছিল চম্পা।
• মগধ : মগধ বর্তমান বিহারের গয়া ও পাটনা জেলায় অবস্থিত ছিল। মগধের প্রথম রাজধানী ছিল গিরিব্রজ। পরে যথাক্রমে রাজগৃহ ও পাটলিপুত্রে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়।
• অবন্তি : বর্তমান মালব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে অবন্তি রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। এর উত্তরাংশের রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী ও দক্ষিণাংশের রাজধানী ছিল মহিস্মতী।
• বৎস: এর অবস্থান ছিল বর্তমান এলাহাবাদের নিকটবর্তী গঙ্গার দক্ষিণ তীরে। এর রাজধানী ছিল কৌশাম্বী।
• বৃজি : এর অবস্থান ছিল বর্তমান উত্তর বিহারে বা বৈশালীতে। এর রাজধানী ছিল বৈশালী।
• মল্ল : এর অবস্থান ছিল বর্তমান উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলায় এর রাজধানী ছিল কুশিনগর বা পাবা।
• কুরু : বর্তমান দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কুরু রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ।
• পাঞ্চাল : এর অবস্থান ছিল বর্তমান রোহিলখণ্ড। উত্তর পাঞ্চালের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র এবং দক্ষিণ পাঞ্চালের রাজধানী ছিল কাম্পিল্য।
• চেদি : এর অবস্থান ছিল বর্তমান বুন্দেলখণ্ড ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। এর রাজধানী ছিল শুকতিমতী।
• মৎস্য : এর অবস্থান ছিল বর্তমান রাজস্থানের জয়পুরে। এর রাজধানী ছিল বিরাটনগর।
• শূরসেন : এর অবস্থান ছিল যমুনা নদীর তীরে মথুরা অঞ্চলে। এর রাজধানী ছিল মথুরা।
• অস্মক : এর অবস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতের বর্তমান গোদাবরীর উপত্যকা অঞ্চলে বা পাটলিতে। অস্মকের রাজধানী ছিল পোটালি বা পোটান।
• গান্ধার : এর অবস্থান ছিল বর্তমান রাওয়ালপিন্ডি বা তক্ষশিলা ও কাশ্মীর উপত্যকায়। এর রাজধানী ছিল তক্ষশিলা।
• কম্বোজ : এর অবস্থান ছিল বর্তমান দক্ষিণ-পশ্চিম কাশ্মীরে। এর রাজধানী ছিল রাজপুর।
ভারতের মহাজনপদ গুলির বৈশিষ্ট্যঃ
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে গড়ে ওঠা এই ১৬ টি মহাজনপদের একরকম বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন-
গঠনঃ মনে করা হয় যে মহাজনপদ গুলির মূলত জনপদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। একটি জনপদের সঙ্গে অপর একটি জনপদের সংঘর্ষের ফলে একটি জনপদ যখন অন্য জনপদের ওপর বিজয় লাভ করতো,তখন একটি একাধিক জনপদের সমন্বয় মহাজনপদ গড়ে উঠতো।
শাসন ব্যবস্থাঃ ভারতে যে ১৬ টি মহাজনপদের অস্তিত্ব ছিল, সেই ১৬ টির মধ্যে ১৪ টি মহাজনপদের শাসন ব্যবস্থা ছিল মূলত রাজনৈতিক। কিন্তু বৃজি ও মল্য নামক যে দুটি মহাজনপদ ছিল, সেখানকার শাসন ব্যবস্থা ছিল মূলত প্রজাতান্ত্রিক।।
নিজেদের মধ্যে অবিরাম সংঘর্ষঃ
প্রত্যেক মহাজনপদ গুলি নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য অপর কোনো এক মহাজনপদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময়ই সংঘর্ষ লাগিয়ে থাকতো। এই সংঘর্ষের দ্বারা শক্তিশালী মহাজনপদগুলি দুর্বল মহাজনপদকে দখল করে নিতে থাকে। ফলে একাধিক জনপদ সংযুক্ত হয়ে আরও বৃহৎ মহাজনপদের উত্থান ঘটে।
অবস্থান এবং মহাজনপদের শ্রেষ্ঠত্বঃ ভারতের ১৬ টি মহাজনপদের মধ্যে ১৫ টি মহাজনপদ উত্তর ভারতে অবস্থিত ছিল। শুধুমাত্র অস্মক নামক মহাজনপদটি দক্ষিণ ভারতের গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। ১৬ টি মহাজনপদের মধ্যে অবিরাম সংঘর্ষ এবং লড়াই লেগে থাকতো যার ফলে মহাজনপদ গুলির শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু অবন্তি, কোশল, বৎস ও মগধ নামক চারটি মহাজনপদের পরবর্তীতে শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য লাভ করে।। কিন্তু আরো পরবর্তীতে এই চারটি মহাজনপদ এর মধ্যে শুধুমাত্র মগধ নামক মহাজনপদটু শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে মগধের নেতৃত্বে উত্তর ভারতে একটি কেন্দ্রীয় শক্তি ও বিশাল সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রাজকীয় ঐক্যের যুগ বলে অভিহিত করেছেন।।
বৈদেশিক আক্রমণকারীকে সাহায্যঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহাজনপদ গুলির নিজের প্রতিবেশী মহাজনপদ গুলিকে শত্রু বলে মনে করতো। এবং নিজেদের মধ্যে অবিরাম সংঘর্ষ লেগে থাকায় যদি কোনো মহাজনপদের উপর কোনো বিদেশি শক্তি আক্রমন করতো,তাহলে তার প্রতিবেশী মহাজনপদ সেই বৈদেশিক আক্রমণকারীকে সাহায্য করতেও পিছপা হতো না। তারা প্রতিবেশী মহাজনপদের বিরুদ্ধে বৈদেশিক আক্রমণকারীকেও সহায়তা করতে প্রস্তুত ছিল।