একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | WB Class 11 History Question Answer & Notes
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় 'সমাজের ঘটনা প্রবাহ' (WB Class 11 history chapter 6 question answers in bengali) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন 'গ্রিসের স্পার্টায় হেলট বা ক্রীতদাসদের সামাজিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো'- এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।
স্পার্টার হেলট বা ক্রীতদাসদের সামাজিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো। || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
স্পার্টার সমাজে সর্বনিম্ন স্তরে থাকা হেলট বা ক্রীতদাসঃ সাধারণভাবে যাদে ক্রীতদাস বলা হয়, স্পার্টায় সেই ক্রীতদাসদের হেলট বলা হতো। স্পার্টায় হেলটরা ছিল সবচেয়ে নির্যাতিত ও শোষিত শ্রেণি। অন্যান্য সাম্রাজ্যের মত বা অন্যান্য সমাজের মতো স্পার্টার সমাজেও ক্রীতদাসদের অথবা হেলটদের কোনো প্রকারের অধিকার ছিল না। যার ফলে তারা সবসময়ই বিভিন্ন দিক থেকে নির্যাতিত এবং শোষিত হতো। ঐতিহাসিক অ্যান্ড্রুজ বলেছেন যে, স্পার্টার হেলটরা ছিল পুরোপুরি ক্রীতদাস। ডোরিয়ান বিজয়ের পূর্বেকার অধিবাসীদের বংশধর এই হেলটরা একদা দুর্দশার কবলে পড়ে দাসত্ব বরণে বাধ্য হয়েছিল। তারা সমাজের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হত।
হেলটদের প্রকৃত মালিক ছিল স্পার্টার কোনো স্বাধীন নাগরিক। সেই স্বাধীন নাগরিক তার অন্তর্গত হেলট অথবা ক্রীতদাসদের যেমনভাবে ইচ্ছা তেমন ভাবে পরিচালিত করতো। এবং সেই প্রভুর ব স্বাধীন নাগরিক নিজের অন্তর্গত ক্রীতদাসদের দিয়ে সমস্ত রকমের কাজ করিয়ে নিতো। হীরা কোন প্রভুর হয়ে কাজ করার বদলে হেলটদের কোন রকম অর্থ প্রদান করা হতো না। তার বদলে শুধুমাত্র প্রভুর কাছ থেকে সামান্য পরিমাণ খাবার এবং জীবন যাপনের জন্য কিছু জামাকাপড় পেত।।
স্পার্টার ক্রীতদাসদের কী কী ধরনের কাজকর্ম করতে হতো?
অন্যান্য সাম্রাজ্যের মতো স্পার্টায়ও হেলটদের বিভিন্ন রকম কাজকর্মে নিয়োগ করা হতো। যেমন -
• স্পার্টায় যে সমস্ত ক্রীতদাস অথবা হেলট ছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশকেই স্বাধীন নাগরিকদের কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ করা হতো। অর্থাৎ চাষবাস ছিল তাদের প্রধান কাজ।
• সৈনিকঃ স্পার্টার সেনাবাহিনীতেও ট্রেনিং প্রাপ্ত বহু হেলট ছিল বলে জেনোফোন জানিয়েছেন। স্পার্টার সুদক্ষ স্থলবাহিনী গঠিত হয়েছিল মূলত হেলটদের দ্বারাই।
• রাষ্ট্রীয় কাজঃ রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে হেলটদের নিযুক্ত করা হত বলে ঐতিহাসিক টড উল্লেখ করেছেন।
• রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণঃ পরবর্তীকালে স্পার্টায় স্বাধীন নাগরিকের সংখ্যা কমতে থাকলে হেলটরাই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। তবে তারা কোনো উচ্চপদ লাভ করতে পারত না।
স্পার্টার নাগরিকদের সঙ্গে হেলটদের সম্পর্কঃ
স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের সঙ্গে হেলটদের সম্পর্ক মোটেই মধুর ছিল না। হেলটরা ছিল স্পার্টার সর্বাপেক্ষা নির্যাতিত শ্রেণি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা অনুমান করতে পারি যে, স্পার্টার সমাজে স্প্যার্টিয়েটদের সঙ্গে হেলটদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল না। হেলটদের জীবন ছিল পেরিকয়দের থেকেও খারাপ। কারণ পেরিকয়দের সমাজে কিছু অধিকার ছিল। এবং স্প্যার্টিয়েটদের এর সঙ্গে স্প্যার্টিয়েটদের মোটামুটি সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু হেলটদের কোনো প্রকারেরই অধিকার ছিল না।।
হত্যালীলাঃ হেলটদের সর্বদা আতঙ্কে ও পদানত করে রাখার উদ্দেশ্যে স্পার্টানরা (স্প্যাটিয়েট) মাঝেমধ্যেই নির্বিচারে হেলটদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালাত। রাতের অন্ধকারে স্পার্টার গোপন পুলিশবাহিনী নির্বিচারে হেলটদের হত্যা করত বলে অ্যারিস্টট্ল উল্লেখ করেছেন। স্পার্টার ম্যাজিস্ট্রেটরা হেলটদের বিরুদ্ধে বাৎসরিক যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের বিনাশ করত।
সৈনিক হেলটদের ওপর নজরদারিঃ
স্পার্টার সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে নিযুক্ত হেলটদের সামরিক শিবিরে সর্বদা নিরস্ত্র করে রাখা হত এবং তাদের রীতিমতো পাহারা দেওয়া হত।
মার্শাল লঃ হেলটদের বিদ্রোহ অঙ্কুরে বিনাশ করার জন্য ইফর নামে স্পার্টার উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মার্শাল ল' জারি করতেন। সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে হেলটরা মাঝেমধ্যেই বিদ্রোহের পথে পা বাড়াত। অবশেষে ৪৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি বড়ো ধরনের হেলট বিদ্রোহের ফলেই স্পার্টার পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।