আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর ভারতীয় দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় অধ্যায় 'চার্বাক দর্শন'(charvak darshan) (WB Class 11 Philosophy Questions and Answers 2024 ) থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ"-এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে চার্বাকগণ কী কী যুক্তি দিয়েছেন?" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
"প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ"-এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে চার্বাকগণ কী কী যুক্তি দিয়েছেন?
ভূমিকাঃ ভারতীয় দর্শনে প্রমা বলতে বোঝায় যথার্থ অথবা প্রকৃত জ্ঞান। এবং জ্ঞান লাভের যে সমস্ত পদ্ধতি রয়েছে, সেই জ্ঞান লাভের পদ্ধতিকে বলা হয় প্রমাণ। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন প্রকার প্রমাণ স্বীকৃত। যেমন- প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ, অর্থাপত্তি এবং অনুপলব্ধি। ভারতীয় দর্শনের নাস্তিক সম্প্রদায়ের একটি বিভাগ - চার্বাক দর্শন বা চার্বাক বাদীরা অনুমান, উপমান, শব্দ, অর্থাপত্তি এবং অনুপলব্ধিকে যথার্থ অথবা প্রকৃত জ্ঞান লাভের প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করেন না। চার্বাকদের মতে একমাত্র প্রত্যক্ষই হলো প্রমাণ।। চার্বাক দার্শনিকগণদের প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ বলার ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন যুক্তি দেখান। যেমন-
"প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ"-এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে চার্বাকগণদের যুক্তি -
প্রথমতঃ প্রত্যক্ষ' বলতে চার্বাকরা ইন্দ্রিয়কেই বুঝিয়ে থাকেন। ইন্দ্রিয়ই প্রত্যক্ষ এবং প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। আমরা আমাদের চক্ষু, কর্ণ প্রভৃতি ইন্দ্রিয় দিয়ে যা জানি, তাতে আমরা কোনোরকম সংশয় পোষণ করি না বলেই প্রত্যক্ষের দ্বারা যে জ্ঞান লাভ হয়,তা নিঃসন্দিগ্ধ ও যথার্থ। অনুমান ও শব্দের মাধ্যমে আমরা যে জানলাভ করি, তা সন্দেহমুক্ত নয়।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে ক্লিক করো
দ্বিতীয়তঃ চার্বাকদের দ্বিতীয় মত হল, আমরা আমাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস প্রত্যক্ষ করি । এবং এই প্রত্যক্ষই হল সকল প্রমাণের মুল প্রমাণ। ভারতীয় দর্শনে অন্য যে সমস্ত প্রমাণের কথা বলা হয় অর্থাৎ অনুমান, শব্দ ইত্যাদি, সেই সমস্ত প্রমাণগুলি প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই গড়ে। ওঠে কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণ অন্য কোনো প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না। সেই কারণেই প্রত্যক্ষ প্রমাণ হলো শ্রেষ্ঠ প্রমান।।
তৃতীয়তঃ চার্বাকদের মতে জ্ঞান হবে সংশয়মুক্ত, জ্ঞান হবে সত্য এবং জ্ঞান হবে এমন কিছু যা পূর্বে জানা নেই। চার্বাক দার্শনিকদের মতে জ্ঞানের এই তিন প্রকার বৈশিষ্ট্য একমাত্র প্রত্যক্ষ প্রমাণেই রয়েছে। সেই কারণেই প্রত্যক্ষই হলো একমাত্র এবং শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।
চতুর্থতঃ চার্বাকরা সবসময়ই সংশয় মুক্ত প্রত্যক্ষের একমাত্র প্রমাণ বলেছেন। কিন্তু অনেক সময় আমাদের প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রেও ভ্রান্তি ঘটে। অনেক সময় ইন্দ্রিয়ের দোষ, আলোকের অভাব প্রভৃতি কারণে প্রত্যক্ষে ভ্রান্তি ঘটার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- অনেকসময় আমরা দড়িকে সাপ বলে ভুল করি। কাজেই ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের সম্ভাবনাকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু নির্দোষ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যে প্রত্যক্ষ জ্ঞান হয়, তা জ্ঞাতাকেবিভ্রান্ত করে না।
চার্বাকদের প্রত্যক্ষ প্রমাণ কে মেনে নেওয়ার বিপক্ষে কিছু যুক্তি বা চার্বাকদের প্রত্যক্ষ প্রমাণের সমালোচনাঃ
চার্বাক দার্শনিকরা প্রকৃত জ্ঞান বা যথার্থ জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রত্যক্ষকেই একমাত্র প্রমাণ হিসাবে স্বীকার করেছেন। কিন্তু চার্বাক দার্শনিকদের প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়টি নানা দিক থেকে সমালোচনা করা হয়। যেমন -
◆ চার্বাক দার্শনিকরা অতীত, বতর্মান এবং ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষকেই একমাত্র প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করেন। কিন্তু বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করে নিলেও, আমরা অতীতের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করে নিতে পারি না।
অতীত ও ভবিষ্যতের প্রত্যক্ষ জ্ঞান কে কখনোই প্রত্যক্ষ দ্বারা যাচাই করা যায় না। এজন্য আমাদের অনুমানের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু চার্বাকরা প্রত্যক্ষভাবে অনুমানকে স্বীকার করেন না। কিন্তু চার্বাকরা পরোক্ষভাবে অনুমানকে স্বীকার করে নেন।।
◆ চার্বাক মতে যেহেতু অনুমানলব্ধ জ্ঞান প্রত্যক্ষনির্ভর তাই সেই জ্ঞান পরোক্ষ। আর সেকারনেই অনুমানলব্ধ জ্ঞান যথার্থ ও সন্দেহমুক্ত নয়। কিন্তু চার্বাকদের প্রত্যক্ষ প্রমাণের ক্ষেত্রে জৈন দার্শনিকগণ বলেন যে, প্রত্যক্ষ জ্ঞানও ইন্দ্রিয়নির্ভর। তাই প্রত্যক্ষ জ্ঞানও পরোক্ষ। তাই, যদি অনুমানকে প্রত্যক্ষনির্ভর হওয়ার জন্য অযথার্থ বলা হয়, তাহলে প্রত্যক্ষকেও ইন্দ্রিয়নির্ভর হওয়ার জন্য অযথার্থ বলে গণ্য করতে হবে।
আমাদের গ্রুপে জয়েন করতে ক্লিক করো
Tags :