শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য সম্পর্কে আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর

0

 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য সম্পর্কে আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর


আজকের এই ব্লগ পোস্ট আমরা একাদশ শ্রেণির সাহিত্যের ইতিহাস বইয়ের অর্থাৎ বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি বইয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মধ্য যুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে খুবই বিস্তারে আলোচনা করবো। এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্নের উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য সম্পর্কে আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর


উওরঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রী বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ মহাশয় বাঁকুড়া জেলার ক্যাকিলা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়ালঘরের মাচা থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যেটি আবিষ্কার করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ মহাশয়ের প্রকাশ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন নাম নিয়ে প্রকাশিত হয়।।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য সম্পর্কে আলোচনাঃ


শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি মূলত মধ্যযুগে রচিত হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা হলেন বড়ু চন্ডীদাস। আনুমানিক চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রচিত এই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড রয়েছে। এই 13 টি খন্ডে হল জন্ম খন্ড,তাম্বুল, খন্ড,দান,নৌকা, ভার,ছত্র বৃন্দাবন কালিয়দমন,যমুনা,হার,বাণ, বংশী ও রাধা বিরহ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের তেরোটি খন্ডের মধ্যে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম থেকে শুরু করে তার মথুরা যাত্রা তার পর্যন্ত কাহিনী।


শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের চরিত্র তিনজন হলেন। এই চরিত্রগুলি হলো- শ্রীকৃষ্ণ,রাধার এবং বড়াই। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি জুড়ে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের জীবনের নানা ঘটনা এবং রাধা কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী এবং তাদের প্রেমলীলা ছাড়াও আরও নানা ছোটখাটো ঘটনা।। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের তৃতীয় প্রধান চরিত্র বড়াই হলেন সেই, যিনি রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে হিসেবে কাজ করেছিলেন।। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রথম খন্ডের নাম জন্ম খন্ড এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষ খন্ডের নাম হলো রাধা বিরহ।

বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এর কাব্যবৈশিষ্ট্যঃ 


মধ্যযুগের বড়ু চন্ডীদাসের রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মধ্যে নানা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

প্রথমতঃ তেরোটি খণ্ডে রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বাংলা সাহিত্যে রাধাকৃষ্ণকথার প্রথম লৌকিক আখ্যানকাব্য। জন্মখণ্ডে দেবতাদের প্রার্থনায় বিশ্বকে ভারমুক্ত করতে রাধাকৃষ্ণের আবির্ভাব দিয়ে এই কাব্যের শুরু হয়েছে আর শেষ খণ্ড রাধাবিরহ-এ কংসবধের জন্য কৃল্পের মথুরাগমনে রাধার আক্ষেপ যন্ত্রণায় আখ্যানকাব্যটির কাহিনি সমাপ্ত হয়েছে।


দ্বিতীয়তঃ গীতিনাট্য-বিবৃতির মিশেলে রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষে রাধার হৃদয়ের আর্তিতে গীতিময়তা, বংশী খণ্ডে ‘কেনা বাঁশি বাএ বড়ায়ি’-তে গীতিরসের উচ্ছ্বসিত প্রবাহ; আবার রাধা-কৃষ্ণ-বড়ায়ির উক্তি প্রত্যুক্তিতে নাটকীয় চরিত্রের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

তৃতীয়তঃ তুর্কি আক্রমণের প্রভাবজাত লৌকিকতার আভাস রয়েছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনএ। তাই বড়ু চণ্ডীদাসের কৃল্প হয়ে ওঠে এক ‘আভীর’ (গোয়ালা) যুবক, যে অনায়াসে বলতে পারে“রাধাক না পাত্র মোর বেআকুল মনে।” রাধাও ক্রমণ হয়ে ওঠে পরকীয়া প্রেমে অভ্যস্ত এক রমণী। আর বড়াই রাধাকৃষ্ণের পরকীয়া প্রেমে দূতিয়ালি করা এক গ্রাম্য কুটিল চরিত্র।


চতুর্থতঃ আদি মধ্যযুগের সমাজচিত্রের বিশ্বস্ত দলিল হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য। বালিকা রাধার সংসার করার মধ্যে বাল্যবিবাহের নজির আছে। বিভিন্ন পেশার মানুষের পরিচয় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এ যেমন আছে, তেমনই জনজীবনের অজস্র সংস্কারের নিদর্শনও এই কাব্যে পাওয়া যায়।

পঞ্চমতঃ আদি মধ্যযুগে সৃষ্ট নব্যবাংলা ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণগুলি শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এই পাওয়া যায়। যেমন—সর্বনামে কর্তৃকারকে ‘রা' বিভক্তি যোগ, ভবিষ্যতের কর্তৃবাচ্যে ‘ইব’ অস্ত ক্রিয়ার ব্যবহার ইত্যাদি। এইভাবে শ্রীকৃষ্মকীর্তন আদি মধ্যযুগের একমাত্র সাহিত্য নিদর্শন হিসেবে বিষয়, আঙ্গিক, ভাষা ছাড়াও অজস্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।


Tags : 

একাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বড় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 11 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বড় প্রশ্ন উত্তর | Class 11 Bengali Question Answer & notes  | Class 11 Bangali Notes | Class 11 Bengali Suggestion 2022 | ক্লাস 11 সাহিত্যের ইতিহাসের বড় প্রশ্ন উত্তর 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top