ভূমিকাঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর রচিত গ্যালিলিও প্রবন্ধের মূল চরিত্র হলেন গ্যালিলিও। গ্যালিলিও ভেনিসে থাকাকালীন গালিলিও তার নিজের আবিষ্কৃত দূরবিনে চোখ রেখে মহাকাশের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে নানা তথ্য আবিষ্কার করেন। এবং এখান থেকেই শুরু হয় গ্যালিলিওর জীবনের কালো অধ্যায়।
দূরবীন এর সাহায্যে গ্যালিলিওর আবিষ্কারঃ- 1609 খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডে একজন কাচের লেন্স নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে দূরবীন আবিষ্কার করে ফেলেন। কিন্তু সেই দূরবীনটি সঠিকভাবে কাজ করতো না কারণ তাতে সমস্ত জিনিস উল্টো করে দেখাতো। কিন্তু এই খবরটা গ্যালিলিওর কাছে পৌঁছানোর পরেই গ্যালিলিও নিজের মতো করে একটু দূরবীন আবিষ্কার করেন। গ্যালিলিওর আবিষ্কৃত দূরবীনটা একদমই সঠিকভাবে কাজ করতো। যার ফলে গ্যালিলিও সেটার সাহায্যে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন যে-
চন্দ্রপৃষ্ঠ অত্যন্ত অসমান ও বন্ধুর, যা 'চাঁদের পাহাড়' নামে অভিহিত এবং ছায়াপথ প্রকৃত পক্ষেলক্ষলক্ষ তারার সমাবেশ। বৃহস্পতির চারটি এবং পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদকেও পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।।। স্বদেশে ফিরে গালিলিও লক্ষ করেন সূর্যমণ্ডলের অসংখ্য কলঙ্কবিন্দু । চাঁদের মতো শুক্র গ্রহের হ্রাসবৃদ্ধি এবং শনি গ্রহের চারিদিকের বলয়রেখাও পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
কিন্তু গ্যালিলিওর আবিষ্কৃত এই সমস্ত তথ্যই তাঁর জীবনের কাল হয়ে দাড়ায়। কারণ - গালিলিও ভেনিসে থাকাকালে দূরবিনের সাহায্যে চাঁদের পাহাড়, ছায়াপথের প্রকৃতি, বৃহস্পতির চারটি এবং পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদকে আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু সেখানকার ধার্মিক পণ্ডিতেরা গ্যালিলিওর কোনো কথাই মানতে চাননি। গ্যালিলিওর সেই সমস্ত কথা ধর্মপন্ডিতদের মানতে না চাওয়ার পেছনে নানা কারণ ছিল।কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই সনাতনীরা গালিলিওর শত অনুরোধেও কিছুতেই তার দূরবিনে চোখ রেখে গ্যালিলিওর কথার সত্য মিথ্যা যাচাই করতে চাননি। সম্ভবত তাঁদের ভয় ছিল, এতে পাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাস চলে যায়। বরং তাঁরা বলেন যে, যা খালি চোখে দেখা যায় না, তা যদি যন্ত্র দিয়ে দেখা যায়, তাহলে সেটা মোটেও বাস্তব নয়, সেটা নিশ্চিত গ্যালিলিওর যন্ত্রেরই কারসাজি। সেরকারণেই তাঁরা গালিলিওর বিরুদ্ধতা করে জানিয়েছিলেন যে, গালিলিও আসলে চালাকির সাহায্যে কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মাণ্ড-বিন্যাসের সপক্ষে মুক্তি সংগ্রহের মতো অন্যায় কর্ম করছেন।
এরপর শুরুই হয় গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র এবং নানা মিথ্যা প্রচার। ধর্মযাজকদের চাপে পড়ে গ্যালিলিওর জীবনের শেষ সময়টা খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাটতে শুরু করে। এবং শেষ পর্যায়ে 1642 খ্রিস্টাব্দে 8 ই জানুয়ারি গ্যালিলিও তার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।।