ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। || নবম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

0

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। || নবম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় উনবিংশ শতকের ইউরোপ রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত (WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ 8 মার্কের প্রশ্ন 'ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।' এর উওর (WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

ভূমিকাঃ উনিশ শতকের প্রথম থেকেই বলকান অঞ্চলের নিকট প্রাচ্য সমস্যা  জটিলতা আকার ধারণ করতে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরিণত হয়।।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণঃ 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ হয়েছিল মূলত তুরস্ক এবং রাশিয়ার সঙ্গে। কিন্তু পরবর্তীতে তুরস্কের সঙ্গে অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স রাষ্ট্রগুলো যোগ দিয়েছিল। 1854 থেকে 56 খ্রিস্টাব্দের এই ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পেছনে একাধিক কারণ লুকিয়ে ছিল। যেমন - 

রুশ জারের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতিঃ 

উনিশ শতকে বলকান অঞ্চলের অটোমান তুর্কিরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করে এবং সেখানে তারা ইউরোপের বিভিন্ন জাতির উপরে তাদের শাসন ব্যবস্থা প্রচলন করে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তুর্কি শাসকদের শাসনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত, অর্থনৈতিক দূর্বলতা, সংগঠন,মধ্যযুগীয় মোল্লাতন্ত্র ইত্যাদির কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই কারণে রাশিয়ার জার তুরস্ক আক্রমণ করে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করতে চাইলে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।।

ব্রিটিশ বাহিনীর নৌ আধিপত্য ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ঃ 

রাশিয়া সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে তুরস্ক আক্রমন করতে চাইলে ব্রিটিশ বাহিনী ব্রিটিশ বাহিনী এটা ভাবে যে? রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ যদি বলকান অঞ্চলের অবস্থিত ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করে,তাহলে ওই অঞ্চলের ব্রিটিশ বাহিনী নৌ আধিপত্য আর থাকবে না। এই কারণে ইউরোপীয় শক্তিগুলি তুরস্কের অখন্ডতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়।।

ফ্রান্স এবং রাশিয়ার বিবাদঃ

1746 খ্রিস্টাব্দে থেকে গ্রেটোর গির্জা এবং তার ল্যাটিন ধর্মযাজকদের ওপর অভিভাবকত্বের অধিকার ফ্রান্স তুরস্কের কাছ থেকে লাভ করেছিল। কিন্তু ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্স সেই বিষয়ে লক্ষ্য হতে পারেনি যার ফলে সেই কর্তৃত্ব গ্রিক যাজকদের হাতে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু 1853 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন পুনরায় সেই অধিকার দাবি করলে অস্ট্রিয়া, স্পেন পর্তুগাল এবং তুরস্কের সুলতানও দাবি সমর্থন করেন কিন্তু জার প্রথম নিকোলাসের জেরুজালেমের ধর্মযাজকদের অধিকার বলবৎ রাখার জন্য এবং ফ্রান্সের প্রাপ্ত অধিকার বাতিল এর জন্য তুর্কি সুলতানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এবং এর ফলেই ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।।

প্রত্যক্ষ কারণঃ 

রাশিয়ার জার যখন তুরস্কের সুলতানের উপর চাপ দিয়ে ফ্রান্স সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে, তখন ব্রিটেনের সহায়তায় তুরস্কের সুলতান রাশিয়ার সেই দাবি খারিজ করে। এর ফলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে তুরস্কে সেনা পাঠায়। রাশিয়ার এরকম আচরণে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, তুরস্ক সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং এভাবেই 1854 খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সূচনা হয়।।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফলঃ 

রাশিয়া মূলত ক্রিমিয়ার যুদ্ধে কয়েকটি বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছিল। এবং এছাড়াও রাশিয়া সেনাবাহিনীতে সঠিক পরিমাণে যোগ্য সৈনিক না থাকায় রাশিয়া ক্রিমিয়ার যুদ্ধে খুব বাজেভাবে হেরে গিয়েছিল। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, তুরস্ক এই যুদ্ধে সঠিকভাবে জয়ী হয়েছিল এবং এর কারণেই আমরা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের বিভিন্ন রকম ফলাফল দেখতে পাই। এই ফলাফল মূলত রাশিয়া এবং অন্যদিকে তিনটি বৃহৎ শক্তির ক্ষেত্রেই ছিল। যেমন -

রাশিয়ার বিস্তারনীতিঃ

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর রাশিয়া সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল এবং এই কারণেই কৃষ্ণসাগর এলাকায় রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী বিস্তারনীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। 

তুরস্কের সাম্রাজ্যের লাভঃ 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে তুরস্ককে কয়টি বৃহৎ শক্তি যেমন,অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড প্রভৃতি সাহায্য করায় তুরস্ক ক্রিমিয়ার যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল।  এবং এই কারণে বলকান অঞ্চলের তুরস্ক আরও কিছুকাল নিরাপদে একটি সাম্রাজ্য হিসেবে টিকে থাকার সুযোগ পায়।

ইংল্যান্ডের স্বার্থরক্ষাঃ 

ইংল্যান্ড এই যুদ্ধের ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে কিছু লাভ না করলেও পরোক্ষভাবে লাভবান হয়। ভূমধ্যসাগরের দিকে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ রক্ষা পায়। ইংল্যান্ড মূলত যে কারণে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে তুরস্ককে সমর্থন করেছিল অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের ভয়টা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এর ফলে ইংল্যান্ড কিছুটা লাভবান হয়েছিল।

ইতালির ঐক্য স্বরান্বিতঃ 

পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ফলে ইটালির ঐক্যসাধনের প্রশ্নটি বৃহ ইউরোপীয় রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি বিশেষত ফ্রান্স ইটালিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়, এইভানে ইটালির ঐক্যকরণের পথ প্রশস্ত হয়।

অস্ট্রিয়া-রাশিয়া বিরোধঃ 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অস্ট্রিয়া এবংরাশিয়া ছিল পরস্পরবিরোধী শত্রু। কিন্তু অন্যদিকে প্রাশিয়া ছিল অস্ট্রিয়া বিরোধী। এই যুদ্ধের ফলে অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় রাশিয়া ক্রমশ প্রাশিয়আ সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে।

রাশিয়া-প্রাশিয়া মৈত্রীঃ

রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে ফলে প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক জার্মানিতে অস্ট্রিয়া প্রাধান্য বিনষ্ট করার সুযোগ লাভ করে এবং প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্যসাধন সম্ভব হয়ে ওঠে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়াঃ 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ভূমি দাসদের সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করা তাদের সবচাইতে বড় ভুল ছিল। কারণ ভূমিদাসদের প্রশাসনিক এবং সামরিক দুর্বলতার কারণে তারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। এবং সেকারণেই রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমি দাসদের মুক্তি দিয়ে তাদের নাগরিকে পরিণত করার ব্যবস্থা করেছিলেন।।


আশাকরি যে, আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) থেকে যে 'ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনার' যে উওর দেওয়া হয়েছে তা তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিও।।


Tags : 

নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস উনবিংশ শতকের ইউরোপ রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | ক্লাস 9 ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | class 9 history first chapter notes |  wb class 10 history question answer | wb class 9 history suggestion 2023 | History question answer 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top