জ্ঞানের প্রকারভেদ বা বিভিন্ন প্রকার বাক্যে প্রকাশিত জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করো।

0

WBBSE Class 11 Philosophy Question and Answer 2022 || একাদশ শ্রেণির দর্শন জ্ঞানের স্বরূপ এবং জ্ঞান সংক্রান্ত মতবাদ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

WBBSE Class 11 Philosophy Question and Answer 2022 || একাদশ শ্রেণির দর্শন জ্ঞানের স্বরূপ এবং জ্ঞান সংক্রান্ত মতবাদ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় অধ্যায় 'জ্ঞানের স্বরূপ এবং জ্ঞান সংক্রান্ত মতবাদ' ( WBBSE Class 11 Philosophy Question and Answer 2022 ) থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "জ্ঞানের প্রকারভেদ বা বিভিন্ন প্রকার বাক্যে প্রকাশিত জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করো।" এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এবং জ্ঞানের প্রকারভেদ বা বিভিন্ন প্রকার বাক্যে প্রকাশিত জ্ঞান সম্পর্কে উদাহরণ সহ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

জ্ঞানের প্রকারভেদ বা বিভিন্ন প্রকার বাক্যে প্রকাশিত জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করো।


ভূমিকাঃ খুব সাধারণভাবে জ্ঞান বলতে বোঝায় কোন একটি বাক্যকে অথবা বচনকে জানা। এখন আমাদের জানা অনেক প্রকারের হতে পারে। অর্থাৎ একটি বাক্য বা বচন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে এবং বিভিন্ন প্রকারের বাক্যের মাধ্যমে অথবা বচনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জ্ঞান প্রকাশিত হয়। যেমন- 

সামান্য বাক্যঃ যে বাক্যে কোন শ্রেণী বা জাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি ব্যক্তি বা বস্তুর সম্বন্ধে কোন কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বলা হয় সামান্য বাক্য এবং সেই সামান্য বাক্যের মাধ্যমে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয়, সেই জ্ঞান কে বলা হয় সামান্য জ্ঞান।। 

যেমন- সকল মানুষ মানুষ মরণশীল। 

এখানে মানুষ জাতিত সম্পর্কে, মানুষ যে মরণশীল এই সত্য কথাটা স্বীকার করা হয়েছে।।

বিশেষ বাক্যঃ যে বাক্যে কোনো শ্রেণি বা জাতির কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা বস্তু সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে বলে বিশেষ (particular) দুটি বাক্য। এবং সেই বিশেষ বাক্যে মাধ্যমে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় বিশেষ জ্ঞান বা অংশবিষয়ক জ্ঞান। যেমন—কোনো কোনো রাজনীতিক মিথ্যাবাদী, কোনো কোনো রাজনীতিক মিথ্যাবাদী নয় ইত্যাদি। 


ব্যক্তি-বিষয়ক বাক্যঃ  যে বাক্যে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু দুটি সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে বলে ব্যক্তি-বিষয়ক বাক্য। ব্যক্তি-বিষয়ক বাক্যে যে নতুন জ্ঞান প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় বিশিষ্ট বা ব্যক্তি-বিষয়ক জ্ঞান।।

যেমন—রামানুজ "বিধে একজন দার্শনিক, এই ফুলটি লাল ইত্যাদি। 

বর্ণনাত্মক বাক্যঃ যে বাক্যে কোনো ঘটনার বা বাস্তব বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে বর্ণনাত্মক বাক্য বলে। এবং এই বর্ণনাত্বক বাক্যের মাধ্যমে আমরা যে সকল জ্ঞান লাভ করতে পারি অথবা যে সকল জ্ঞান প্রকাশিত হয়,  সেই জ্ঞানকে বলা হয় বর্ণনাত্মক জ্ঞান।যেমন- এই ফুলটি লাল। রবীন্দ্রনাথ হন কবি।

মূল্য নিরূপণ বাক্যঃ যে বাক্যে কোনো আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর মূল্য নিরূপণ করা হয় তাকে মূল্য নিরুপক বাক্য বলে। যেমন- দৃশ্যটি সুন্দর, সত্য কথা বলা উচিত।

যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা মূল্য নিরূপক বাকাগুলিকে প্রকাশক বাবা বলে থাকেন। যেমন - 'দৃশ্যটি সুন্দর' - এই বাক্যের অর্থ হল দৃশ্যটি আমার ভালো লাগছে।


বিশ্লেষক বাক্যঃ বিশ্লষক বাকা যে বাক্যের উদ্দেশ্য পদের ধারণাকে বিশ্লেষণ করে বিধেয় পদের ধারণা পাওয়া যায়, তাকে বিশ্লেষক বাক্য বলে। এবং বিশ্লেষক বাক্যের মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান লাভ করতে পারি বা যে জ্ঞান প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় বিশ্লেষক জ্ঞান। যেমন- সকল পিতা হয় পুরুষ—এটি একটি বিশ্লেষক বাক্য। এখানে উদ্দেশ্য পদ 'পিতা'-এর ধারণার মধ্যেই বিধেয় পদের ‘পুরুষ’ ধারণা অন্তর্নিহিত থাকে। মনে রাখতে হবে উদ্দেশ্য বা বিধেয় পদ নয়, উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের ধারণা। “পিতা’ এই পদটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই ‘প’ ‘ই’-কার এবং 'ত’ ‘আ-কার সেই জন্য বলতে হবে উদ্দেশ্য পদের ধারণা। পিতার ধারণার মধ্যে আমরা পুরুষের ধারণা '। 

• বিশ্লেষক বাক্য হল এমন একটি বাক্য, যাকে অস্বীকার করলে স্ববিরোধ ঘটে। অপর কথায়, এই বাক্যের বিরুদ্ধ বাক্যটি স্ববিরোধী। 

• যেমন—“সব লাল ফুল হয় লাল। এর বিরুদ্ধ বাক্য ‘কোনো কোনো লাল ফুল নয় লাল স্ববিরোধী।


সংশ্লেষ বাক্যঃ যে বাক্যের উদ্দেশ্য পদের ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদের ধারণা পাওয়া যায় না, তাকে সংশ্লেষক বাক্য বলে। এবং সংশ্লেষক বাক্যে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় সংশ্লেষক জ্ঞান।

• সংশ্লেষক বাক্যের বিধেয় পদের অর্থটি উদ্দেশ্য পদের অর্থের মধ্যে নিহিত থাকে না, বরং এই বাক্যের বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে নতুন তথ্যের সন্ধান দেয়। যেমন—সব কাক হয় কালো', "বরফ হয় সাদা’, ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল' ইত্যাদি। সংশ্লেষক বাক্যে দুটি স্বতন্ত্র পদকে যুক্ত বা সংশ্লেষণ করা হয় এবং এই জাতীয় বাক্যের বিরুদ্ধ বাক্য স্ববিরোধী নয়। 'সব কাক হয় কালো'—এই সংশ্লেষক বাক্যের বিধেয় পদ 'কালো' গুণটি উদ্দেশ্য পদ 'কাক'-কে বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় না। তাই এই বাক্যের বিধেয় পদের অর্থ উদ্দেশ্য পদের অর্থের মধ্যে নিহিত নেই। এক্ষেত্রে 'কাক' ও 'কালো', এই . দুটি স্বতন্ত্র পদকে সংশ্লেষণ করা হয়েছে। বস্তুত, এখানে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র সম্বন্ধটি আমাদের অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এজন্য নতুন তথ্যজ্ঞাপক।


• সংশ্লেষক জ্ঞান হল বাস্তব ব্যাপার-সংক্রান্ত জ্ঞান, কেননা এই জাতীয় জ্ঞানের দ্বারা কোনো বাস্তব বা জাগতিক ব্যাপার বর্ণনা করা হয়। সংশ্লেষক জ্ঞান আবশ্যিক নয়, কিন্তু নতুন তথ্যজ্ঞাপক।

অবশ্যম্ভর বাক্যঃ যে বাক্য অবশ্যই সত্য বা মিথ্যা হয়, তাকে অবশ্যম্ভব বাক্য বলে। এবং অবশ্যম্ভব বাক্যে যে জ্ঞান ব্যক্ত হয়, তাকে বলা হয় অবশ্যম্ভব জ্ঞান।

এই জাতীয় বাক্যের গঠন দেখামাত্রই বাক্যটিকে আবশ্যিকভাবে সত্য বা মিথ্যা বলে বুঝতে পারা যায়। যেমন—

• ২+২ = ৪ (অবশ্যম্ভব সত্য বাক্য)।

• এই লাল গোলাপটি হয় লাল (অবশ্যম্ভব সত্য বাক্য)।

• এই লাল গোলাপটি নয় লাল (অবশ্যম্ভব মিথ্যা বাক্য)।

আপতিক বাক্যঃ যে বাক্যকে অনিবার্যভাবে সত্য বা মিথ্যা বলা যায় না, তাকে আপতিক বাক্য বলে। আপতিক বাক্যে যে জ্ঞান ব্যক্ত হয়, তাকে আপতিক জ্ঞান বলে।

এই জাতীয় বাক্যের বক্তব্যকে সম্ভবত সত্য বা মিথ্যা বলা যায়। অর্থাৎ, একটি আপতিক বাক্যকে যেমন সত্য বলে চিন্তা করা যায়, আবার তেমনি মিথ্যা বলেও চিন্তা করা যায়। 

যেমন -

• কোনো কোনো ফুল সাদা (ওইগুলি লালও হতে পারত। 

• সব কুকুর মাংসাশী (এরা নিরামিষাশীও হতে পারত)।

•  মানুষ হয় স্বার্থপর (মানুষ নিঃস্বার্থপরও হতে পারত)। 

পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্য ও পরতঃসাধ্য বাক্য


'পূর্বতাসিঙ্গ বাক্যঃ যে বাক্যের সত্যতা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার পূর্বেই সিদ্ধ, অর্থাৎ যে বাক্যের সত্যতা নির্ধারণের জন্য পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণের প্রয়োজন হয় না, তাকে বলা হয় পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্য। এবং পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্যে যে জ্ঞান ব্যক্ত হয়, তাকে বলা হয় পূর্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান বা স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান।

যেমন—কোনো বস্তু একই সময়ে দু-জায়গায় থাকতে পারে না', সব লাল ফুল হয় ফুল’, ‘যা ত্রিভুজ তা বৃত্ত নয়’ ইত্যাদি। এই জাতীয় বাক্যগুলির বৈশিষ্ট্য হল—এরা সার্বিক (Universal) এবং আবশ্যিক (Necessary)। অপর কথায়, পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্যমাত্রই অবশ্যম্ভব বাক্য এবং অবশ্যম্ভব বাক্যমাত্রই পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্য। অর্থাৎ, পূর্বতঃসিদ্ধ বাক্য = অবশ্যম্ভব বাক্য।

পরত সাদ্ধ বাক্যঃ যে বাক্যের সত্যতা নির্ধারণের জন্য ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণের উপর নির্ভর করতে হয়, তাকে বলা হয়-পরতঃসাধ্য বাক্য। এবং পরতাসাধ্য বাক্যে যে জ্ঞান ব্যক্ত হয়, তাকে বলা হয় অনুভবলব্ধ জ্ঞান—যা সম্ভাব্য কিন্তু স্বতঃসিদ্ধ নয়।

যেমন—কোনো কোনো ফুল লাল’, ‘এখন সকাল ৮টা', 'এই কলমটি কালো' ইত্যাদি। এই জাতীয় বাক্যগুলির বৈশিষ্ট্য হল—এরা সার্বিক সত্য নয়, বিশেষ বা ব্যক্তিগত সত্য; আবশ্যিক সত্য নয়, সম্ভাব্য বা আপতিক সত্য। অপর কথায়, পরতঃসাধ্য বাক্যমাত্রই আপতিক বাক্য। অর্থাৎ, পরতঃসাধ্য বাক্য = আপতিক বাক্য। 


Tags : 

একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় অধ্যায় জ্ঞানের স্বরূপ এবং জ্ঞান সংক্রান্ত মতবাদ প্রথম অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | WBBSE Class 11 Philosophy Question and Answer 2022| একাদশ শ্রেণীর দর্শন নোট | ক্লাস ইলেভেন দর্শন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | wb class 11 philosophy question answer | wb class xi philosophy question and answer | class 11 philosophy notes | class 11 philosophy suggestion 2022 | Class 11 philosophy chapter 2 questions and answers in bengali


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top