দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর
![]() |
দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজের এই পোস্টের মাধ্যমে দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ( WBBSE Class 10 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের আরও কিছু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 2 মার্কের প্রশ্নের উওর ( WBBSE Class X (10) History Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আজকে এটি দ্বিতীয় ভাগ যেখানে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনার যে সমস্ত দুই নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি থেকে গিয়েছিল, সেগুলোর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। এর আগের একটি পোস্টে আমরা ক্লাস 10 ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 10 টি প্রশ্নের উওর তোমাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। যদি কেউ সেগুলো না দেখে থাকো তাহলে আগে সেগুলো দেখে নিতে পারো।। আর আমরা প্রতিদিন মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর
আজকের প্রশ্ন উওরের বিষয়ঃ
• বাংলার নারী শিক্ষার বিকাশে, রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা কী ছিল??
• ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন?
• ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন? অথবা, নববিধান কি?
• কে কবে এবং কেন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
• ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ সম্পর্কে লেখো।।
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হতো?,
অথবা, ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হতো??
• সমাজ সংস্কারে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করো
• শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝো বা শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
• স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্তের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
• বাংলার নবজাগরণ কী?
• ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন?
• ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন? অথবা, নববিধান কি?
• কে কবে এবং কেন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
• ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ সম্পর্কে লেখো।।
• নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হতো?,
অথবা, ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হতো??
• সমাজ সংস্কারে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করো
• শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝো বা শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
• স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্তের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
• বাংলার নবজাগরণ কী?
দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর || সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড়ো প্রশ্ন উওর
প্রশ্নঃ বাংলার নারী শিক্ষার বিকাশে, রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা কী ছিল??
উওরঃ উনিশ শতকের যে সমস্ত বাঙালিরা বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন একজন। রাজা রাধাকান্ত দেব, নিজে একজন সংস্কৃত পন্ডিত হয়েও তিনি নারীদের শিক্ষার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষাকেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
• রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলার নারীশিক্ষার বিস্তারে 1819 খ্রিষ্টাব্দে ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি " প্রতিষ্ঠায় সাহায্যে করেছিলেন।
• রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলার নারীদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বা নারী শিক্ষার প্রসারের সমর্থনে গৌরমহন বিদ্যালংকারের মাধ্যমে স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন।।
• রাজা রাধাকান্ত দেব নিজের বাড়িতেই ক্যালকাটা স্কুলবুক সোসাইটির ছাএীদের নিজের বাড়িতে পরীক্ষা দানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।।
• মূলত এভাবেই রাজা রাধাকান্ত দেব বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে সাহায্য করেছিলেন।
প্রশ্নঃ ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত কেন???
উওরঃ ডা. মধুসুদন গুপ্ত বিখ্যাত বা স্বরনীয় হয়ে থাকার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। যেমন-
• মধুসুদন গুপ্ত ছিলেন উনিশ শতকের একজন বিখ্যাত বাঙ্গালী চিকিৎসক। যিনন 1836 খ্রিষ্টাব্দের 10 জানুয়ারি কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম বাঙ্গালি ছাত্র হিসাবে সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার এবং বাধার বিপত্তি কাটিয়ে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। যা ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা।
• ডা. মধুসুদন গুপ্ত, নিজহাতে ' লন্ডন ফার্মাকোপিয়া' গ্রন্থটি বাংলা ভাষায়, এবং "অ্যানাটমি " গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।।।
এবং ডা. মধুসুদন গুপ্তের এসব কাজে জন্যেই তিনি আজও সবার মধ্যে স্বরনীয় হয়ে আছেন।।
প্রশ্নঃ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন?? অথবা, নববিধান কি??
উত্তরঃ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দ মোহন বসু, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এবং কেশবচন্দ্র সেনের মধ্যে মতবিরোধ।।
ব্রাহ্মসমাজে ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের নীতি এবং আদর্শ উপেক্ষা করে তিনি নিজের ১৪ বছরের নাবালিকা কন্যাকে কোচবিহারের মহারাজের সঙ্গে বিবাহ দিতে চেয়েছিলেন। এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী , বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও আনন্দমোহন বসু প্রমুখের এর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এবং এই বিতর্কে জেরেই 1878 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ,আনন্দমোহন বসু প্রমুখের নেতৃত্বে থাকা ভাগটি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভাগটি নববিধান নামে পরিচিতি লাভ করে।।
প্রশ্নঃ কে, এবং কেন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন??
উওরঃ উনিশ শতকে বাংলায় যথেষ্ট শিক্ষার অভাব, ধর্মীয় বাধানিষেধ ইত্যাদি কারণে সমাজে যে কূপ্রথা, কুসংস্কার, প্রচলিত ছিল, সমাজের সেই সমস্ত কুসংস্কার দুর করে, সমাজে শিক্ষা আলোর প্রসার ঘটিয়ে সমাজের উন্নতির জন্য রাজা রামমোহন রায় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠা করেন।। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ব্রাহ্ম সভা পরবর্তীকালে ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে 'ব্রাহ্মসভা' নামে নাম পরিচিত হয়।।
প্রশ্নঃ ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ সম্পর্কে লেখো।।
উওরঃ ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের দুটি সমাজ সংস্কার মুলক কাজ হলো-
প্রথমতঃ ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজারামমোহন রায়ের তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে 1829 খ্রিষ্টাব্দের 4 ই ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথার মতো একটা ভয়ংকর কুপ্রথা সমাজ থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয়তঃ ব্রাহ্মসমাজের ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের ফলে সরকার 1872 খ্রিষ্টাব্দের "তিন আইন" পাস হওয়া।।
প্রশ্নঃ নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হতো?,
অথবা, ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হতো??
উওরঃ উনিশ শতকের, হিন্দু কলেজের একজন তরুন অধ্যাপক, "হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু কলেজের একদল তরুন যুবক ছাত্রদের নিয়ে যে সমাজ সংস্কার মূলত সংগঠন তৈরি হয়েছিল, তাকেই বলা হতো "ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী" বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী। যার প্রানপুরুষ ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও নিজেই।।
এবং এই দলের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্যারিচাদ মিএ, রসিককৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রামতনু লাহিড়ী,প্রমুখ।।
প্রশ্নঃ সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা কী ছিল??
উত্তরঃ উনিশ শতকে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার ছাত্ররা মূলত সমাজ সংস্কারের জন্যই "ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী " বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী তৈরি করেছিল।।
•নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে স্পর্শ না করতে পারলেও কলকাতার মধ্যে ডিরোজিও এবং তার অনুগামীরা অস্পৃশ্যতা ,জাতিভেদ প্রথা ,সতীদাহ প্রথা ,মূর্তিপূজা , প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তীব্র আন্দোলন করেছিলেন।
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের ফলেই কলকাতার সমাজে বা ভারতীয় সমাজে নতুন যুক্তিবাদী ভাবধারা গড়ে উঠেছিল।। এবং তাদের আন্দোলনের ফলেই সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার গুলির প্রথম যুক্তিবাদী আঘাত পরেছিল।।
প্রশ্নঃ শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝো বা শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
উওরঃ শ্রীরামকৃষ্ণের কোনো ধর্মকেই ছোটো বা বড়ো করে তাকে নিয়ে কথা বলেননি। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন সকল ধর্ম ই সমান এবং সত্য।
সর্বধর্ম সমন্বয় বলতে কী বোঝায় যে- শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের মতে আমাদের ধর্ম আলাদা আলাদা হতে পারে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই। আর সেই লক্ষ্য হলো ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো। আর সেই লক্ষ্য পৌঁছনোর জন্যেই আমরা ধর্ম গ্রহণ করি। কেউ একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী তো আবার কেউ বহুশ্বরবদাদে বিশ্বাসী।। কিন্তু ঈশ্বর একই। শুধুমাত্র তার নাম আলাদা।।
তিনি বলেছিলেন যে, যেমন একটি ছাদে যেমন বিভিন্ন উপায়ে ওঠা যায়, ঠিক তেমনি বিভিন্ন ধর্ম ও সাধনার মধ্যে দিয়েও ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যায়।। অথাৎ- "যত মত! তত পথ"।। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তার এই বাণীর মাধ্যমেই সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন।।
প্রশ্নঃ স্বামী বিবেকানন্দের নব্যবেন্দান্ত কী? বা স্বামী বিবেকানন্দের নব্যবেন্দান্তের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
উওরঃ স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্ত নিয়ে, তার নিজস্ব নতুন মতামত দিয়েছিলেন। তিনি প্রাচীন বেদান্তের ভাবধারায়, তার নিজস্ব ধর্মচিন্তা নতুন ভাবে নিজের মতো করে যোগ করেছিলেন।।
এবং ধর্মচিন্তার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের সেই নতুন আদর্শই হলো নব্য বেদান্ত।। স্বামী বিবেকানন্দ তার নব্য বেদান্তে বলেছিলেন সর্বএ ব্রহ্মের উপস্থিতি এবং জনসাধারণের সেবা করা মানেই হলো ব্রহ্মের সেবা করা।।। ধর্মকে মনে রেখে মানুষের শেবা করাই হবে সবচেয়ে বড়ো ধর্ম।।
প্রশ্নঃ উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ কী??
উওরঃ উনিশ শতকে, বাংলায় তথা বিশেষ করে কলকাতায় যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল, সেই আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার তথা বিশেষ করে কলকাতার সমাজ সংস্কৃতির বিভিন্ন অগ্রগতি ঘটেছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার এই অগ্রগতিকেই বাংলার নবজাগরণ বলা হয়।
• বাংলার এই নবজাগরণ নিয়ে অনেকর অনেক আলাদা আলাদা মতামত রয়েছে। কেউ এই বৌদ্ধিক অগ্রগতিকে বাংলার নবজাগরণ বলে মেনে নিয়েছেন.. তো অনেকেই আবার একে বাংলার নবজাগরণ হিসেবে মেনে নেননি।। এবং এই মানা আর না মানা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার নবজাগরণ বিতর্ক।।
Tags :