নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজের এই পোস্টের মাধ্যমে নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় উনবিংশ শতকের ইউরোপ রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত ( WBBSE Class 9 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ 4 মার্কের প্রশ্ন '১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ফ্রান্সের জুলাই বিপ্লবের কারণ গুলি আলোচনা করো।' এর উওর ( WBBSE Class 9 Question Answer & Suggestion 2023 ) তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
ফ্রান্সের জুলাই বিপ্লবের ফলাফল গুলি আলোচনা করো
ভূমিকাঃ ভিয়েনা সম্মেলনের পরবর্তীতে বুরবো বংশের অষ্টাদশ লুই অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে অষ্টাদশ লুই এর মৃত্যুর পর দশম চার্লস ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তার সিংহাসনে বসার পরেই ফ্রান্সে চরম কঠোর রাজ শাসন শুরু হয়। এবং দশম চার্লসের নানা কার্যকলাপের জন্য ফ্রান্সে ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়। এবং ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে জুলাই এই বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে জুলাই বিপ্লবের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন -
বুরবো বংশের পতনঃ
জুলাই বিপ্লবের শেষ করে যখন দশম চার্লস তার অর্ডিন্যান্স গুলি বাতিল করেও বিদ্রোহেক থামাতে পারেননি, তখন তিনি ভীত হয়ে পড়ে ও অর্লিয়েন্স বংশের লুই ফিলিপকে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসান এবং তিনি সিংহাসন ত্যাগ করে ইংল্যান্ডে চলে যান। এবং এই ভাবেই ফ্রান্সে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বুরবো বংশের পতন ঘটে।।
স্বৈরতন্ত্রের পতনঃ
বুরবো বংশের রাজা দশম চার্লস উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থাকে পরিবর্তিত করে তিনি ফ্রান্সে স্বৈরতন্ত্র স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। আসলে দশম চার্লস ছিলেন উগ্র রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং একজন স্বৈরাচারী শাসক। তাই তিনি সবসময়ই স্বৈরাচারকে সমর্থন করতেন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দশম চার্লসের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেই আশা ভঙ্গ হয় এবং এর ফলে ফ্রান্সের জনগণ স্বৈরতন্ত্রের শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে।।
জাতীয় প্রতিনিধি সভার ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
জুলাই বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র রাজার হাতেই ছিল। রাজা নিজের ইচ্ছে মতো বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করতেন তা জনস্বার্থে হোক অথবা জনস্বার্থবিরোধী হোক। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর ফ্রান্সে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জাতীয় প্রতিনিধি সভার হাতে চলে যায়। যার ফলে জাতীয় প্রতিনিধি সভা জনস্বার্থে বিভিন্ন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা লাভ করে এবং দেশের শাসন ব্যবস্থায় ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের প্রাধান্য দূর করে।।
ভোট অধিকার প্রদানঃ
জুলাই বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বা দশম চালর্সের প্রধানমন্ত্রী পলিগন্যাক চারটি অর্ডিন্যান্স জারি করে ভোট দাতাদের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর ফ্রান্সে ভোট দাতাদের সংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাৎসরিক ২০০ ফ্রা কর প্রদানকারী 25 বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। যার ফলে তারা রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাজ কর্মে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।।
জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠাঃ
জুলাই বিপ্লবের পর ফ্রান্সে 'রাজাগণের ক্ষমতা ভগবান প্রদত্ত' -এই নীতি কিছু পরিমাণ কমে এবং রাজা লুই ফিলিপ যখন রাজা হন, তখন তিনি ফরাসিদের রাজা উপাধি ধারণ করতে বাধ্য হন। এবং জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীকালে ফ্রান্সে ভোট দাতাদের সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে, ফ্রান্সের জনগণের কিছুটা সার্বভৌম ক্ষমতা স্বীকার করা হয়।
মধ্যবিত্ত মানুষদের প্রাধান্যঃ
জুলাই বিপ্লবের পর ফ্রান্সে উগ্র রাজতন্ত্রের প্রাক-বিপ্লব যুগের ফিরে যাওয়ার আশা নির্মূল হয় এবং ধর্ম যাজক ও অভিযাত সম্প্রদায়ের বদলে ফ্রান্সে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের প্রাধান্য স্থাপিত হয়। কারণ ফ্রান্সের জুলাই বিপ্লবের সময় তারাই প্রধান নেতা ছিল।। এছাড়াও জুলাই বিপ্লবের পরে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন হয়। জুলাই বিপ্লবের আগে বুরবো বংশের পতাকা ছিল লিল ফুল আঁকা সাদা রঙের পতাকা। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর ফ্রান্সের পতাকা সাদা, লাল ও নীল রঙের পতাকায় পরিণত হয়।।
উপসংহারঃ
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে দশম চার্লস এবং তার প্রধানমন্ত্রী পলিগন্যাক এর বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে যে জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, তার একাধিক ফলাফল শুধুমাত্রমাত্র ফ্রান্সের অভ্যন্তরেই ছিল না। জুলাই বিপ্লবের কিছু প্রভাব ফ্রান্সের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল।।
Tags :