আজের এই পোস্টের মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকটি ধারা ( WBBSE Class 7 History Question Answer & Notes in Bengali ) অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন 'কৈবর্ত বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো' এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ( WBBSE Class vii Question Answer & Suggestion 2022 )। আর আমরা প্রতিদিন তোমাদের জন্য নোটস শেয়ার করে যাবো। তাই তোমরা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকো।।
কৈবর্ত বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো || সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকাঃ কৈবর্ত বিদ্রোহ ছিল মূলত বাংলার পাল রাজাদের শাসন কালে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ানক বিদ্রোহ। কৈবর্ত বলতে মূলত বোঝানো হতো, পাল শাসনকালে সমাজের নিম্ন স্তরের জেলা বা মাঝি সম্প্রদায়কে। মূলত তারাই কৈবর্ত নামে পরিচিত ছিল।
কৈবর্ত বিদ্রোহের কারণঃ
সন্ধ্যাকর নন্দীর রচিত রাম চরিত কাব্যে কৈবর্ত বিদ্রোহের কারণের সঙ্গে সঙ্গে কৈবর্ত বিদ্রোহের সম্পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। বিদ্রোহের নানা উল্লেখযোগ্য কারণ এর মধ্যে কয়েকটি কারণ এভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন-
প্রথমতঃ কৈবর্তরা সমাজের নিম্ন স্তরের জনগণ হয় তাদের মধ্যে সেরকম ভাবে কোনও রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। কিন্তু চাষী-কৈবর্তশ্রেণীভুক্ত যশোদাস নামক জনৈক ব্যক্তি রাজ্যপালের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। ফলে কৈবর্তদের রাজনৈতিক প্রাধান্য সূচিত হয়েছিল।এরই পরিণতিতে বিদ্রোহের মাধ্যমে কৈবর্তরা রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছিল।
দ্বিতীয়তঃ পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় কৈবর্তদের বিদ্রোহ করার পেছনে অন্য কারণ উল্লেখ করেছেন। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, কৈবর্তরা রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছিল। কৈবর্তরা ছিল বরেন্দ্রের শক্তিশালী জাতি। কিন্তু তাদের ওপর পাল বংশের রাজা দ্বিতীয় মহিপাল যে ধরনের অত্যাচার করেছিল, সেই অত্যাচারে ক্ষুব্ধ হয়েউ তারা দিব্যর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেছিল।
তৃতীয়তঃ ড. বি. সেন এই বিদ্রোহের সামাজিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। বাংলার পাল রাজার বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পাল রাজাদের এই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রভাব কৈবর্তদের ওপর পড়েছিল। বৌদ্ধধর্মে যেহেতু মৎস্যহত্যা মহাপাপ। তাই মৎস্যহত্যাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই মৎস্য হত্যা না করার ঘোষণাও কৈবর্তদের ওপর খুব বাজে প্রভাব ফেলে। কারণ পেশায় জেলে হয়ে মৎস্যশিকার না করলে তাদের চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হতো।
চতুর্থতঃ অনেক ঐতিহাসিক কৈবর্ত বিদ্রোহের পেছনে অন্য কারণ ব্যাখ্যা করেন। কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা দিব্যেএ নেতৃত্বে বিদ্রোহ হলেও, অনেকে মনে করেন সেই সময়ে বাংলার কেন্দ্রীয় শাসন অত্যন্ত দুর্বল থাকায় অনেকে কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে দখল করার চেষ্টা করেছিলেন। কৈবর্ত বিদ্রোহ শুধুমাত্র কৈবর্তদের বিদ্রোহ ছিল না। এক্ষেত্রে অনেক সামন্ত রাজারাও কৈবর্তদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বলে মনে করা হয়।।কারণ সামন্ত রাজা কৈবর্ত বিদ্রোহের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় শক্তিকে দখল করার চেষ্টা করেছিল।।
কৈবর্ত বিদ্রোহের ফলাফলঃ
উপরোক্ত কিছু কারণ ছাড়াও আরো নানা কারণেই মূলত কৈবর্তদের বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল । কৈবর্তরা দিব্যক, রুদোল এবং ভীম নামক তিনজন কৈবর্তের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহিপাল শাসনকালে তাদের বিদ্রোহ শুরু করেছিল। এই সময়ে পালদের শাসন অত্যন্ত দুর্বল থাকায় তারা এর সদ্ব্যবহার করে।
মহিপাল বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে তিনি কৈবর্তদের হাতে নিহত হন এবং দিব্য সেখানে জয়লাভ করে বরেন্দ্র দখল করে এবং তিনি সেখানকার রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মহীপালের ছোটভাই রামপাল বরেন্দ্র উদ্ধার করা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি সফল হননি। কিন্তু রামপাল বাংলা এবং বিহারের বিভিন্ন সামন্ত নায়কদের সাহায্যে কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা ভীমকে পরাজিত করেন এবং হত্যা করেন। তারপর তিনি বরেন্দ্র,,বাংলার কামরূপ সহ উড়িষ্যার একাংশে পাল বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।। কিন্তু দিব্যেকের পরিণতি কী হয়েছিল তা জানা যায়নি।
Tags :