প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দেখাও। || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
![]() |
একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর |
কিছুদিন আগেই আমরা একটি পোস্টের মাধ্যমে একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন 2022 ( wb class 11 political science suggestion 2022 ) এ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন শেয়ার করেছিলাম। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা সেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ( wb class 11 political science suggest 2022) & রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর class 11 পঞ্চম অধ্যায় ( wb class 11 political science chapter 5 question answer in Bengali ) এর অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নের উওর শেয়ার করবো। আজকে একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঞ্চম অধ্যায় " গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র " থেকে 'প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দেখাও' প্রশ্নটি তোমাদের সামনের পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আজকে এই প্রশ্নটির খুব সুন্দর একটি নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
Table Of Contents | আজকের বিষয়
• গনতন্ত্র কাকে বল?
• প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?
• পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?
• গণতন্ত্রের স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেখাও।
• গণতন্ত্রের বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেখাও।
• প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?
• পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?
• গণতন্ত্রের স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেখাও।
• গণতন্ত্রের বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেখাও।
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে? গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উওরঃ সংকীর্ণ অর্থে আব্রাহাম লিংকনের মতে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হলো সেই প্রকার শাসন ব্যবস্থা, যা জনগণের জন্য,জনগণ কর্তৃক পরিচালিত হয়। অর্থাৎ যেই প্রকার শাসনব্যবস্থা জনগণের জন্য জনগণের দ্বারা বা জনগণের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়, তাই হলো গণতন্ত্র।
• গণতন্ত্র দুই প্রকার। যথা -প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরোক্ষ গণতন্ত্র।
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রঃ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে সেই প্রকার গণতন্ত্রকে বোঝায়,যে প্রকার গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের নাগরিকরা সরাসরিভাবে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সক্রিয়ভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে। সেই প্রকার শাসন ব্যবস্থায় বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে রাষ্ট্রের নাগরিকরা কোনো একটি স্থানে সমবেত হয়ে দেশের আইন প্রণয়ন, শাসন নীতি নির্ধারণ, সরকারি আয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ,পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ, যুদ্ধ ও শান্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করেন সুইজারল্যান্ডে বর্তমানে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র রয়েছে।
পরোক্ষ গণতন্ত্রঃ পরোক্ষ গণতন্ত্র হলো সেই প্রকার গণতন্ত্র, যেই প্রকার গণতন্ত্রের রাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকারের ভিত্তিতে নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদে মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেন। অর্থাৎ জনগণ যখন নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে সেই প্রতিনিধিকে ভোটে জয়ী করে, শাসনকার্য পরিচালনা করে তখন তা হল প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বা পরোক্ষ গণতন্ত্র।।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তিঃ বিভিন্ন প্রকার শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার যুক্ত থাকে প্রত্যেক প্রকারের ব্যবস্থার স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি থাকে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও এর কিছু স্বপক্ষে যুক্তি রয়েছে এবং এর কিছু বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। যেমন -
জনগণের চূড়ান্ত ক্ষমতাঃ গণতন্ত্রে জনগণ ই হল শেষ কথা বলার অধিকারী। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুই প্রকার গণতন্ত্রে জনগণের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে। পরোক্ষে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে কোন দল সরকার গঠন করবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সরকারের নীতি কি হবে, দুর্নীতি পরায়ন কিংবা অপদার্থ জনস্বার্থ বিরোধী দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকার বা সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা জনসাধারণের রয়েছে. সুতরাং একমাত্র গণতন্ত্রেই গন-সার্বভৌমিকতা বাস্তব রুপ গ্রহন করে।।
মানুষের মর্যাদাঃ রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রকার কিছু শাসনব্যবস্থা যেমন রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রের ব্যক্তিগত মর্যাদাকে কখনো সম্মান দেওয়া হয় না। এক কথায় সেই সমস্ত শাসন ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা ব্যক্তিগত মর্যাদার কোনো অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু গণতন্ত্রের মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদাকে সম্মান করা হয়। রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত, শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রদান করার মাধ্যমে গণতন্ত্র মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদাকে সম্মান জানায়।।
রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধিঃ
গণতন্ত্র হলো এমন এক প্রকার শাসন ব্যবস্থার যেই প্রকার শাসন ব্যবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক চেতনা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুই প্রকার গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে এবং সেই রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তি নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
স্বৈরাচারীতা রোধঃ গণতন্ত্রে জনগণের হাতে সেই ক্ষমতা থাকে যেই ক্ষমতার মাধ্যমে জনগণ কোনো দুর্নীতিগ্রস্থ অথবা অপদার্থ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। এছাড়াও ক্ষমতায় থাকা সরকার কখনোই কোনো জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করে স্বৈরাচারী হতে পারে না। কারণ তাদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয় সবসময়ই বতর্মান থাকে।।
বিপ্লবের সম্ভাবনা কমঃ
গণতন্ত্রে জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তন অথবা সরকার গঠনের ক্ষমতা থাকে বলে, কখনো ক্ষমতায় থাকা কোনো সরকার যদি বার বার জনস্বার্থবিরোধী কাজ করতে থাকে, তাহলে জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে অতি সহজেই সেই জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করা হয় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে এবং নিজেদের পছন্দমতো নতুন সরকার গঠন করে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পারে। জনগণের হাতে এরকম অধিকার থাকায় তা গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা কমায়।।
স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের অস্তিত্বঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকায় বিচার বিভাগ সঠিকভাবে তার কার্য সম্পাদন করতে পারে. যার ফলে সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করা হয়। এবং নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার গুলি সঠিকভাবে রক্ষিত হয়। এছাড়াও কোনো নাগরিক যদি কোনো বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা করে, তাহলে আদালত সংবিধান অনুসারে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে সেই ব্যক্তির বিচারকার্য করে তাকে সঠিক বিচার প্রদান করে।।
গণতন্ত্রের গণতন্ত্রের বিপক্ষে নানা যুক্তিঃ গণতন্ত্র স্বপক্ষে যেমন নানা যুক্তি প্রদর্শন করা হয়, ঠিকই তেমনি গণতন্ত্রের বিপক্ষেও রয়েছে নানা যুক্তি। যেমন-
অক্ষম ও অশিক্ষিতের শাসনঃ গণতন্ত্রে প্রত্যেকের হাতেই রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলেও প্রত্যেকের মধ্যেই সঠিক রাজনৈতিক চেতনা থাকে না। যার ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণ ভুল নেতাকে বা ভুল প্রতিনিধিকে ক্ষমতা প্রদান করে ফেলেন। যার ফলে সেই অপদার্থ ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা চলে আসায় সে ক্ষমতাকে ভুল ভাবে ব্যবহার করে। যার ফলে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়।।
সৎ ও যোগ্য লোকের স্থান নেইঃ গণতন্ত্রে বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতারা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে নিজেদের প্রচার করে এবং এই প্রচার তাদের বিপুল ভোটে জয়ী হতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক সময় অনেক যোগ্য এবং সৎ ব্যক্তিদের বিপুল পরিমাণ অর্থ না থাকায় তারা নিজেদের হয়ে সঠিক ভাবে প্রচার করতে পারে না। যার ফলে জনগণ তাদের ভোট প্রদান করে না এবং তারা কখনোই জনগনের স্বার্থে কোনো কাজ করার সুযোগ পায় না। এজন্যই বলা হয় যে গণতন্ত্রে যোগ্য এবং সৎ ব্যক্তিদের কোনো স্থান নেই।
নৈতিক অবনতীঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বেশিরভাগ জনগণের মধ্যে সঠিক রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাব থাকায় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বার্থপর এবং ভূল রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার অধীন করে ফেলেন। ফলে সেই রাজনৈতিক নেতা হাতে ক্ষমতা পাওয়ার পরেই জনগণের স্বার্থের কথা দিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
জরুরী কালীন অবস্থায় পক্ষে অনুপোযোগীঃ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হল জরুরিকালীন ব্যবস্থার পক্ষে একদমই অনুপোযোগী। বিভিন্ন বহিরাক্রমণ, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, যুদ্ধ এবং নানা সমস্যার ক্ষেত্রে যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়,;তাহলে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং নানা ধরনের নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে। এবং সেই সরকারি প্রক্রিয়া খুবই ধীর গতিসম্পন্ন হয় বলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কখনোই কোনো জরুরি অবস্থার পক্ষে উপযোগী নয়।।
সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সবসময়ই সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয় কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতিনিধি ক্ষমতা লাভ করে। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের নির্বাচিত প্রতিনিধি কখনোই রাজনৈতিক ক্ষমতাধীন হতে পারেন না বলে কখনোই সংখ্যালঘুদের হয়ে কোনো জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম করতে পারেনা।।
ব্যয়বহুল শাসন ব্যবস্থাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলি কখনোই নিজের ক্ষমতা হারাতে চায় না। এজন্য তারা সবসময়ই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জনমত গঠন সম্পর্কিত সভা,প্রচারকার্য প্রভৃতি করে থাকে। অন্যদিকে অন্যান্য দলগুলোও নতুনভাবে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ঠিক একইভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে। যার ফলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা একটি ব্যয়বহুল শাসন ব্যবস্থায় পরিণত হয়।।
Tags :