মনসবদার প্রথা কি? মনসবদারী প্রথা প্রর্বতন, স্তরবিন্যাস ও মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা করো || ক্লাস XI ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

0

একাদশ শ্রেণীর চতুর্থ অধ্যায় ( রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনতন্ত্র ) বড় প্রশ্ন উওর || WB Class 11 history  Questions Answers & Notes Chapter 4


wb class 11 history question answer | class 11 history suggestion 2022 | Class 11 history chapter 4 questions answers in bengali
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর চতুর্থ অধ্যায় ( Class 11 history chapter 4 questions and answers in bengali ) " রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনতন্ত্র " ( Class 11 history chapter 4 questions and answers ) " থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন " মনসবদার প্রথা কি? মনসবদারী প্রথা প্রর্বতন, স্তরবিন্যাস ও মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা করো।- এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। ক্লাস 11 ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং তার শাসনতন্ত্র থেকে " মনসবদার প্রথা কি? মনসবদারী প্রথা প্রর্বতন, স্তরবিন্যাস ও মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা" প্রশ্নটি তোমাদের সামনের পরিক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের এই ক্লাস 11 এর ইতিহাস প্রশ্ন উওর গুলো একটু ভালো করে নোট করে নাও।।

মনসবদার প্রথা কি? মনসবদারী প্রথা প্রর্বতন, স্তরবিন্যাস ও মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উওরঃ মনসব কথাটির অর্থ হল পদমর্যাদা অথবা ব্যাংক। এবং সেই সমস্ত পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিদের বলা হতো মনসবদার। মনসবদারি প্রথা পারস্যের প্রচলিত ছিল। ভারতে মোগল সম্রাট আকবর মনসবদারি প্রথাকে সঠিক ভাবে শুরু করেছিলেন ১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে। 

মুঘল সম্রাট আকবরের মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল।

প্রথমতঃ আকবরের মনসবদারি প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি সামরিক এবং বেসামরিক রাজকর্মচারীদের সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন। 

দ্বিতীয়তঃ জায়গিরদারী প্রথার মাধ্যমে প্রশাসনে প্রবেশ করা নানা দুর্নীতিকে তিনি দূর করতে চেয়ে ছিলেন।

তৃতীয়তঃ সুলতানি আমলের শেষ দিকে জায়গিরদারি প্রথা বংশানুক্রমিক হয়ে গেলে নিজ নিজ এলাকায় তাদের ক্ষমতা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জায়গীরদাএদের ক্ষমতা এতোটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, তারা কখনও কখনও সম্রাটের বিরোধীতা করতেও পিছপা হতো না। সেকারণেই মোগল সম্রাট আকবর জায়গিরদারদের ক্ষমতা কমানোর জন্য জায়গিরদারী প্রথার অবসান ঘটিয়ে মনসবদারি প্রধার প্রবর্তন করেন।।

মনসবদারদেশ স্তর বিন্যাসঃ 

মনসবদারি প্রথায় মনসবদারদের স্তরবিন্যাসের বিষয়টি ছিল এটি সম্পূর্ণভাবে আকবরের হাতে। কোন মনসবদার কত সংখ্যক সৈন্য এবং কত সংখ্যক অশ্ব রাখতে পারবে সেটা আকবর নিজেই নির্ধারণ করে দিতেন। এবং সৈন্য ও অশ্ব রাখার উপর ভিত্তি করেই মনসবদারি ব্যবস্থাকে 33 টি ভাগে করা হয়েছিল। মনসবদারদের  নিজ নিজ পদমর্যাদা অনুসারে সর্বনিম্ন 10 জন থেকে সর্বোচ্চ 12 হাজার সৈন্য ও অশ্ব রাখার অধিকার করে দেওয়া হয়েছিল। 


মনসবদারদের নিয়োগ,অপসারণ এবং বেতনঃ মনসবদারি প্রথা যেহুতু সম্পূর্ণভাবেই আকবরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো,তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় যে মনসবদারের নিয়োগ, অপসারণ এবং বেতনের বিষয়টিও আকবর নিজেই দেখতেন।

নিয়োগঃ মনসবদার প্রথা বংশানুক্রমিক ছিল না। অর্থাৎ একজন মনসবদারের উত্তরাধিকারী মনসবদার হতে পারতেন না। তার জন্য প্রয়োজন ছিল কর্মদক্ষতার। 

বেতনঃ মনসবদারের বেতন দেওয়া হতো কোনো কোনো ক্ষেত্রে নগদ অর্থের আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে জায়গীর প্রদানের মাধ্যমে। যেহেতু অনেক সময় মনসবদারের নগদ অর্থের বিনিময় জায়গীর প্রদানের মাধ্যমে তাদের বেতন দেওয়া হতো,সেকারণে মনসবদারী প্রথার মাধ্যমে পুনরায় আবার জায়গিরদারী প্রথার সূচনা হয়েছিল। তবে এই সকল জায়গিরদাররা তাদের বেতনের সমপরিমাণ অর্থের বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারতেন না। জমির উপর তাদের কোনো স্থায়ী অধিকার ছিলনা। 

অপসারণঃ কোন মনসবদার যদি সম্রাট এর বিরোধিতা করে অথবা সম্রাটকে ফাঁকি দিয়ে কোনো কাজকর্ম করতো এবং তার যদি সম্রাটের নজরে আসতো, তাহলে সম্রাট ইচ্ছা করলেই সে মনসবদার কে তার পদ থেকে পদচ্যুত করতে পারতেন।।


মনসবদারদের দায়িত্ব বা কাজঃ 

আকবর যেই সমস্ত মনসবদারদের নিয়োগ করতেন তাদের,নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব বা কাজ দেওয়া হতো। 

জাট ও সাওয়ারঃ প্রত্যেক মনসবদারকে জাট ও সাওয়ার বাহিনী রাখতে হতো। এখন জাট বলতে বোঝায় পদাতিক সেনাবাহিনী এবং সাওয়ার বলতে বোঝায় অশ্বারোহী সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মনসবদার নিজেদের পদমর্যাদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক জাট এবং অশ্বারোহী সৈন্য রাখতে পারতেন। এক্ষেত্রে তাদের কাজ ছিল সম্রাটের সামরিক  প্রয়োজনে সেই সমস্ত জাট এবং সাওয়ার বাহিনী দিয়ে সম্রাটকে সাময়িক ভাবে সাহায্য করা। 

দাগ ও হুলিয়াঃ সম্রাট আকবর মনসবদারি প্রথায় দাগ এবং হুলিয়া প্রথা প্রবর্তন করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে দক্ষ সেনা এবং ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।

বেসামরিক কাজকর্মঃ সামরিক কাজ ছাড়াও মনসবদারদের নানা ধরনের বেসামরিক কাজকর্মও করতে হতো।।

মনসবদারী প্রথার গুরুত্বঃ আকবরের প্রবর্তিত মনসবদারি প্রথার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল। 

যেমন - 

প্রথমতঃ মনসবদারী প্রথার মাধ্যমে সম্রাটের সামরিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।

দ্বিতীয়তঃ মনসবদারি প্রথা বংশানুক্রমিক না হওয়ায় ফলে সাম্রাজ্য সামন্ত প্রথার আত্মপ্রকাশের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। 

তৃতীয়তঃ জাতিভিত্তিক মনসবদারি প্রথা চালু হওয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন জাতি কর্তৃক সম্রাটের বিরোধিতার পথ বন্ধ হয়। এই প্রথার দ্বারা বিদেশি অভিজাতদের আধিপত্যও নষ্ট হয়।।


মনসবদারি প্রথার মূল্যায়ন :

দুর্নীতিঃ আকবরের রাজত্বের শেষদিকে এই প্রথা জটিলতর ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অধিকাংশ মনসবদার ছিলেন অসৎ ও সুযোগসন্ধানী। সম্রাটের প্রতি মনসবদারদের আনুগত্যও ছিল নকল। 

সৈন্যসংখ্যার হিসেবে ফাঁকিঃ পদমর্যাদা অনুযায়ী যে সংখ্যক সৈন্য ও অশ্ব রাখার কথা, অধিকাংশ মনসবদারই তা রাখতেন না। তাঁরা অনেক সময়ই তাদের সামরিক দায়িত্ব পালন না করে আমোদ-প্রমোদে মত্ত থাকতেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিখিরি বা ভবঘুরে ব্যক্তিদের দেখিয়ে তাঁরা সম্রাটের কাছে সৈন্যসংখ্যার হিসাব দিতেন। ফলে এই প্রথা সাম্রাজ্যের সামরিক প্রয়োজন সম্পূর্ণ মেটাতে পারেনি।

সেনাদের আনুগত্যঃ সেনাদের আনুগত্য ছিল তাদের স্থানীয় মনসবদারের প্রতি সম্রাটের প্রতি নয়।

আকবরের পরবর্তীকালে ভাঙনঃ  সম্রাটের ব্যক্তিত্বের উপর এই প্রথার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করত। তাই আকবরের পরবর্তী অযোগ্য শাসকদের আমলে এই প্রথায় ভাঙন ধরে। তাই অধ্যাপক কুরেশি, আরভিন প্রমুখ মোগল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য এই মনসবদারি প্রথাকে অনেকাংশে দায়ী করে থাকেন।


Tags : একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর | রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনতন্ত্র বড় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস xi ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর  | wb class 11 history question answer | class 11 history suggestion 2022 | Class 11 history chapter 4 questions answers in bengali | WB Class 11 history notes 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top