নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর

0

নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর


আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় " রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও তার শাসনযন্ত্র " ( WB Class 11 history chapter 4 question answers in bengali ) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা বিষয় " নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো " অথবা, আধুনিক রাষ্ট্র সম্পর্কিত নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে' বিস্তারে আলোচনা করবো। এবং এই বিষয়ে একটি সুন্দর নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। 

নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ আলোচনা করো

ভূমিকাঃ পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থানের বৌদ্ধিক বা দার্শনিক ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তাঁরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাসকের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার সপক্ষে মতবাদ প্রচার করেন।(যে সকল রাষ্ট্রচিন্তাবিদ প্রথম পর্বের আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশের রাষ্ট্রনীতি বিষয়ে চর্চা করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি, জাঁ বোঁদা, টমাস হস, জন লক প্রমুখ। এঁদের মধ্যে হস এবং লক চুক্তি মতবাদী রাষ্ট্রচিন্তাবিদ নামে পরিচিত।


নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাঃ ইতালির বিখ্যাত রাষ্ট্রচিন্তাবিদ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এজন্য নিকোলো ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়।। নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি তার রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ গুলি বিভিন্ন গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে।  দা প্রিন্স হল সেরকম ই একটি গ্রন্থ যেখানে ম্যাকিয়াভেলি তার রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত মতবাদ তুলে ধরেছেন।। 

মানব প্রকৃতিঃ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির মতে মানুষ হল সহজাতভাবে স্বার্থপর, লোভী এবং আত্মকেন্দ্রিক এবং ন্যায় নীতিবোধহীন চরিত্র-বৈশিষ্ট্য। মানুষ সব সময় নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় এবং মানুষের বর্তমানে যা রয়েছে এবং তার চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করার জন্য মানুষের নীতি বিসর্জন দিতে কখনো কোনো আপত্তি থাকে না। এবং মানুষের এই ন্যায়নীতিবোধ হীনতার জন্যই মানুষ মানুষে বিরোধ এবং সংঘর্ষ দেখা যায়। যার ফলে রাষ্ট্রের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।।

ধর্ম এবং নীতিবোধঃ  ম্যাকিয়াভেলির মতে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের ভূমিকা থাকলেও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের কোনো ভূমিকা থাকতে পারেনা। ম্যাকিয়াভেলি বলেন যে,রাষ্ট্রশক্তি কখনোই যাজক বা চার্চের শক্তির অধীনস্থ থাকতে পারেনা। রাষ্ট্রী হবে সবসময়ই ধর্ম এবং নীতিবোধ থেকে স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন। শাসককে তার ব্যক্তিগত ধর্মনীতি বোধের উর্ধে উঠে কঠোরভাবে রাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র কখনো ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে নাও।।


রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতাঃ আধুনিক চিন্তাবিদদের মধ্যে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবং তিনি আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের তত্ত্ব পেশ করেন। নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্র দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো রাষ্ট্রক্ষমতা। দ্য প্রিন্স গ্রন্থের তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, সংরক্ষণ এবং প্রয়োগের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংরক্ষণ ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের হাতে অসীম ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। এবং সেই অসীম ক্ষমতাই হলো রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা।।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যঃ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি রাষ্ট্রতত্ত্ব থাকে আমরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাই। যেমন - 

• রাষ্ট্র হবে সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ এবং চার্জ এবং যাজকের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন। 

• রাষ্ট্র যেহেতু মানুষের স্বার্থ সিদ্ধি এবং মানুষের নিরাপত্তার জন্যই সৃষ্টি হয়, সেজন্য রাষ্ট্রে সবসময়ই মানুষের গুরত্ব থাকবে। 

• ম্যাকিয়াভেলির মতে প্রতিটি রাষ্ট্র ই সর্বদা নিজের নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

• নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি মধ্যে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। এবং যেই রাষ্ট্রের শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে, সেই রাষ্ট্র ই হবে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র।

রাষ্ট্র ও সরকারের স্বরূপঃ দার্শনিক অ্যারিস্টোটলকে অনুসরণ করে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলিও রাষ্ট্র এবং সরকারের মূলত তিনটি স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যথা রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র। তিনি এই তিন প্রকার শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর The Prince গ্রন্থে রাজতন্ত্র এবং The Discourse On The First Ten Books Of Titus Livius  গ্রন্থে প্রজাতন্ত্রের সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। ম্যাকিয়াভেলি পরিস্থিতি অনুসারে রাজতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন।।


রাজতন্ত্রের স্বরূপঃ ম্যাকিয়াভেলি রাজতন্ত্রকে এক সাহসী, দৃঢ় ও শৌর্যবীর্যসম্পন্ন বীরত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি রাজতন্ত্রের স্বরূপ সম্পর্কে বলেছেন যে, রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখাই হল রাজার প্রধান দায়িত্ব। এ ছাড়া রাজাকে রাষ্ট্রের জনগণের কাছে নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে রাজা অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করবেন, নিজে সুদক্ষ যোদ্ধা হবেন, সকল বিরোধী শক্তিকে কঠোর হাতে দমন করবেন এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

প্রজাতন্ত্রের স্বরূপঃ ম্যাকিয়াভেলি প্রজাতান্ত্রিক শাসনকে মুক্ত রাষ্ট্র (Free States) বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে, রোমান প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতা বিরাজমান ছিল। কিন্তু জুলিয়াস সিজার ও অন্যান্য সম্রাটগণ প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করে সকল রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজেদের হাতে কেন্দ্রীভূত করলে সেখানে স্বাধীনতা ধ্বংস হয়। তিনি প্রজাতন্ত্রকে অন্য সব ধরনের শাসনের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর বলে স্বীকার করেছেন। ম্যাকিয়াভেলির মতে, “জনগণের কণ্ঠই হল ঈশ্বরের কণ্ঠ।”

Tags : 

একাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11 History Question Answer | wb class xi history Notes | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উএর | WB Class 11 History Question Answer & Notes | Class 11 History 8 Mark Question Answer | wb Class 11 History Notes | WB Class 11 History Suggestion 2022


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top