ক্রীতদাস বলতে কি বোঝো? প্রাচীনকালে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতি গুলি সম্পর্কে আলোচনা || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ( wb class 11 history question answer chapter 6 ) " সমাজের ঘটনা প্রবাহ " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " ক্রীতদাস বলতে কী বোঝো?প্রাচীনকালে কিভাবে ক্রীতদাস সৃষ্টি বা তৈরি হতো? বা প্রাচীনকালে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতি গুলি" সম্পর্কে বিস্তারে আলোচনা করবো। তোমাদের সামনের ইতিহাস পরিক্ষার জন্য " ক্রীতদাস বলতে কী বোঝো?প্রাচীনকালে কিভাবে ক্রীতদাস সৃষ্টি বা তৈরি হতো? বা প্রাচীনকালে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতি গুলি সম্পর্কে আলোচনা" প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের মন দিয়ে পড়া উচিৎ।।
ক্রীতদাস বলতে কি বোঝো? প্রাচীনকালে কিভাবে ক্রীতদাস সৃষ্টি বা তৈরি করা হতো? || একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
ক্রীতদাস বলতে কী বোঝায়?
উওর : যখন কোনো ব্যক্তির মধ্যে সেই সমস্ত লক্ষন আরোপ করা হয়, যার মাধ্যমে তাকে একপ্রকার সম্পত্তি বলে বিবেচনা করা হয়, তখন তাকেই ক্রীতদাস বলা হতো।। সাধারণভাবে সম্পত্তি বলতে যা বোঝায়, তার সকল বা আংশিক বৈশিষ্ট্য যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তবে সেই ব্যক্তিকে ক্রীতদাস বলে গণ্য করা হয়।
অর্থাৎ খুব সাধারণভাবে ক্রীতদাস বলতে যেকোনো ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় অধিকারহীন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়।। ক্রীতদাস একজন বা একাধিক মালিকের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হতো। প্রাচীনকালে মিশরিয়, রোম সাম্রাজ্যে ব্যাপকভাবে ক্রীতদাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল।।
প্রাচীনকালে কিভাবে ক্রীতদাস সৃষ্টি বা তৈরি হতো? বা প্রাচীনকালে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতি গুলির আলোচনাঃ
প্রাচীনকালে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে যে ক্রীতদাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল, সেখানে ক্রীতদাসরা বিভিন্নভাবে তৈরি হতো। একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে একজন ক্রীতদাসে পরিণত হওয়ার নানা উপায় ছিল। একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে ক্রীতদাসে পরিণত হওয়ার নানা পদ্ধতি গুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হলো -
যুদ্ধবন্দিঃ প্রাচীন কালে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে ক্রীতদাস তৈরি করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপায়টি হলো যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাসে পরিণত করা। একটি রাজ্যেকে যদি কোনো রাজা জয় করতো,তাহলে রাজা সেই রাজ্যের সৈনিকদের বন্দি করে নিয়ে যেত। এবং পরবর্তীকালে তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হতো। প্রাচীনকালের ক্রীতদাসদের একটি বড় অংশ মূলত এভাবেই সৃষ্টি হতো।
আরও পড়ে দেখো👇
প্রাচীন গ্রীসের ক্রীতদাস প্রথা বা ব্যবস্থায় ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম সম্পর্কে আলোচনা
ঋণের টাকা শোধ করতে না পারাঃ
ক্রীতদাস তৈরীর আরও একটি উপায় ছিল ঋণের টাকা শোধ করতে না পারা। অনেক সময় দেখা গেছে,একজন ব্যক্তি যদি কোনো উচ্চবিত্ত ব্যক্তির কাছ থেকে বহু টাকা ঋণ নিয়ে তা শোধ না করতে পারতো, তাহলে সেই ব্যক্তিকে সে মালিকের হয়ে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে হতো।
অপহরণঃ প্রাচীনকালে এমন কিছু অসাধু লোকজন ছিল,যারা সাধারণ মানুষদের অপহরণ করে ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতো। এরূপভাবে নানা ব্যক্তি সেই ব্যবসায়এ যোগদান করেছিল। এরকমভাবে শহরের নির্জন পথে যাতায়াতকারী বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময় অপহরণ করে নেওয়া হতো এবং তাদের এরপর ক্রীতদাস সাজিয়ে দাস বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হতো।। মূলত এভাবেও ক্রীতদাস তৈরি হতো।।
জন্মসূত্রে ক্রীতদাসঃ একজন মালিকের অধীনে যে ক্রীতদাসরা কাজ করতো বা সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো, তাদের সন্তানরাও জন্মসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হতল। এর ফলে জন্মসূত্রেও অনেক ক্রীতদাস তৈরি হতো। জন্মসূত্রে যারা ক্রীতদাসে পরিণত হতো,তাদের অবস্থাও সেই মালিকের অধীনে কাজ করা তার পিতা-মাতার মতোই দুর্দশায় ভরা থাকতো।।
অর্থের অভাবঃ প্রাচীনকালে কিছু কিছু সাম্রাজ্যে এক ধরনের প্রথা ছিল যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির যদি বিপুল পরিমাণ অর্থের অভাব দেখা দেয়, তাহলে সেই ব্যক্তি নিজের সন্তানকে বা নিজের পরিবারের কাউকে ক্রীতদাস হিসেবে কারোর কাছে বিক্রি করতে পারবে।প্রাচীনকালে অনেক মানুষের বিপুল পরিমাণ অর্থের অভাব থাকায় তারা অনেক সময়ই নিজের সন্তানদের বা পরিবারের সদস্যদের একজন মালিকের অধীনে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতো।।
দাস বাজারঃ যুদ্ধবন্দীদের বিক্রি করে দেওয়ারর জন্য, বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপহরণ করে চড়া দামে বিক্রি করার জন্য প্রাচীনকালে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে বিভিন্ন দাস বাজার গড়ে উঠেছিল। সেই সমস্ত বাজারে বিভিন্ন মূল্যে দাস কেনাবেচার কাজকর্ম চলতো। প্রাচীনকালে যে সমস্ত দাস বাজার ছিল সেখানে দাসদের উপস্থিত করে তাদের গলায় একটি বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হতো। সেই বোর্ডে সেই ক্রীতদাসের বিভিন্ন বিবরণ সম্পর্কে লিখে রাখা হতো। এরপর সেই বিবরণ দেখে কোনো ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করে ক্রীতদাসদের কিনে নিয়ে যেতো। এবং তাদের নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করতো।।