![]() |
একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় সমাজের ঘটনা প্রবাহ ( Class 11 history chapter 6 questions and answers in bengali ) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "প্রাচীন গ্রীসের ক্রীতদাস প্রথা বা ব্যবস্থা সম্পর্কিত ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করো || প্রাচীন গ্রীসের ক্রীতদাস প্রথা বা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ প্রাচীন গ্রিসের সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সেখানকার ক্রীতদাস ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। গ্রিসের দাস-প্রভুরা তাঁদের অধীনস্থ ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত করত। এবং মূলত ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজ কর্মের জন্যই তাদের প্রভুরা নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারতো। কারণ ক্রীতদাসদের কাজের প্রভুদের এক পয়সা খরচ করতে হত না। অন্যদিকে ক্রীতদাসদের নানা ধরনের কাজ কর্মের জন্য তাদের সম্পত্তির পরিমাণ দিনের পর দিন বেড়েই যেত।। বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য ও উৎপাদনমূলক কাজকর্মে ক্রীতদাসদের নিয়োগ করা হতো। যেমন-
গৃহকাজেঃ গ্রিসের বেশির ভাগ ক্রীতদাসের প্রভুর গৃহকাজে নিযুক্ত করা হতো। হোমার, হেসিয়ড, অ্যারিস্টট্ল প্রমুখের রচনা থেকে গৃহকাজে নিযুক্ত ক্রীতদাসদের উল্লেখ পাওয়া যায়। ধনী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের গৃহকাজের জন্যও ক্রীতদাস থাকত। তবে সাধারন ভাবেই ধনী ব্যক্তির পরিবারের বেশিসংখ্যক এবং তার থেকে কম ধনী ব্যক্তির পরিবারে কম সংখ্যক ক্রীতদাস নিযুক্ত থাকতো। অর্থনৈতিক দিক স্বাচ্ছন্দ কোনো কোনো ধনী পরিবারের গৃহকাজে পঞ্চাশজন পর্যন্ত ক্রীতদাস নিযুক্ত থাকতো। কোনো প্রভুর গৃহের কাজে নিযুক্ত ক্রীতদাসদের মূলত রান্নাবাড়া করা,বাগান পরিষ্কার করা, জল তোলা, কাপড় কাচা,প্রভুর স্নানের জল তুলে দেওয়া,ঘর ছাড়া মোছা, রান্নার কাজে সাহায্য করা, শস্য ঝাড়াই বাছাই করা, প্রভুর মালপত্র বহন করা, বাজার করা, গৃহের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমস্ত রকম কাজকর্ম করা ইত্যাদি কাজগুলোই তাদের করতে হতো।।
খনি ও কারখানায় শ্রমিক হিসেবেঃ অনেক সময় নানা প্রভুরা তার অন্তর্গত ক্রীতদাসদের গৃহকর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন খনি,শিল্প কারখানার বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রমসাধ্য কাজকর্মে তাদের নিয়োগ করতো। প্রভুর পরিচালিত হস্তশিল্পের উৎপাদনে, পাথর সংগ্রহ বা আকরিক খনিজ উৎপাদনের কাজে প্রচুর ক্রীতদাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। কোনো কোনো প্রভুর হস্তশিল্পের কারখানাগুলিতে শতাধিক দাস শ্রমিক কাজ করতো।
ভাড়াটে ও বন্ধকি ক্রীতদাস হিসেবেঃ যখন কোনো অনেক ক্রীতদাসদ সংগ্রহ করতে নিতো, এবং সেই ব্যক্তি নিজের যাবতীয় কাজকর্মে ক্রীতদাসদের নিয়োগ করার পরেও কিছু অতিরক্ত ক্রীতদাস থেকে যেত, তখন সেই ব্যক্তি তার অন্তর্গত ক্রীতদাসদের অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে ভাড়া খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতো। এভাবে একজন ক্রীতদাস একজন মালিকের হয়ে অন্য আরেকজনের কাজকর্ম করে দিত। কিন্তু এর বিনিময়ে ক্রীতদাস কোনো অর্থই লাভ না করতে পারতো না।। আবার বন্ধকি ব্যাবসার ক্ষেত্রেও ক্রীতদাসদের ব্যবহার করা হতো। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি তার থেকেও ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে যদি কখনো ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারতো, তাহল তার ক্রীতদাস বন্ধক রেখে সে তার ঋণ পরিশোধ করতো।।
কৃষিকাজঃ গ্রিসে ক্রীতদাসদের প্রভুর কৃষি কাজেও নিযুক্ত করা হতো বলে। সাধারণ ও ধনী উভয় কৃষকরাই চাষের কাজে ক্রীতদাস নিয়োগ করত। কবি হেসিয়ডের কাব্য থেকে জানা যায় যে, ক্ষুদ্র কৃষকও ক্রীতদাসের সহায়তায় তার জমি চাষ করত। ক্রীতদাসরা জমিতে চাষবাস করত, শস্য মাড়াই করত, আঙুরের রস ও জলপাইয়ের তেল নিষ্কাশনের কাজ করত এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে বহন করে বাজারে নিয়ে যেত। চাষের মরশুমে ভাড়াটে দাস এনেও কৃষিকাজে নিয়োগ করা হত।
কিছু সম্মানজনক পদে কাজ করার সুযোগঃ তবে সবসময় যে গ্রিসের ক্রীতদাসদের পরিশ্রমসাধ্য নানা ধরনের কাজ করতে হতো, তেমন কোনো বিষয় ছিল না। অনেক সময় সুশিক্ষিত, বীর, বুদ্ধিমান ও নানা ধরনের বিশেষ কাজ জানা ক্রীতদাসদের প্রভু নিজের পরিবারের গৃহ শিক্ষক হিসেবে, হিসাবরক্ষক, নিজের ব্যক্তিগত পরামর্শদাতা, নগরলক্ষী এবং রাজমিস্ত্রি হিসেবেও তাদের নিয়োগ করা হতো।।