প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক বিবরণ দাও || একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

0

প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক বিবরণ দাও || একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক বিবরণ দাও || একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

উওরঃ অন্যান্য কিছু প্রাচীন সভ্যতার মতো প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মধ্যেও যেমন ক্রীতদাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল, ঠিক তেমনই প্রাচীন ভারতেও বিভিন্ন যুগে ক্রীতদাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্রাচীন মিশর এবং প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাস প্রথার ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক আলোচনা বা তুলনামূলক বিবরণ দেওয়া হলো। 

 - 

মিশরের ক্রীতদাসের উৎসঃ 

প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাসদের বিভিন্ন উৎস ছিল। অর্থাৎ মিশরের বিভিন্ন ভাবে ক্রীতদাস সংগ্রহ করা হতো। 

যেমন- 

• শত্রুপক্ষের সৈন্যদের পরাজিত ও বন্দি করে তাদের ক্রীতদাসে পরিনত করা

•  দরিদ্র পিতামাতার নিজের সন্তানদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে ক্রীতদাসে পরিনত করা।

•  মহাজন কর্তৃক ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তিকে ক্রীতদাসে পরিনত করা

• জন্মসূত্র ক্রীতদাস সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি ছাড়াও আরও নানা উপায়ে মিশরে ক্রীতদাস তৈরি হতো।

ভারতে ক্রীতদাসদের উৎসঃ 

মিশরের ক্ষেত্রে যেমন ক্রীতদাস সৃষ্টির ক্ষেত্রে একাধিক উৎস বা উপায় ছিল, ভারতের ক্ষেত্রে ক্রীতদাস সৃষ্টির সেরকম কোনো উপায় ব উৎস ছিল না। ঋকবৈদিক যুগে অনার্য শত্রুদের দাস বা দস্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।। দস্যুরা আর্যদের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দাসে পরিণত হতো বলে উল্লেখ্য রয়েছে।।


মিশরে দাসদের বিভিন্ন কাজকর্মঃ 

মিশরে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন রকম কাজকর্ম করতে হতো। মিশরীয় ক্রীতদাসদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার মালিকের কৃষিজমি, শিল্প-কারখানা, খামারবাড়ি, গৃহের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে হতো।

ভারতীয় বিভিন্ন কাজকর্মঃ 

মিশরীয় ক্রীতদাসদের মতো ভারতীয় দাসদের প্রায় একই ধরনের কাজকর্ম করতে হতো। ভারতীয় ক্রীতদাসদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার মালিকের কৃষিজমি, শিল্প-কারখানা, খামারবাড়ি, গৃহের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে হতো।

স্বাভাবিক অধিকারঃ 

মিশরীয় ক্রীতদাসদের কোনরকম সামাজিক,রাজনৈতিক বা যেকোনো ধরনের কোনো অধিকার ছিল না। তারা পুরোপুরি ভাবে একজন মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো। তাই মালিক তাদের যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতো। তবে সব সময়ই যে কিছু তাদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করা হতো, তেমন কিছুই নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে - প্রভু তাদের ক্রীতদাসদের বেশকিছু অধিকার ভোগ করার সুযোগ করে দিত। প্রভু তার প্রিয় কোনো ক্রীতদাসকে অনেক সময় বিশেষ কিছু কাজেও নিয়োগ করতেন।।

প্রাচীন ভারতীয় ক্রীতদাসদের অধিকারঃ প্রাচীন ভারতীয় ক্রীতদাসদের সামাজিক অবস্থা তেমনটাও খারাপ ছিল না।  প্রাচীন ভারতীয় ক্রীতদাসদের, সমাজের সাধারণ মানুষদের সমান ভাবেই দেখা হতো। ভারতীয় সমাজে স্বাধীন নাগরিক ও দাসদের মধ্যে ভেদরেখা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। ভারতীয় দাসরা সেই অর্থে গৃহভৃত্যের সমগােত্রীয় ছিল। প্রাচীন মিশরে যেমন প্রভু অনেক সময় কোনো কোনো দাসকে কিছু ক্ষেত্রে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দিতেন এবং যোগ্য, বিশ্বস্ত ও প্রিয় ক্রীতদাসকে উচ্চপদের কাজ এমনকি নিজের কন্যা বা সন্তানের সঙ্গেও বিবাহ দিতেন,  ভারতীয় ক্রীতদাসদের ক্ষেত্রে সেরকম কোনো সুযোগ সুবিধা ছিল না।।


কিন্তু ভারতীয় দাসদের অনেক ধরনের অধিকার ছিল। কৌটিল্য তাঁর 'অর্থশাস্ত্রে' দাসদের কয়েকটি বিশেষ অধিকারের উল্লেখ করেছেন। যথা- প্রথমত প্রভুর কোনাে ক্ষতি না করে অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয়ের অধিকার ভোগ করা এবং দ্বিতীয়ত উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ভােগ-দখলের অধিকার ভোগ করা।

মিশরের দাস বাজারঃ 

প্রাচীন মিশরের কোনো স্থানে বিশেষ কোনো দাস বাজার ছিল কিনা, সে সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু মনে করা হয় যে, প্রাচীন মিশরের যে সমস্ত প্রধান উপায় ক্রীতদাস সৃষ্টি করা হতো,সেই প্রধান উপায়গুলি সাহায্যে যখন যথেষ্ট পরিমাণে ক্রীতদাসের চাহিদা মেটানো যেত না, তখন লিবিয়া, মিরো, কুশ অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাস আমদানি করা হতো। তাই মিশরে যেহেতু আমদানির ব্যাপারটা ছিল,,তাই মনে করা হয় যে মিশরে বিভিন্ন ক্রীতদাস বাজার গড়ে উঠেছিল।।

প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন ক্রীতদাস বাজারঃ মিশরের ক্ষেত্রে ক্রীতদাস বাজারের ব্যাপারটা অস্পষ্ট হলেও, ভারতের ক্ষেত্রে ক্রীতদাস বাজারের ব্যাপারটা ছিল একদম স্পষ্ট। সুলতানি যুগে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে দাস ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ক্রীতদাস বাজার গড়ে উঠেছিল। সমকালীন ইতিহাস জিয়াউদ্দিন বরনি আলাউদ্দিন খিলজির আমলে দিল্লির দাস বাজারের কথা উল্লেখ করেছেন। দিল্লি সেই সমস্ত ক্রীতদাস বাজারে বিভিন্ন ধরনের দাস ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। ক্রীতদাসদের শারীরিক গঠন এবং কাজকরার ক্ষমতা অনুসারে তাদের মূল্য নির্ধারণ করা হতো। বাংলাদেশ এবং অন্যান্য স্থানে " খোজা " নামক নপুংসক দাসদের নিযুক্ত করা হতো, যা সেই সমস্ত ক্রীতদাস বাজাদের মাধ্যমেই কেনাবেচা করা হতো।।


প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাসদের মুক্তির উপায়ঃ প্রাচীন মিশরের দাসত্ব জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ক্রীতদাসদের কাছে বিভিন্ন উপায় ছিল। 

যেমন - 

• যদি কোন ক্রীতদাস কোনো প্রভুর প্রাণ রক্ষা করতো, তাহলে সেই ক্রীতদাসকে প্রভু খুশি হয়ে মুক্তি দিত। 

• দ্বিতীয়তঃ যদি কোনো ক্রীতদাস তার ঋণ পরিশোধ করতে পারত,তাহলে তাকে মুক্তি দেওয়া হতো। 

• এছাড়াও কখনো কখনো প্রভু, কোন ক্রীতদাসকে তার বিয়ে শারীরিক গঠন এবং তার বুদ্ধিমত্তার জন্য, ক্রীতদাস্রর জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে অন্যান্য কাজ কর্মে নিযুক্ত করতো।

প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাসদের মুক্তির উপায়ঃ 

প্রাচীন মিশরের মতো প্রাচীন ভারতেও ক্রীতদাসের দাসত্ব জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় ছিল। 

যেমন - 

• যদি কোন ক্রীতদাস কোনো প্রভুর প্রাণ রক্ষা করতো, তাহলে সেই ক্রীতদাসকে প্রভু খুশি হয়ে মুক্তি দিত। 

• দ্বিতীয়তঃ যদি কোনো ক্রীতদাস তার ঋণ পরিশোধ করতে পারত,তাহলে তাকে মুক্তি দেওয়া হতো। 

• এছাড়াও কখনো কখনো প্রভু, কোন ক্রীতদাসকে তার বিয়ে শারীরিক গঠন এবং তার বুদ্ধিমত্তার জন্য, ক্রীতদাস্রর জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে অন্যান্য কাজ কর্মে নিযুক্ত করতো।


Tags :

একাদশ শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উওর | ক্লাস 11 ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় | ক্লাস xi শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর |অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বড় প্রশ্ন উওর | class 11 history question answer | wb class 11 history suggestion | class 11 history notes | class 11 history suggestion 2022 | Class 11 history chapter 5 questions and answers in bengali | WB Class 11 history chapter 5 questions and answers in bengali

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top