রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংঘের সঙ্গে মধ্যে পার্থক্য লেখ। || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের ( Class 11 Political Science chapter 2 questions and answers in bengali ) রাষ্ট্র : সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধ্যায়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ( Class 11 Political Science chapter 2 questions and answers ) দেবো। এবং সেইসঙ্গে একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্র বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর হিসাবে রাষ্ট্র : সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধ্যায়ের (Class 11 Political Science questions answers chapter 2 ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো অথবা রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংঘের মধ্যে সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য গুলি আলোচনা করো " প্রশ্নটির উওর একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এই প্রশ্নটির উত্তর দেখার পর, তোমরা ক্লাস 11 রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর গুলো পড়ে দেখতে পারো।
রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংঘের সঙ্গে মধ্যে পার্থক্য লেখ। || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দিক থেকে রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠন সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে যেমন বেশকিছু ক্ষেতে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাদৃশ্য -
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যঃ
• রাষ্ট্রের উন্নয়ন উদ্দেশ্য বা প্রধান লক্ষ্য গুলির মধ্যে একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণ করা জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা। মূলত জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই রাষ্ট্রের উৎপত্তি।
• অন্যদিকে ঠিক একইভাবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও বিভিন্নভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ করে থাকে বা জনগণের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে থাকে।
জনসমষ্টিঃ
• আমরা প্রত্যেকেই জানি যে,রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলির মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান হলো জনসমষ্টি। জনসমষ্টি ছাড়া কখনোই একটি রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই অতিবৃহৎ বা নাতিবৃহৎ জনসমষ্টি থাকে।
• ঠিক একইভাবে প্রত্যেকটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানেরই কিছু অনির্দিষ্ট জনসমষ্টি থাকে।
পরিচালনাঃ
• রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একটি সুগঠিত সরকার থাকে। এবং সেই সরকার রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে।
• অন্যদিকে প্রতিটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্ব থাকে সেই সংগঠনের পরিচালনা মন্ডলী বা সমিতির হাতে। সেই পরিচালনা মন্ডলীর বিশিষ্ট সদস্যরা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম-নীতি তৈরি করে থাকেন। মূলত সেসব নিয়ম নীতির মাধ্যমেই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে থাকে।
রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেমন বেশ কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, ঠিক তেমনই রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বলা দরকার যে, রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্যের তুলনায় আমরা বৈসাদৃশ্য ই বেশি দেখতে পাই। যেমন-
সার্বভৌম ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্যঃ
• প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে। সার্বভৌম ক্ষমতা বলতে এমন এক ক্ষমতাকে বোঝায়, যার মাধ্যমে প্রতিটি রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে বা প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে। রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা দুধরণের হয়। যথা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতা। এবং এই দুই ধরনের সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং বাধাহীন ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে।
• কিন্তু অন্য দিকে কোন সংগঠন বা কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কোনো প্রকার সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। এবং সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকার কারণেই, পৃথিবীর কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানই সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়।
আইনগত পার্থক্যঃ
• যেকোনো রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একটি সুগঠিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই সরকার সঠিকভাবে রাষ্ট্রকে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করে থাকে এবং সেই আঙ্গুলেই রাষ্ট্রকর্তৃক সমর্থিত এবং প্রযুক্ত হয়। এবং কেউ যদি সে সমস্ত আইন ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাষ্ট্রের রয়েছে।
• অন্যদিকে কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য যেসব নিয়ম-নীতি বা নিয়ম কানুন তৈরি করা হয়, সেগুলো কখনোই রাষ্ট্রকর্তৃক সমর্থিত এবং প্রযুক্ত হয় না। তাই, কোন প্রতিষ্ঠানের কোনো নিয়মনীতি ভঙ্গ করা হয়, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার সেই প্রতিষ্ঠানের নেই।।
সংবিধানঃ
• কোনো রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য যেসব মৌলিক নিয়ম রয়েছে, তাকে বলা হয় সংবিধান। কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তার সংবিধান লিখিত এবং অলিখিত - যেকোনো প্রকারের হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সংবিধান রয়েছে।
• অপরদিকে কোনো সংগঠন বা কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই কোনো প্রকার সংবিধানের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় না।কারণ সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর।
সদস্যপদ জনিত পার্থক্যঃ
• কোন এক ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রের সদস্য অথবা নাগরিক হতে পারে। একজন ব্যক্তি কখনোই একই সঙ্গে একাধিক রাষ্ট্র থেকে সদস্যপদ লাভ করতে পারে না।
• কিন্তু একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক সংগঠন বা সংঘ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ লাভ করতে পারে।।
কাজের পরিধি গত পার্থক্যঃ
• প্রতিটি রাষ্ট্রের কাজের পরিধি শুধুমাত্র তার নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা থাকে। একটি রাষ্ট্রের সদস্যপদ শুধুমাত্র সেই রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত জনগণই নিতে পারে বলে, রাষ্ট্রের কাজের পরিধি শুধুমাত্র সেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে।
• অন্যদিকে সঙ্গে বা প্রতিষ্ঠানের কার্যের পরিধি সারা একাধিক রাষ্ট্র জুড়ে হতে পারে। যেমন রেডক্রস সোসাইটির মতো সামাজিক সংঘের কার্যাবলী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সম্প্রসারিত। স্বাভাবিকভাবেই এরূপ সামাজিক সংঘের সদস্যপদ বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকতা নিতে পারে বলে তাদের কাজের পরিধিও অনেক বেশি।
অধীনতাঃ
• একটি রাষ্ট্র কখনোই কারোর অধীন নয়। রাষ্ট্র হল স্বাধীন। রাষ্ট্রের বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমে রাষ্ট্র সবসময়ই অপর কোনো রাষ্ট্রের থেকে সম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থাকে।।
• কিন্তু অন্যদিকে কোনো সংঘ বা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রকার সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকার কারণেই তারা কোনোভাবেই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। প্রতিটি সংঘ বা প্রতিষ্ঠানই কোনো না কোনো এক রাষ্ট্রের অধীনে থাকে।
• এছাড়াও রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংঘের মধ্যে আরও নানা ধরনের বৈসাদৃশ্য রয়েছে। যেমন সদস্য পদ ত্যাগ করা গত পার্থক্য, আনুগত্য প্রদর্শন, আকৃতিগত পার্থক্য, উদ্ভবগত পার্থক্য ইত্যাদি।
উপসংহার, সুতরাং উপরিক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি যে, রাষ্ট্র এবং সংঘ বা প্রতিষ্ঠান হলো সম্পূর্ণ আলাদা। তাই রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেমন বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রয়েছে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংঘের মধ্যে বেশকিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে।।
Tags :