কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? | বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা
আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে আমি তোমাদের সঙ্গে দশম শ্রেণির ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় " বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ " এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন,যেটা প্রায়শই মাধ্যমিকে এসে থাকে সেটা নিয়ে একটি নোট তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। " কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? বা বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা " সম্পর্কে প্রশ্নটি তোমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। তাই এই প্রশ্নটি তোমাদের খুব ভালো করে পড়া উচিৎ। ক্লাস টেনের ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় " বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ " এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আমাদের ওয়েবসাইটে আগেও শেয়ার করা হয়েছে। আজকের পোস্টে " কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? বা বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা " এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে।
কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? | বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা
উওর : উনিশ শতকে কোম্পানি কারিগরি শিক্ষা লাভ করা কর্মচারীদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এবং এই প্রয়োজনীতা মেটাতে মূলত তারা কারিগরি শিক্ষার বিকাশে সামান্যতম উদ্যোগ নিয়েছিল। কোম্পানির শাসন কালে এদেশে মাত্র 6 টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তার মধ্যে রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি শিক্ষা লাভ করা শিক্ষার্থীরা মূলত ব্রিটিশ কোম্পানির কেরানি বা গোলাম হিসেবে হিসেবে কাজ করতো। এবং এই ব্যাপারটা সে সময়ের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন। এবং তাঁরা ব্রিটিশদের এই শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে একটি বিকল্প শিক্ষা কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।।স্বদেশী আন্দোলনের যুগে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন,তাদের মধ্যে তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট আইনজীবী তারকনাথ পালিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য। যিনি 1906 খ্রিস্টাব্দে 25 জুলাই " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন "। " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " 1955 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে " যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় " নামে পরিচিত।
◆ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা : তৎকালীন সময় বিশিষ্ট আইনজীবী তারকনাথ পালিত ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগ এবং দেশীয় ধাঁচে তৈরি একটি বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগে নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগের হাত ধরেই 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই কলকাতায় " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " নামক এই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
◆ পাঠ্যক্রম :
• বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে দুই ধরনের পাঠ্যক্রম প্রচলিত ছিল।
•একটি ইন্টারমিডিয়েট কোর্স ছিল তিন বছরের জন্য এবং অন্যটি ছিল চার বছরের জন্য মাধ্যমিক কোর্স।
• প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ইন্টারমিডিয়েট কোর্সে পড়ার সুযোগ দেওয়া হতো । পাঠ্যক্রমের মধ্যে ছিল পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং ইংরেজি শিক্ষা।
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শেখার সুযোগ ছিল- প্রিন্টিং, পেইন্টিং, ছুতার, সাবান তৈরি, খোদাই, চামড়া পাকা ইত্যাদি।
• অন্যদিকে, মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের মূল পাঠ্যক্রমের শিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়া হতো। তাদের জন্য মূলত তিনটি জিনিস ছিল-
• মেকানিক্স এবং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্স,
• ফলিত রসায়ন
• ভূতত্ত্ব
মূলত এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই বিভিন্ন শিক্ষার্থীরার বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কারিগরি শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার লাভের সুযোগ পেত।
◆ কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি : দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো উন্নতি সাধনের জন্য 191প খ্রিস্টাব্দে " বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট " " বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ " এর সঙ্গে মিলে যায়। এবং এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে গিয়ে " বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এন্ড টেকনিক্যাল স্কুল " নাম গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে 1928 খ্রিস্টাব্দের বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এন্ড টেকনিক্যাল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় " কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি "
◆ শিক্ষাদান : বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ,কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি তে মিলে যাওয়ার পর সেখানে পদার্থবিদ্যা,রসায়ন প্রযুক্তি,শিল্প প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন করেছিল। যেখানে বহু ছাত্র-ছাত্রী কারিগরি শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিল।
◆ জার্নাল প্রকাশ : কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্রছাত্রীরা " টেক " নামক একটি জার্নাল প্রকাশ করেছিল। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তারা স্বদেশী আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন, যারা সেই সময় জাতীয় শিক্ষা প্রসারের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
◆ উপসংহার : সুতরাং 1906 খ্রিস্টাব্দে তারকানাথ পালিতের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট মূলত বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সময়ে গ্রহন করা বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। ফলে কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় এই বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। এখান থেকে বিভিন্ন ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা লাভ করে, তারা স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
আশাকরি যে উপরের আলোচনা থেকে তোমরা ক্লাস টেনের ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় " বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ অধ্যায়ের " কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের কী ভুমিকা ছিল? বা বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে তারকনাথ পালিত এর ভূমিকা" সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছো। এই অধ্যায়ের পরবর্তী কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলির উত্তর আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে পরবর্তীকালে শেয়ার করব।
Tags :