তরিকা ই মোহাম্মদিয়া বলতে কী বোঝো? | ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন |প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই আলোচনা করবো। আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দশম ক্লাস টেনের ইতিহাস বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় " প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বিদ্রোহ " তরিকা ই মোহাম্মদিয়া বলতে কী বোঝো?, বা ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন" সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।
তরিকা ই মোহাম্মদিয়া বলতে কী বোঝো? | ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন |প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
তরিকা ই মুহাম্মদিয়া : তরিকা ই মুহাম্মদিয়া বা তারিখ ই মোহাম্মদিয়া কথার অর্থ হল মোহাম্মদ নির্দেশিত পথ। এই তরিকা ই মোহম্মদিয়া ছিল মুসলিম পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। খুব সংক্ষেপে বলা যায় তরিকা ই মুহাম্মদিয়া ছিল মুসলিম ধর্মের বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে, মুসলিম ধর্মের শুদ্ধকিরণ করা এবং মুসলিম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করার আন্দোলন।
আরবে ওয়াহাবি আন্দোলন : ওয়াহাবি আন্দোলন সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন আব্দুল ওয়াহাব নামে একজন জনৈক ব্যক্তি।। তিনি তাঁর আন্দোলন শুরু করেছিলেন মূলত অষ্টাদশ শতকে। এবং তার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত আরবদেশে। আব্দুল ওয়াহাব সর্বপ্রথম তরিকা ই মোহাম্মদিয়া শুরু করার জন্য তার নাম অনুসারেই তরিকা ই মোহাম্মদিয়া " ওয়াহাবি আন্দোলন " নামেই বেশি পরিচিত লাভ করেছে।
ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন : ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মূলত দিল্লির মুসলিম শন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পূত্র আজিজের মাধ্যমে। ওয়ালীউল্লাহ এবং তার পত্র আজিজ যে উদ্দেশ্যে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেছিলেন,তা ছিল মূলত ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ ঘটিয়ে সমাজকে, ইসলামদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র " কোরানের " নির্দেশ অনুসারে অর্থাৎ তরিকা ই মোহাম্মদিয়ার বা মোহাম্মদ নির্দেশিত পথ অনুসারে ধর্ম এবং সমাজকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলা। এই ছিল ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য বা কথা। কিন্তু 18 শতকের দিকে ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পূত্র আজিন ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তাদের ওয়াহাবী আন্দোলনকে সবার মধ্যে সেরকম ভাবেও ছড়িয়ে দিতে পারেননি।। ফলে আঠারো শতকে ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলন সেরকম ভাবেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
সৈয়দ আহমেদের সময় ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন : প্রকৃতভাবে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করেছিল মুসলিম শন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তার পূত্র আজিজ। কিন্তু তারা তাদের সময়এ সেরকমভাবে ওয়াহাবি আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেননি। কিন্তু ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনকে সর্বাধিক জনপ্রিয় করেছিলেন উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলির বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ। সৈয়দ আহমেদ ই ভারতে ওয়াহাবী আন্দোলনকে সর্বাধিক জনপ্রিয় করেছিল। যার ফলে সৈয়দ আহমেদকে ভারতের ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। কিন্তু ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল কথা হলো ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ ঘটিয়ে সমাজকে পবিত্র করা এবং কোরানের নির্দেশ অনুসারে ধর্ম ও সমাজকে গড়ে তোলা। কিন্তু সৈয়দ আহমেদের ওয়াহাবি আন্দোলন এরকম ছিল না। তাঁর আন্দোলন ছিল মূলত পাঞ্জাবের শিখ জাতির বিরুদ্ধে।। যাকে মোটেই আন্দোলন বলা চলে না। শিখ জাতির বিরুদ্ধে সৈয়দ আহমেদের যে বিদ্রোহ ছিল, তার সমাপ্তি ঘটে বালাকোটের যুদ্ধে।। 1831 খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আহমেদের সঙ্গে শিখ জাতির বালাকোটের যুদ্ধে, সৈয়দ আহমেদ খুব বাজেভাবে পরাজিত এবং নিহত হন। এবং সৈয়দ আহমেদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার ওয়াহাবি আন্দোলনেরও সমাপ্তি ঘটে।
তিতুমীরের বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন : ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমেদের সংস্পর্শে এসে,বাংলার তিতুমীর ওয়াহাবী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। মক্কায় হজ করতে গিয়ে তিতুমীর অর্থাৎ মীর নিসার আলী সৈয়দ আহমেদের সংস্পর্শে আসেন এবং তার ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বাংলায় ফিরে এসে ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শ নিয়ে তিনি দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন। তার তিতুমীরের ওয়াহাবি বিদ্রোহ মূলত বারাসাত বিদ্রোহ নামেই অধিক পরিচিত ছিল। কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে যে,তিতুমীর তার বিদ্রোহ ওয়াহাবি আন্দোলনের মোড়কে শুরু করলেও, তার এই বিদ্রোহ ছিল মূলত দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার মমহাজন' এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে। সুতরাং, যদি আমরা সেরকম ভাবে বিচার করতে চাই, তাহলে বলতে পারি যে,তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ মোটেও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল না।
Tags: