রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটি আলোচনা করো। | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উওর |
আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের ( Class 11 Political Science chapter 2 questions and answers in bengali ) রাষ্ট্র : সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধ্যায়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ( Class 11 Political Science chapter 2 questions and answers ) দেবো। এবং সেইসঙ্গে একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্র বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর হিসাবে রাষ্ট্র : সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধ্যায়ের (Class 11 Political Science questions answers chapter 2 )
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটির আলোচনা " প্রশ্নটির উওর,একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো
আজকের বিষয় :
- • একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
- • রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদ
- • রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটির বিষয়বস্তু
- • রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটির সমালোচনা
- • একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
- • রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদ
- • রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটির বিষয়বস্তু
- • রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটির সমালোচনা
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদ
উওর : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে তিনটি প্রধান মতবাদ রয়েছে তার মধ্যে বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটিকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মূলত চারটি মতবাদ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ওর ঐশ্বরিক মতবাদ, বলপ্রয়োগ মতবাদ, সামাজিক চুক্তি মতবাদ এবং বিবর্তনমূলক মতবাদ বা ঐতিহাসিক মতবাদ। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত কোন মতবাদটি সঠিক তা নিয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ এই মতবাদ গুলির মধ্যে কোনো মতবাদ ই পূর্ণাঙ্গ নয়। কারণ কোনো একটি মতবাদকে অবলম্বন করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি বিষয়ক পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব। তাই অধ্যাপক গার্নার বলেছেন, রাষ্ট্র নয় ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়,কোনো পশুশক্তির ফল নয়, প্রস্তাব বা চুক্তি দ্বারাও সৃষ্ট নয় এমনকি রাষ্ট্রকে কেবল পরিবারের সম্প্রসারণ বলেও গ্রহণ করা যায় না। সুতরাং এখন প্রশ্ন আসে তাহলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল? রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত গ্রহণযোগ্য মতবাদ কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে বার্জেস বলেছেন, রাষ্ট্র হলো সমাজ জীবনের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব ও ঘাতপ্রতিঘাতের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে রাষ্ট্র তার বর্তমান রুপ পেয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে। কিন্তু সমাজ বিবর্তনে কোনো উপাদানটি রাষ্ট্রগঠনের কিরুও ভূমিকা পালন করেছে তা সঠিকভাবে বলা অসম্ভব। রাষ্ট্রের উৎপত্তির পেছনে একাধিক উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন - রক্তের সম্পর্ক, ধর্ম, যুদ্ধ বা সংঘর্ষ, অর্থনৈতিক চেতনা এবং রাজনৈতিক চেতনা।
◆ রক্তের সম্পর্ক বা আত্মীয়তা বোধ : রাষ্ট্র গঠনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রক্তের সম্পর্ক বা আত্মীয়তাবোধ। প্রাচীনকালের রাস্ট্র এবং সমাজ গড়ে ওঠার পুর্বে গড়ে উঠেছিল পরিবার। এই পরিবারগুলো ছিল একই রক্তের বা একই বংশের লোকদের মধ্যে। একই রক্তের অথবা একই বংশের মানুষ হওয়ায় তাদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন ছিল খুবই মজবুত । এভাবে যখন আস্তে আস্তে পরিবারের সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন পরিবার বড় হয়ে গেলে একটি পরিবার থেকে অপর একটি পরিবারের সৃষ্টি হয়। এবং এভাবে পরিবারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সৃষ্টি হয় সমাজের। কিন্তু একই বংশের রক্ত এক হওয়ায় তাদের মধ্যে আত্মীয়তাবোধ গড়ে উঠেছিল। এবং তারা একটি পরিবার থেকে অপর একটি পরিবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সামাজিক আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি হয়। এভাবে পরিবার থেকে থেকে সৃষ্টি হয় সমাজের এবং পরবর্তীতে সমাজ থেকে সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের। প্রসঙ্গে অধ্যাপক ম্যাকাইভারের বলেছেন - "আত্মীয়তার বন্ধনের ফলে সৃষ্টি হয় সমাজের এবং পরবর্তীকালে সমাজ থেকে সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের। "
◆ ধর্ম : রাষ্ট্র সৃষ্টির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ধর্ম। ধর্ম হলো রাষ্ট্র সৃষ্টির এমন একটি উপাদান যা পূর্বে সমাজের মানুষকে একই বন্ধনে বেধেঁ রেখেছিল। যে কোনো রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য চাই সংঘবদ্ধতা বা ঐক্যবদ্ধতা এবং সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা। এবং পারিবারিক সম্পর্কের পর,সমাজে ঐক্যবদ্ধতা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজটি করেছিল ধর্ম। অনেক সময় দেখা গেছে আত্মীয়তা বোধও খুব বেশিদিন মানুষের পারিবারিক বন্ধনকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। এবং সে সময়ে বিভিন্ন সামাজিক ভাঙ্গনের শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই সামাজিক ভাঙ্গন আটকানোর ক্ষেত্রে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় শাসন মানুষকে সমাজে সঠিকভাবে পরিচালনা করে। এবং এছাড়াও একই ধর্ম হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত আত্মীয়তা সৃষ্টি হয় যা একটি সুস্থ সমাজ গঠন করে। এবং এরুপ সমাজ থেকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
◆ যুদ্ধ : প্রাচীনকালে মানুষ যখন তাদের যাযাবর জীবন ত্যাগ করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো একজন দলপতি বা নেতার অধীনে বসবাস করতে শুরু করে,তখন তাদের কমবেশি ব্যক্তিগত সম্পত্তি তৈরি হয়। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখন করার জন্য অন্যান্য দলের সঙ্গে তাদের প্রায়শই সংঘর্ষ বাধতো। এরকম সংঘর্ষ থেকে নিজেদের সম্পত্তিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তারা দলপতি নেতৃত্বে অন্যান্য উপজাতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। অথবা সম্পত্তি রক্ষার জন্য তাদের এমন কোনো দম্পতি প্রয়োজন ছিল যে তাদের সম্পত্তি রক্ষা করতে পারবে। এভাবেই ধীরে ধীরে দলপতি হয়ে ওঠে রাজা এবং রাজার অধীনে যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকে,তখন তা থেকে সৃষ্টি হয় রাজ্য বা রাষ্ট্রের।
◆ অর্থনৈতিক চেতনা : আদিম কালে মানুষ বন জঙ্গলে ঘুরে বিভিন্ন ফলমূল সংগ্রহ,পশুপাখি শিকার ইত্যাদি করে বেড়াতো। এবং তারা যা সংগ্রহ করতো, তা তারা সবাই মিলে ভাগ করে নিতো। সুতরাং সেই সময় তাদের কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের যখন ব্যক্তিগত সম্পত্তির সৃষ্টি হয়,তখন কারোর কাছে বেশি এবং কারোর কাছে কম সম্পত্তি ছিল। যার ফলে সমাজে ধনবৈষম্য সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু মানুষের কাছে আর্থিক ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তারা অসামাজিক কাজ কর্মে লিপ্ত হতে পারে, এই ভয়ে তখন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরকম ধনবৈষম্য, সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীকালে উপজাতীয় জীবনে অধিক সচেতন মানুষ ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও প্রাণরক্ষার জন্য নিজের দলপতির প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্য প্রদর্শন করতে শুরু করে। এইভাবে নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবিবর্তনের এক ঐতিহাসিক পর্যায়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম হয়।
◆ রাজনৈতিক চেতনা : মানুষের উপজাতি জীবনে শুরু হওয়ার পূর্ব পযর্ন্ত, তারা পরিবারের প্রধান বা গোষ্ঠীপ্রধান অথবা ধর্মের নাম পুরোহিতদের প্রতি অনুগত থাকতো। তাই ওই যুগকে রাজনৈতিক অবচেতনার যুগ বলে অভিহিত করা হয়।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটির সমালোচনা
◆ সমালোচনা : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত অন্যান্য মতবাদগুলিকে যেরকমভাবে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করা হয়, ঠিক সেরকম ভাবেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তন মূলক মতবাদটিকেও বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করা হয়। যেমন -
◆ মৌলিকত্ব হীন মতবাদ : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদ, বলপ্রয়োগ মতবাদ এবং সামাজিক চুক্তি মতবাদ -এই তিনটি মতবাদকে একত্রিত করার ফলেই বিবর্তনমূলক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এই মতবাদটিকে কোনমতেই একটি মৌলিক মতবাদ বলে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।
◆ অসম্পূর্ণ মতবাদ : মানুষের রাজনৈতিক জীবন ঠিক কখন শুরু হয়েছিল এবং সমাজের সার্বভৌম ক্ষমতা হিসেবে কখন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল, এসব প্রশ্নের উত্তর বিবর্তনমূলক মতবাদে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা নেই।।যার ফলে এই মতবাদটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ মতবাদ বলে অনেকেই মেনে নিতে রাজি নন।
◆ জটিল মতবাদ : বিভিন্ন মতবাদ থেকে বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করে বিবর্তনমূলক মতবাদ রাষ্ট্র সৃষ্টির বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছে।।তা করতে গিয়ে এই মতবাদটিকে একদিকে যেমন জটিল করে তোলা হয়েছে অন্যদিকে তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি করেছে।।
◆ মার্কবাদীদের সমালোচনা : মার্কবাদীদের মতে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সৃষ্টির আগে মানুষ রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রয়োজনীতা অনুভব করেনি। তাই রাষ্ট্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে ধর্ম, রক্তের সম্পর্ক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
উপসংহার : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদটিকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হলেও,এই মতবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। রাষ্ট্র আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি বা কোনো এক অলৌকিক শক্তিও রাষ্ট্র সৃষ্টি করেনি। রাষ্ট্র মানবসমাজের নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবিবর্তনের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। এবং বিবর্তনমূলক মতবাদে রাষ্ট্রের সৃষ্টি সম্পর্কে এ কথাই বলা হয়েছে। তাই রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত অন্যান্য মতবাদের চেয়ে বিবর্তনমূলক মতবাদটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
আশাকরি যে, আজকের এই ব্লগ পোস্ট থেকে তোমরা class 11 রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনমূলক মতবাদ অথবা ঐতিহাসিক মতবাদটি আলোচনা " প্রশ্নটির উওর পেয়ে গেছো। আমরা পরবর্তীতে ক্লাস ইলেভেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বাকি প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করবো। এবং চেষ্টা করবো, ক্লাস 11 রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ( wb class 11 political science ) সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উওর তোমাদের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবো।
Tags :