নারী সমাজের কল্যাণে বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর

0

নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা  | নারী সমাজের কল্যাণের বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল

নারী সমাজের কল্যাণে বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর


আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় " সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা " এর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেটা তোমাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় 4 নম্বর বা 8 নম্বরের জন্য এসে থাকে, সেটা হল " নারী শিক্ষা প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা কি ছিল অথবা উনিশ শতকে নারী সমাজের কল্যাণের বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল " - এর উওর তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।

Tables Of Contents 

• বামাবোধিনী সভা কে গঠন করেন? 
• কত খ্রিস্টাব্দে বামাবোধিনী পত্রিকা প্রকাশিত হয়? 
• বামাবোধিনী পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
• নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা অথবা নারী সমাজের কল্যাণের বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল?

 

নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা  | নারী সমাজের কল্যাণের বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল

ভূমিকা : 1863 খ্রিস্টাব্দে উমেশচন্দ্র দত্ত কয়জন তরুনকে নিয়ে বামাবোধিনী নামক একটি সভা গঠন করে। বামা শব্দের অর্থ হলো নারী বা সমগ্র নারীসমাজ। উমেশচন্দ্র দত্তের বামাবোধীনি সভা প্রতিষ্ঠার আগে বাংলায় নারীদের সামাজিক অবস্থা সেরকম ভাবেও ভালো ছিলনা। কারণ  বাংলায় সমাজে তখন নারীদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের বিষয়টা সেরকম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তার চেয়েও বড় কথা হলো,বাংল্য তখন বিদ্যালয় সংখ্যা ছিল খুবই কম। মনে করা হয়, নারীদের জন্য সেসময় বাংলায় মোট 35 টি  বিদ্যালয় ছিল। আর তাতে ছাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় এক থেকে দেড় হাজার। উমেশচন্দ্র দত্ত নারীদের মধ্যে এই শিক্ষার অভাবটা বুঝতে পেরেছিলেন। এবং সেই কারণেই তিনি বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে,তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।। 1863 খ্রিষ্টাব্দের উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদনায় প্রকাশিত বামাবোধিনী পত্রিকার মূলত বাংলার নারীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য। বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকা সেই সময় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন - 


◆ নারী শিক্ষা সম্পর্কে জনমত গঠন : বামাবোধিনী পত্রিকা নারী শিক্ষার প্রসারে যে কাজটা সবার আগে করেছিল,সেটা হলো নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে জনমত গঠন করা।সেই সময়ে সমাজে এমন কিছু অন্ধ বিশ্বাস প্রচলিত ছিল,যার জন্য অনেকেই নারী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখাননি। সেই সময় এমন কিছু বিশ্বাস প্রচলিত ছিল - নারীরা শিক্ষিত হলে, বিয়ের পর অল্প সময়ের সে বিধবা হবে।। এরকম কিছু অন্ধবিশ্বাসের জন্য তখনকার অনেক পিতা-মাতাই নিজের মেয়েকে শিক্ষা গ্রহণ করতে দিতেন না। বামাবোধিনী পত্রিকা সমাজ থেকে এই সমস্ত ভুলভাল চিন্তাধারা দূর করে। এবং সমাজে নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরে। বামাবোধিনী পত্রিকার সমাজের কাছে এই বার্তা তুলে ধরে -যদি সন্তানকে শিক্ষিত হতে হয়, তাহলে আগে মায়ের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ মায়ের শিক্ষার ছাপ তার সন্তানদের মধ্যে পরে।

নারীদের আগ্রহ বাড়ানো : বামাবোধিনী পত্রিকা নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার কথা নারী সমাজের কাছে তুলে ধরে,নারীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল।। 


◆ গৃহ শিক্ষা : বামাবোধিনী পত্রিকায় নারীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি প্রকাশ করা হতো। যে সমস্ত নারীরা অল্প শিক্ষিত ছিলেন কিন্তু তাদের পারিবারিক চাপে পড়াশোনা করতে পারেননি, তাদের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে বাহুবলী পত্রিকা এগিয়ে এসেছিল। মেয়েরা যাতে বাড়িতে বসেই শিক্ষা লাভ করতে পারে, সেজন্য বামাবোধিনী পত্রিকা 5 বছরের একটি অন্তঃপুর পাঠ্যক্রমের তৈরি করেছিল। এই 5 বছরে নারীরা কি কি বিষয়ে পড়বে,সে সম্পর্কে বামাবোধীনি পত্রিকা একটি সূচি প্রকাশ করতো। এবং সেই পাঁচ বছর পড়ার পর, পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন কারীদের নাম বামাবোধীনি পত্রিকাতেই প্রকাশ করা হতো।

◆ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি : বামাবোধিনী পত্রিকার নারী শিক্ষার প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল - বামাবোধিনী পত্রিকার নারীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি প্রকাশ করা হতো। যেমন -ইতিহাস,ভূগোল,দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ভাষাজ্ঞান ইত্যাদি। 

এছাড়াও বামাবোধিনী পত্রিকায় প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার বিষয়েও লেখালেখি করা হতো যেমন - ঘরোয়া চিকিৎসা,গৃহ পরিচর্যা, শিশু প্রতিপালন, স্বাস্থ্য, ধর্ম ইত্যাদি। 

◆ সামাজিক সচেতনতা : বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের সামাজিক দিক থেকেও সচেতন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তৎকালীন সময়ে সমাজে নানা অন্ধ,ম বিশ্বাস এবং কূপ্রথা প্রচলিত। যেমন বাল্যবিবাহ,অসম বিবাহ,বহুবিবাহ ইত্যাদি।।  বাল্য বিবাহের ফলে কিভাবে একটি মেয়ের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং অসম বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় তা বামাবোধিনী পত্রিকা প্রকাশ করতো। এভাবে বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরে বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সফল হয়েছিল।


◆ সামাজিক অধিকার

বামাবোধিনী পত্রিকা নারীদের বিভিন্ন সামাজিক মর্যাদা এবং অধিকার সম্পর্কেও তাদের সচেতন করে তোলে, বিভিন্ন লেখনি প্রকাশের মাধ্যমে। বিভিন্ন সামাজিক মর্যাদা লাভ ও অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে নারীদের কেন শিক্ষা গ্রহন প্রয়োজন,সেকথাও বামাবোধিনী পত্রিকা সমাজের নারীদের কাছে তুলে ধরেছিল।

উপসংহার : সব শেষে বলা যায় যে, উনিশ শতকে বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারে 1863 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বামাবোধিনী পত্রিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এখানে একটি বিষয় ছিল - বামাবোধিনী পত্রিকা যে 5ছরের অন্তপুর শিক্ষাব্যবস্থার শুরু করেছিল, তা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছিল। কারণ অনেকেই পারিবারিক চাপে সেই সময়টা ধরে তার শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারেনি। আবার অনেকের শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও,উনিশ শতকে নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকা যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল,তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না।।

Tags : নারী সমাজের কল্যাণের বামাবোধিনী পত্রিকার অবদান কি ছিল | নারী শিক্ষার প্রসারে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা | ক্লাস 10 ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | ক্লাস 10 ইতিহাস বড় প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উওর দ্বিতীয় অধ্যায় | দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উওর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বড় প্রশ্ন উত্তর | সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উত্তর | class 10 history 2 nd chapter notes | মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | wb class 10 history question answer | wb class 10 history suggestion | History question answer|  class 10 history 2nd chapter question answer | class 10 history question answer | wb class 10 history notes in Bengali | history notes | class 10 history notes


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top