আজকের এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের ( Class 11 Political Science chapter 2 questions and answers); রাষ্ট্র : সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন মতবাদ অধ্যায়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদের বিষয়বস্তু,ঐশ্বরিক মতবাদের বৈশিষ্ট্য এবং রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদের সমালোচনা " প্রশ্নটির উওর একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান নোট হিসাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদটির বিষয়বস্তু, বৈশিষ্ট্য এবং সমালোচনা করো। | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
ভূমিকা ; রাষ্ট্র ঠিক কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল,তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। কিভাবে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল সেই সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতামত দিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে সমস্ত মতবাদ গুলি রয়েছে তার মধ্যে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত " ঐশ্বরিক মতবাদটি " হলো সবচেয়ে প্রাচীন। সেন্ট পল, সেন্ট আগাস্টাই, রবার্ট ফিলমরী প্রমূখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মনে করেন যে,রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছিল এই মতবাদ অনুসারেই।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐশ্বরিক মতবাদ কি :
ঐশ্বরিক মতবাদ বলতে খুব সাধারণভাবে বোঝায়, রাষ্ট্রের সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ যারা এই ঐশ্বরিক মতবাদের সমর্থনকারী তাদের মতে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল মূলত ঈশ্বরের দ্বারা। ঈশ্বরই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছেন। এবং রাষ্ট্র সৃষ্টি করার পেছনে মানুষ,কোনো সামাজিক উপাদান বা পার্থিব কোনো ঘটনার ভূমিকা নেই। ঈশ্বর যেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছেন সেখানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে শাসন করেন না কিন্তু তিনি পরোক্ষভাবে রাজার মাধ্যমে রাষ্ট্র শাসন করেন। অর্থাৎ রাজা হল ঈশ্বরের প্রতিনিধি যে ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারে রাষ্ট্রশাসন করে। এবং রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হওয়ায় সকল প্রজাকেই রাজার সকল আদেশ মেনে চলতে হবে।
ঐশ্বরিক মতবাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য :
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে ঐশ্বরিক মতবাদ রয়েছে, তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
◆প্রথমতঃ ঐশ্বরিক মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিলেন ঈশ্বর। তাই রাষ্ট্রের সৃষ্টির পেছনে কোনো মানুষের ভূমিকা নেই।
◆দ্বিতীয়তঃ স্বয়ং ঈশ্বর রাষ্ট্রকে প্রত্যক্ষভাবে শাসন না করলেও তিনি তাঁর প্রতিনিধি অর্থাৎ রাজার মাধ্যমে তিনি পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রশাসন করেন।
◆তৃতীয়তঃ রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হওয়ায় তিনি রাজা হলেন সর্বক্ষমতার অধিকারী। রাজা সর্বক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় তিনি তার ইচ্ছামত রাষ্ট্রকে চালাতে পারবেন। রাজা নিজের শাসন ব্যবস্থাকে সঠিক ভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য যা আদেশ দেবেন তাই হবে আইন। এবং সেই সকলকেই মেনে চলতে হবে।
◆চতুর্থতঃ রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হওয়ার কারণে সকল প্রজাকেই রাজার সকল আদেশ মেনে চলতে হবে। এবং কেউই রাজার আদেশ অমান্য করতে পারবেনা। রাজার আদেশ অমান্য করা মানে ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করা হবে।
◆ পঞ্চমতঃ রাজা ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারে কাজ করেন বলে তিনি কখনই কোনো অন্যায় কাজ করতে পারেন না। এবং রাজা কখনোই তার কার্যাবলীর জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। তিনি শুধুমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন।
◆ এছাড়াও এই মতবাদের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন -
• ঈশ্বরের প্রভূত রাজার বিরুদ্ধে কখনোই বিদ্রোহ ঘোষণা হওয়া যাবে না। কারণ এক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অর্থই হলো ঈশ্বরের বিরোধিতা করা।
• এরূপ ক্ষেত্রে রাজপথ উত্তরাধিকার সূত্রে,মৃত্যুর পর রাজার জ্যেষ্ঠপুত্র হবে পরবর্তী রাজা এবং এটি হলো ঈশ্বরের বিধান।
• সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হলো রাজার ধর্ম। তাই তাঁর কর্তব্য হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। এবং নিজের প্রজাসের সন্তানের মত লালন-পালন করাই হলো তার প্রধান কর্তব্য।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদের সমালোচনা
কিন্তু আধুনিককালে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত এই ঐতিহাসিক মতবাদটিকে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করা হয়। যেমন -
• ঐতিহাসিক মতবাদ : ঈশ্বরের মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে এবং রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি। এটি হলো ঐতিহাসিক মতবাদের মূল বক্তব্য। কিন্তু এরুপ বক্তব্যের সমর্থন ইতিহাসে পাওয়া যায় না তাই রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মতবাদটিকে কাল্পনিক মতবাদ বলে সমালোচনা করা হয়।
• স্বৈরাচারী তাকে সমর্থন : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মতবাদে বলা হয়েছে যে, রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং সকলকেই রাজার আদেশ মান্য করতে হবে। এবং কোনভাবেই রাজার বিরোধিতা করা যাবে না। রাজা যা নির্দেশ দেবেন তাই হবে আইন। এরুপ কিছু মতবাদের মাধ্যমে ঐশ্বরিক মতবাদে রাজার স্বৈরাচারীতাকে সমর্থন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান গণতন্ত্রের যুগে কেউই স্বৈরাচারীতাকে কে সমর্থন করে না
• অসম্পূর্ণ মতবাদ : ঐশ্বরিক মতবাদে শুধুমাত্র রাজতন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে কোনো মতবাদ আলোচনা করা হয়নি। তাই রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐশ্বরিক মতবাদটিকে অসম্পূর্ণ মতবাদ বলে অভিহিত করা হয়।
• অযৌক্তিক মতবাদ : ঐশ্বরিক মতবাদের মূল কথা হলো স্বয়ং ঈশ্বর রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ঈশ্বর কখনোই জনগণের অকল্যাণ করতে পারেন না। অন্যদিকে বলা হয়েছে রাজা ঈশ্বর প্রতিনিধি যিনি ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারেই সকল কাজ করে থাকেন। কিন্তু যদি তাই হয় তাহলে রাজা কখনই ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারে প্রজাদের উপর নির্যাতন করতে পারেন না।। তাই ঐশ্বরিক মতবাদটিকে অনেকেই অযৌক্তিক মতবাদ বলে সমালোচনা করেন।
• নাস্তিকদের আনুগত্য হীনতা : যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা হয়তো এই কথা মেনে নেবে যে রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি।তাই রাজার কথা মেনে তারা হয়তো রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে। কিন্তু যারা নাস্তিক,তারা কখনোই এই যুক্তির সমর্থন করে রাষ্ট্র বা রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে না। ফলে রাষ্ট্রের ভীত কখনোই মজবুত হবে না।
উপসংহার ; রাষ্ট্রের উৎপত্তি বিষয়ক ঐশ্বরিক মতবাদটি নানা দিক থেকে সমালোচিত হলেও,এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা রয়েছে। অধ্যাপক গেটেল এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, মানুষ যখন স্বায়ত্তশাসনের অনুপযুক্ত ছিল তখন ঐশ্বরিক মতবাদ এর মাধ্যমেই তাদের আনুগত্যের শিক্ষায় শিক্ষিত করে রাষ্ট্রের বিবর্তনে সাহায্য করেছিল।
আশাকরি যে, আজকের এই ব্লগ পোস্ট থেকে তোমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন " রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদটির বিষয়বস্তু, বৈশিষ্ট্য এবং সমালোচনা প্রশ্নটির উওর পেয়ে গেছো।
Tags :